রোমান কবির :
ঢালিউডের অ্যাকশন হিরো প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্না ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে (২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি) এফডিসিতে বসে কালচারাল ইয়ার্ডের সঙ্গে তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও সিনেমাটোগ্রাফার মোহাম্মদ হোসেন জেমী।
কালচারাল ইয়ার্ডের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মান্না ভাই আমার খুব কাছের মানুষ ছিলেন। তবে তার সঙ্গে আমার কাজের অভিজ্ঞতা ছিলো অম্ল মধুর। তার সঙ্গে প্রথমে সম্পর্ক ছিলো অম্ল, পরে মধুর হয়েছে। প্রথম যখন আমি রাজধানী ছবি শুরু করি, তখন মান্না ভাইকে আমি আমার ছবির জন্য কাস্ট করলাম। তবে এর আগে থেকেই তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তখন আমি টেলিভিশন প্রডাকশন করতাম। তখন থেকেই তিনি আমাকে চিনতেন।
জেমী বলেন, আমার ছবির গল্পটা ছিলো একটু ব্যাতিক্রম ধারার। একে আমি বিকল্পধারার বানিজ্যিক ছবি নাম দিয়েছিলাম। ছবিটা বানিজ্যিক কিন্তু ধারাটা বিকল্প। এটা গতানুগতিক বানিজ্যিক ছবি না। কিন্তু মান্না ভাই গল্পটা পছন্দ করলেন। এরপর তিনি এর মেকিং স্টাইল দেখে খুব ইম্প্রেসড হয়েছেন। প্রথম প্রথম তিনি নিজের মতো করে করা শুরু করলেন। যেমন গতানুগতিক করে সবাই। একসময় তিনি শতভাগ আমাকে সারেন্ডার করে দিলো নিজেকে। আমার কাজে তিনি খুবই মুগ্ধ ছিলো।’
আরও পড়ুন : চিত্রনায়ক মান্না স্বরণে ইমরানের গান
জেমী বলেন, ‘হৃদয় থেকে পাওয়া মান্না ভাইয়ের কমপ্লিট করা শেষ ছবি। ১৭ তারিখ মান্না ভাই মারা গেলেন। তিনি দুইদিন আগে ১৫ তারিখ আমার ছবির ডাবিং কমপ্লিট করে দিলেন। এটাই মান্না ভাইয়ের শতভাগ শুটিং ও ডাবিং করা শেষ ছবি। এটা আমার প্রডাকশন কোম্পানি কীর্তনখোলা প্রোডাকশন ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমা।’
মান্নার শেষ বিদায়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমি লাশের সঙ্গে টাঙ্গাইল গিয়েছিলাম। আমিসহ ৩-৪ জন কেবল তার সঙ্গে গিয়েছিলাম। এই ইন্ড্রাস্ট্রিতে তার এত পরিচিত, এত বন্ধু-বান্ধব, প্রডিউসার, ডিরেক্টর, শিল্পী কেউ যায়নি। চলচ্চিত্র থেকে গিয়েছিলাম আমি, মিউজিক ডিরেক্টর ইমন সাহা, ফাইট ডিরেক্টর মোসলেম ভাই। আর ওখানে গিয়ে মেকাপ আর্টিস্ট একজনকে পেয়েছি। এছাড়া ফিল্মের কোন কলিগ কাউকে আমি পাইনি। যে যত বড় কথা বলুক।’
‘পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো লাশ কবরে শুঁইয়ে দেওয়ার জন্য। এ জন্য নিজেকে আমি ভাগ্যবান মনে করি।’ – তিনি আরও যোগ করেন।
মান্নার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জেমী বলেন, সারা পৃথিবীর সিনেমা নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হতো। তিনি হলিউডের ছবি নিয়ে অনেক কিছু জানতে চাইতেন। কিভাবে হলিউডের ছবি হয়, চিত্রনাট্য হয়। তার এ ব্যাপারে জানার তৃষ্ণাও অনেক ছিলো।
নায়ক মান্নার সাথে শুটিংয়ের স্মৃতিচারণ করে এই পরিচালক বলেন, ‘এই সময় মান্না ভাইয়ের সঙ্গে শুটিংয়ের মাঝামাঝি একটা ভুল বুঝাবুঝির তৈরি হয়েছিল। এ সময় তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কিছুটা অম্ল হয়ে যায়। সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সেটা ছিলো কিছুক্ষণের জন্য। তার ড্রেসআপ, তার ফাইটের ব্যাপারে আমার সাথে তার কিছু দ্বিমত ছিলো। পরে তিনি আমার কথাগুলো মেনে নিয়েছিলেন। মান্না ভাইয়ের সঙ্গে আমার যা অম্ল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো তা এই ছবিটির ভালোর জন্যই। মান্না ভাই ছবিটির ভালোর জন্য কিছু সাজেশন দিতে চেয়েছেন। শেষের দিকে মান্না ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক খুব মধুর হয়ে গিয়েছিলো। এক সময় মান্না ভাইকে উদ্দেশ্য করেই এফডিসিতে আসতাম আমি। যেখানেই আমাকে দেখতো সেখানেই ভিড় ভাট্টা থাকলেও তিনি আমার কাছে আসতেন, দাঁড়াতেন। খুবই ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিলো তার সঙ্গে আমার। ’
লক্ষ লক্ষ দর্শক মান্নার অভিনয় ভালোবেসে ছিলেন
মান্না শিল্পী হিসেবে ও মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন জানতে চাইলে জেমী বলেন, ‘শিল্পী হিসেবে আশি ও নব্বই দশকে তিনি তাঁর এক ধরণের দর্শক তৈরি করে ফেলেছিলেন। অনেকে অভিযোগ করে মান্না খুব লাউড অভিনয় করতো, ওভার অ্যাকটিং করতো। আসলে তার অভিনয়ের প্যাটার্নই ছিলো এরকম। দর্শক এটা পছন্দ করে থাকলে আমি বলবো, এটাই সঠিক। গুনগত মানের দিক থেকে আমাদের এটার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। কারণ বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ দর্শক এটাকেই (তার অভিনয়কে) মেনে নিয়েছিলেন, ভালোবেসে ছিলেন।’
আরও খবর : পুনরায় সচল মান্নার ‘কৃতাঞ্জলী কথাচিত্র’
জেমী আরও বলেন, ‘মান্না অত্যন্ত ত্যাগী শিল্পী ছিলেন। শিল্পী হিসেবে তিনি খুব প্রফেশনাল ছিলেন। আমি যতদূর দেখেছি সিনেমা তার ধ্যান জ্ঞান ছিলো। আর প্রফেশনের বাইরে ব্যাক্তি হিসেবে মান্না ভাইকে খুব বেশি দেখার সুযোগ আমার হয় নি। তবে চলচ্চিত্রের মান্না হিসেবে তিনি একজন চমৎকার মানুষ ছিলেন। আমার দেখায় নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন অসাধারণ।’
পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন জেমীর আরও কিছু সাক্ষৎকার
⇒ আমার ছবি বিকল্পধারার বাণিজ্যিক ছবি : মোহাম্মদ হোসেন জেমী
⇒ বিসিটিআইকে আমি আর ফিল্ম ইনস্টিটিউট বলবো না: মোহাম্মদ হোসেন জেমী