নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই খসরু ভাইয়ের পকেট থেকে বের হয়েছি।’ হ্যা, তাই! বাংলাদেশের ভিন্ন ধারা ও ধ্রুপদী ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা যারা আছেন তারাও এই কথাটি এক বাক্যে স্বীকার করেন। সুস্থধারার চলচ্চিত্র সংস্কৃতি বিনির্মাণে তিনি আজীবন কাজ করে গেছেন। তাঁর হাত ধরে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্রের একটি প্রজন্ম। যে প্রজন্ম সুস্থধারা ও ধ্রুপদী চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছেন।
আজ চলচ্চিত্র আন্দোলনের পথিকৃত মুহম্মদ খসরুর প্রয়াণ দিবস। ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রয়াত হন। এ দিনে তাঁর অসংখ্য অনুজ চলচ্চিত্রকার, নির্মাতা, চলচ্চিত্র সংসদ কর্মী ও ভক্ত অনুরাগীরা তাঁকে স্মরণ করছে।
কালচারাল ইয়ার্ড পরিবার এই গুণী চলচ্চিত্র ব্যাক্তিত্বকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।
মুহম্মদ খসরুর জন্ম ১৯৪৬ সালে ভারতের হুগলী জেলায়। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা ‘ধ্রুপদী’ সম্পাদনা করেন। যার সর্বশেষ সংকলন প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। ছিলেন ‘চলচ্চিত্র’ পত্রিকার সম্পাদকও। লেখেন চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থও ।
সত্তরের দশকে মুহম্মদ খসরু উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন। সাক্ষাৎকারটি তৎকালীন ‘ধ্রুপদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে সাক্ষাৎকারটি উপমহাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় পুনর্মুদ্রণ হয়েছে।
১৯৭৫ সালে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘পালঙ্ক’ সিনেমায় মুহম্মদ খসরু ভারতীয় চলচ্চিত্রকার শ্রী রাজেন তরফদারের সাথে সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। হাসান আজিজুল হকের লেখা ‘নামহীন গোত্রহীন’ উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমার জন্য তিনি একটি চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। ইচ্ছে ছিলো সিনেমা বানানোর। রাষ্ট্রীয় অনুদানের জন্য জমাও দিয়েছিলেন চিত্রনাট্যটি। কিন্তু অনুদান পাননি। তাঁর এই সিনেমা বানানোর স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় শেষ পর্যন্ত।
মুহম্মদ খসরু সম্পর্কিত আরও খবর :
⇒ একজন ‘ধ্রুপদী’ চলচ্চিত্রকারদের শিক্ষক
বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ ও জাতীয় ফিল্ম আর্কাইভ প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রাখেন মুহম্মদ খসরু। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের প্রশিক্ষকও ছিলেন তিনি।
দেশে চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশে দীর্ঘ ৫০ বছর নিরবচ্ছিন্ন অবদানের জন্য হীরালাল সেন আজীবন সম্মাননায় তিনি ভূষিত হন। অর্জন করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণ জয়ন্তী পদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ আজীবন সম্মাননা ২০১৭।
মুহম্মদ খসরুর স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ
শেষ বয়সে কেরানীগঞ্জের রোহিতপুরের নিজের পৈর্তৃক বাড়িতেই নিরবে নিভৃতে বসবাস করতেন খসরু। তিনি মৃত্যুর আগে বহুদিন ধরেই শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, অ্যাজমার সমস্যায় ভুগছিলেন।
চলচ্চিত্র চর্চায় সারাজীবন নিমগ্ন থাকা এই চলচ্চিত্র শিল্পীর রোহিতপুরের বাড়িটি যেন একটি চলচ্চিত্র লাইব্রেরী। অসংখ্য চলচ্চিত্রের বই সংগৃহিত রয়েছে সেখানে। কিছু বই তিনি ফিল্ম আর্কাইভেও জমা দিয়েছিলেন। এই বাড়িটিতে রাখা তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণেরও উদ্যোগ গ্রহণ করার কথাও বলেছিলেন বিশিষ্টজনেরা।