নিজস্ব প্রতিবেদক:
পুরো বিশ্বে করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। আক্রান্ত হচ্ছে হাজারে হাজার। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ১ জন মারা গেছে, আক্রান্ত হয়েছে মোট ১৪ জনের অধিক। এ অবস্থায় করোনা ভীতি ও এ নিয়ে সতর্কতা বাড়ছে মানুষের মধ্যে। এমনকি করোনায় সতর্ক দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন।
সারা দেশে সকল প্রকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হানিফ খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন অনুরোধ জানানো হয়।
এদিকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ এক বিবৃতিতে বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে ততদিন দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। সকল জেলা-উপজেলাসহ সকল সাংস্কৃতিক জোট এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতি তারা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার আহ্বান জানান।
মহান স্বাধীনতা দিবসসহ অন্যান্য জাতীয় অনুষ্ঠান ছোট পরিসরে প্রতীকীভাবে পালন করা যেতে পারে বলেও মত দেন তারা।
এরইমধ্যে সিনেমা হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে স্কুল কলেজ। সকল প্রকার নাটক ও সিনেমার শুটিংও শীঘ্রই বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের পক্ষ থেকে মঞ্চ নাটকও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে করোনা বিস্তার রোধে দেশের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রাঙ্গনের বিশিষ্ট জনরা সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের সতর্কতার ব্যপারটি উল্লেখ করে সবাইকে সম্মিলিত প্রতিরোধের কথাও বলছেন তারা।
সংস্কৃতিজনদের সতর্ক বার্তা:
অভিনেত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব সূবর্ণা মোস্তফা তারে ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন করোনা নিয়ে মানুষের ট্রোল দেখে। সবাইকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ও যারা মারা যাচ্ছেন তাদের নিয়ে ভাবুন। এ নিয়ে যারা ট্রোল করছে তাদের দেখে মনে হচ্ছে মানবতা পিছু হটছে।
চিত্রনির্মাতা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, বিশ্বের বড় বড় দেশের কর্তাব্যাক্তিরা এটাকে তুলনা করছে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি হিসাবে। এটাতো এক অবিশ্বাস্য এবং অবিস্মরণীয় মহাযুদ্ধই। নাইলে কেউ দু:স্বপ্নেও ভাবছিলো আলো ঝলমলে সব বড় শহর ফাঁকা মরুদ্যান হয়ে যাবে? আর লোকেরা ঘরে বসে দিন গুজরান করবে? আমরাও আসেন এটারে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি হিসাবেই লই। নিজের হাতের সাথে যুদ্ধ করি, হাত পরিষ্কার রাখার যুদ্ধ। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করি, ঘুরতে না যাওয়ার, বেশি মানুষ এক জায়গায় না হওয়ার, আড্ডাবাজি না করার যুদ্ধ। বাঁইচা থাকলে এইসবই করতে পারবো।
তিনি আরও লেখেন, আর সরকারের বন্ধুরা, আসেন করি, টেস্টিং কিট সংগ্রহ করার যুদ্ধ, প্রতিটা হাসপাতালে করোনা মোকাবিলা ইউনিট বানানোর যুদ্ধ, ডেসিগনেটেড নার্স এবং ডাক্তারের দল বানানোর যুদ্ধ, লোকজনরে ঘরের ভিতর রাখার যুদ্ধ। পনেরো দিনের ছুটি দিয়া আন্তজেলা যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে কী হয়? সেনাবাহিনী মাঠে নামাইয়া মানুষের মুভমেন্ট জিরোতে নিয়া আসলে কী হয়? কি কি সাপোর্ট সিস্টেম চালু করলে ঘরে থাকলেও মানুষের খাওয়ার কষ্ট হবে না সেই প্রোগ্রাম নিলে কী হয়?
যুদ্ধ হইলেতো এইসবই হইতো নাকি?
শত্রু ঢুইকা পড়ার আগেই প্রস্তুত হওয়া মানেই যুদ্ধ জয়।
আসেন জিতি। কারন এছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো অপশন নাই।
নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী লেখেন, এখন আমাদের সবার প্রয়োজন সচেতনতা এবং সতর্কতা। শুধু নিজে ভালো থাকলেই, নিজের কথা ভাবলেই চলবেনা। পাশের মানুষের কথাও ভাবতে হবে সবার যে যার জায়গা থেকে।
তিনি বলেন, আমি সব সময় আশাবাদীর দলে। সবাই ভালো থাকুক, নিরাপদে থাকুক এই প্রার্থনা মন থেকে। যা হবে ভালো হবে। কারণ, সৃষ্টিকর্তা মহান। তিঁনিই জানেন কোনটা ভালো কোনটা মন্দ।