পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষের প্রথম দিন। এদিনকে ঘিরে উৎসব প্রিয় বাঙালি মেতে ওঠে প্রাণের উৎসবে। গ্রামবাংলার চিরায়ত এ উৎসব নগরজীবনেও জাগিয়ে তুলেছে প্রাণের স্পন্দন। কৃষকের গোলায় উঠে নতুন ধান, তৈরি হয় মুড়ি মুরকি। পুরনো বছরের হিসেব চুকিয়ে নতুন বছরের খাতা খোলে দোকানি। চলে মিষ্টি বিতরণ। গ্রাম থেকে শহরে বসে বিভিন্ন রকমের মেলা। মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে বাঙালি শুভ বর্ষের সূচনা করে।
আজ পহেলা বৈশাখ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ। কিন্তু আজ কোন দোকানি পুরনো হালখাতা খুলে মিষ্টি নিয়ে খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করছেনা। পাড়া-মহল্লায়, শহরে বন্দরে বসছেনা মেলা। রমনার বটমূলে হচ্ছেনা পান্তা-ইলিশের উৎসব। বাসন্তী সাজের কাউকে দেখা যাচ্ছেনা রাস্তায়। কারণ পুরো বিশ্ব থমকে গেছে করোনা ভাইরাস-এর থাবায়। পুরো মানবজাতি আটকে গেছে ঘরে। উৎসবমূখর বাঙালিও আজ ঘরে।
বরাবরের মতো এবারে এসেছে পহেলা বৈশাখ। বাঙালির নববর্ষ উৎসব। কিন্তু বাঙালির সাথে বাঙালির বর্ষবরণ উৎসব এখন লকডাউনে। তবে বাঙালি এদিনে নবউদ্যমে জাগছে। নিজ নিজ ঘরে সুরক্ষিত থেকে মঙ্গল কামনায় প্রার্থনায় রত।
সংস্কৃতিবান বাঙালি নিজ নিজ গৃহে চৈত্র সংক্রান্ত্রির শেষ দিনে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে মঙ্গল কামনায় প্রকৃতির কাছে সমর্পিত হয়েছে। পুরো পৃথিবীর এ দুর্দিনে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় প্রার্থনার সূরে সূর মেলাতে হয়-‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা। অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’।
‘উৎসব নয়, সময় এখন দুর্যোগ প্রতিরোধের’-এ প্রতিপাদ্যে টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে ছোট অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে লকডাউনে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে ছায়ানট। এর মধ্য দিয়ে বাঙালিকে উজ্জীবিত করার উদ্যোগ সত্যিই অনন্য। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন সামাজিক যোগাযোগভিত্তিক বিভিন্ন আয়োজন রেখেছে। টেলিভিশনগুলোতে প্রচারিত হচ্ছে বর্ষবরণের গান ও অনুষ্ঠান।
এ লকডাউন পরিস্থিতিতে কালচারাল ইয়ার্ড পরিবার প্রার্থনা করছে নববর্ষের প্রথমদিনে বাঙালি জেগে উঠুক নব উদ্যমে। পরাভূত করুক করোনা ভাইরাসের মতো অজানা শত্রুকে। বাঙালির লকডাউন বর্ষবরণ নব উদ্যমে জাগার প্রেরণা হোক।