খায়রুল ওয়াসী হালের তরুণ প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার। তিনি ‘আড়ং ডেইরি চ্যানেল আই বাংলার গান’ ২০১৬ সালের ফার্স্ট রানারআপ। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করার পাশাপাশি ছায়ানট থেকে লোক সঙ্গীতের ওপর অনেক বছর গানের তালিম নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ছায়ানটে শিক্ষকতা করছেন। অরুণ চৌধুরী পরিচালিত ‘আলতাবানু’ সিনেমায় কণ্ঠ দেয়ার মাধ্যমে চলচ্চিত্রের প্লেব্যাকে অভিষেক হয় তার। বর্তমানে নিজেই লিখছেন গান। আবার গানেও সুর করছেন। করোনা সময়কালীন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
কালচারাল ইয়ার্ড: এই গৃহবন্দি সময়ে আপনার পরিবর্তিত জীবনাচরণ ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে চাই।
খায়রুল ওয়াসী: পৃথিবী আজ অসুস্থ। মানুষের উৎকন্ঠার শেষ নেই। জীবন ও জীবিকা থমকে গেছে প্রায়। গানের মানুষ তাই স্টেজ শো, স্টুডিও রেকোর্ডিং, টিভি লাইভ সব বন্ধ প্রায়। ঘরে বসে গান চর্চা, গান লিখা ও সুর করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। করোনা এই পরিস্থিতির কারণে আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, এই পৃথিবী শুধুমাত্র মানুষের বসবাসের জন্য নয়, এখানে বিরজমান সবাইকে নিয়েই এটা পূর্ণতা পায়। মানব বিচরণ হ্রাস পাওয়া পরিবেশ ও প্রকৃতি নতুন করে জীবন পেয়েছে।
কালচারাল ইয়ার্ড: করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে গান কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
খায়রুল ওয়াসী: মুক্তিযুদ্ধের সময় গানের অবদান আমরা সবাই জানি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে গান গেয়ে গেয়ে উৎসাহ দেয়া থেকে শুরু করে জর্জ হ্যারিসন পর্যন্ত গান গেয়ে অর্থ সাহায্য তুলেছেন। এই ধারনা থেকে একটা আইডিয়া বের করেছি। যারা হাত পাততে পারে না, সে সব অসহায়দের জন্য ফেইসবুক লাইভে গান গেয়ে গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করতে চাচ্ছি। জানি না এটা কতটুকু সফল হতে পারবো। তবে সবাইকে পাশে চাই। আমি মনে করি শিল্পীরা এই কাজটা করলে যারা হাত পাততে পারে না তারা উপকৃত হবে, ইনশাআল্লাহ।
সঙ্গীতশিল্পী খায়রুল ওয়াসীর আরও খবর :
⇒ সঙ্গীত জগতকে সমৃদ্ধ করতে চাই: খায়রুল ওয়াসী
⇒ খায়রুল ওয়াসীর ‘গানে গানে করোনাকাল’
কালচারাল ইয়ার্ড: এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দি হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় কি মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন?
খায়রুল ওয়াসী: অবশ্যই সৃষ্টিশীল কাজ বাড়বে। সবাই অনেক বেশি সময় পাচ্ছেন ঘরে বসে থাকার। সময় নিলে চিন্তাশক্তি প্রখর হয়। করোনা চলে গেলে অনেক নতুন নতুন কাজ দিতে পারবো আমরা। করোনা পরবর্তীকালে আমরা এলোমেলো হয়ে যাওয়া সকল পরিস্থিতি সাজিয়ে দিবো গান দিয়ে, একে অপরের সহযোগিতা দিয়ে, মানবিকতা দিয়ে।
কালচারাল ইয়ার্ড: করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন।
খায়রুল ওয়াসী: করোনা পরবর্তী সময়টা অনেকের জন্যই ভোগান্তি ও কষ্টের হবে বলে মনে করি। তবে যেহেতু গান ও গানের মানুষের ফিক্সড কোনো ইনকাম নাই, সেজন্য সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য ভোগান্তিটা বেশি হবে। মনে আনন্দ না থাকলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলে না। এই করোনাকালের পর সাংস্কৃতিক মানুষেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদের নিকট ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
কালচারাল ইয়ার্ড: অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
খায়রুল ওয়াসী: অতীতকে আমি প্রচুর গুরুত্ব দেই। অতীত না থাকলে বর্তমান হতো না।আর বর্তমান না হলে ভবিষ্যতও হবে না। এটাই আমাদের জীবনচক্র। আমি আমার স্কুল জীবন থেকে শুরু করে কলেজ জীবনের জয়ী হওয়ার যুদ্ধের কথা স্মরণ করি। এতে আমার কাজের স্পৃহা বাড়ে। আমি অতীতের অভাব বর্তমান দিয়ে সাজিয়ে ভবিষ্যৎ পুরণ করতে চাই। গান দিয়ে জয় করতে চাই অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ।
কালচারাল ইয়ার্ড: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
খায়রুল ওয়াসী: ধন্যবাদ কালচারাল ইয়ার্ডকে আমায় চমৎকার মতামত প্রকাশ করার সুযোগ দেয়ার জন্য।
♣ খায়রুল ওয়াসীর ‘গানে গানে করোনাকাল’ গানের ভিডিও