সঙ্গীতশিল্পী বেলী আফরোজ। শৈশব থেকেই শুরু করেন গানের চর্চা। পরিচিতি লাভ করেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নাইনের সঙ্গীতবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘পাওয়ার ভয়েজ ২০১২’-এর মাধ্যমে। ইতোমধ্যেই তিনি প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন। রয়েছে বিশের অধিক একক ও মিক্সড অ্যালবাম। প্লেব্যাক, স্টেজ শো, টেলিভিশন শো এবং মিউজিক ভিডিও নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন তিনি। কোভিড ১৯-এর কারণে ব্যস্ত এই সঙ্গীতশিল্পী হয়ে পড়েছেন গৃহবন্ধি। এসময়ে নিজের জীবন, জীবনবোধ, জীবনাচারণ ও সঙ্গীতাঙ্গণের নানা বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সাথে কথা বলেন তিনি।
কালচারাল ইয়ার্ড: কীভাবে কাটছে গৃহবন্দি সময়? জীবনবোধে কোন পরিবর্তন এসেছে কী?
বেলী আফরোজ: আমার জীবিকাই কিন্তু গান বাজনা। মার্চের ১২ কি ১৩ তারিখ থেকে আমার টানা শো ছিলো। এখন সব বন্ধ হয়ে আমার লকডাউন হয়ে গেছি। একদম গৃহবন্দি হয়ে আছি। একেবারেই ঘরে সময় কাটাতে হচ্ছে। এক সময় বাইরে কাজকর্মের কারণে ঘরে সময় দিতে পারতাম না। এখন ঘরেই বেশি সময় দেওয়া হচ্ছে। বাসার টুকিটাকি কাজ করছি। বাইরের যে কাজের লোক আসতেন, তিনি আসতে পারছেন না। নিজেরাই এখন সব কাজ করি। আগে নামাজ তেমন পড়া হতো না। এখন নিয়মিত নামাজ পড়তে পারছি। এছাড়া রান্না করাটা আমার শখ। এখন নিজের শখের কিছু রান্না করা হচ্ছে।
কালচারাল ইয়ার্ড: করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে সঙ্গীত কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
বেলী আফরোজ: আমরা এ সময়ে দেখতে পাচ্ছি যে, অনলাইনের প্রভাব এখন অনেক বেশি। এখানে এখন অনেকেই গান করছে। ছোট ছোট ভিডিও বানাচ্ছে। তারা এটাতে পারদর্শী। অনেক অনেক সময় পার করছে। কিন্তু আমাদের শিল্পীরা সবাই এক ধরণের আর্টিস্ট না। অনেকে গান করে সময় কাটাচ্ছে। অনলাইনে দিচ্ছে। মনটাকে রিফ্রেস করছে। তবে আমি বলবো, এটা যারা করছে, ভালোই করছে। সময়টাকে উপভোগ করছে। মানুষকে গান গেয়ে আনন্দ দেওয়াটাই আমাদের কাজ। এখন ঘরে বসে অনেকেই এই কাজটা করছে। যা অবশ্যই ভালো বলে আমি মনে করি। এটাকে আমি অ্যাপ্রিসিয়েট করি। সবাই মনমরা হয়ে গেলে কেমনে হবে। মনটাকে ভালো রাখার জন্যই এরকম করা উচিত। আমি নিজেও দু’একটা গান ঘরে বসে করেছি।
সঙ্গীতশিল্পী বেলী আফরোজের আরও খবর :
⇒ গানের মাঝেই আজীবন বেঁচে থাকতে চাই: বেলী
কালচারাল ইয়ার্ড: এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দি হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় কি মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা।
বেলী আফরোজ: অবশ্যই, মানুষের সাংস্কৃতিক বিকাশে এ সময়টা গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের অনেকেই এখন অনেক কিছু করছে। তারা নিজেদের বিকাশে এ সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছে। যেমন আমাদের একজন শিল্পী রান্না করে অনলাইনে দিয়েছে। সেটি বাংলা টিভিতে প্রচার হয়েছে। এরকম অনেকেই অনেক কিছু করছে। এটাকে ভালোই বলবো আমি। এ সময়টা মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটাচ্ছে। আসলে এখনই সময় নিজের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের।
কালচারাল ইয়ার্ড: করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন।
বেলী আফরোজ: আমাদের শিল্পীদের মধ্যে অনেকে আছে, যারা এই গান দিয়েই সংসার চালাতো। তারা এখন একবারে ঘরে বসে আছে। হয়তো তাদের ডিপোজিটও করে রাখতে পারে নি। এ পরিস্থিতিতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আবার আমাদের মত অনেকে আছে, যারা জমা বা যে পুঁজি ছিলো সেটা ভেঙ্গে আমরা খাচ্ছি। আমিসহ আমাদের যারা শিল্পী আছে, আমাদের মনে হয়, আমাদের উপর করোনার প্রভাবটা সবচেয়ে বেশি হবে। আমরাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবো। কারণ মানুষের এখনকার যে পরিস্থিতি এ সময় সচল হতে অনেক সময় লাগবে। যে আকারে আমাদের শোগুলো হতো। যে কোম্পানিগুলো এগুলো আয়োজন করতো। তাদের নিজেদের অবস্থানে দাঁড়াতেও সময় লাগবে। এরপর নিজেরা দাঁড়িয়ে তারা বিনোদনের আয়োজন করবে। এ বছর পরিস্থিতি শিথিল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদিও হয় এরপরও আমাদের প্রোগ্রাম টোগ্রাম তেমন হবে না। তো আমাদের জন্য খুবই খারাপ সময় অপেক্ষা করছে।
করোনাকালীন সময়ে সঙ্গীতশিল্পীদের ভাবনা
⇒ ‘অসহায়দের জন্য গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করতে চাচ্ছি’
⇒ ‘করোনা পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিল্পীরা’
কালচারাল ইয়ার্ড: অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
বেলী আফরোজ: লকডাউনে ঘরে বসে তো এখন আমি আমার আগের সময়টাকেই মিস করছি। এক সময় মাসে টানা ২০-২৫দিনও আমার শো হতো। ঢাকার বাইরে প্রচুর পরিমাণে শো থাকতো। আমি সবচেয়ে বেশি মিস করছি, আমার সেই জার্নিটা। যখন সবাই মিলে একসাথে যেতাম, মজা করতাম। একেক জায়গার একেক স্মৃতি। এখন সবাই একেবারে ঘরবন্দি হয়ে আছি। যার যার বাসায় যে যে থেকে সবার সাথে ভিডিও কলে কথা হচ্ছে। এভাবে ঘরবন্দি হয়ে যাবো, এরকম পরিস্থিতি আসবে; কখনো চিন্তাও করতে পারিনি। এ সময় নিজের পুরনো কিছু ভিডিও দেখি। নিজের গানগুলো দেখি। এছাড়া আগে তোলা নিজের ছবিগুলো দেখি, সেগুলো ফেইসবুকে আপলোড করি। নিজেকে রিফ্রেশ করার জন্য এ কাজগুলো করছি। এ সময় ভাবি যে, আবার কবে শুটিংয়ে যাবো আমরা? এরকম আবার কখন হবে? এখন শুধু অপেক্ষা, আবার কবে স্টেজে গান গাইবো। এইতো….
কালচারাল ইয়ার্ড: সব শেষে এই পরিস্থিতি নিয়ে কি বলতে চান।
বেলী আফরোজ: শেষ কথা হচ্ছে, আমরা যার যার জায়গা থেকে কিছু করা উচিত। যেমন আমি একজন কণ্ঠশিল্পী, আমি আমার জায়গা থেকে, আপনি একজন সাংবাদিক, আপনি আপনার জায়গা থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী গরীব অসহায় আত্নীয় স্বজনের খোঁজ খবর নেয়া উচিত। যেমন গরীব ভিক্ষুক যারা আছে, তারা তো চাইতে পারে। কিন্তু মধ্যবিত্ত যারা আছে, তারা তো চাইতে পারে না। তাদের যেন এ সময় আমরা সহায়তা করি।
কালচারাল ইয়ার্ড: আমাদেরকে সময় দেয়া জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
বেলী আফরোজ: ধন্যবাদ আপনাকে ও কালচারাল ইয়ার্ডকে।