অভিনেতা, উপস্থাপক ও রেডিও জকি ইভান সাইর। সাবলীল অভিনয়, সুন্দর উপস্থাপনা ও বাচনভঙ্গির মাধ্যমে ইতোমধ্যেই মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে সকলের মত সময়ের ব্যস্ত এই শিল্পী হয়ে পড়েছেন ঘরবন্দী। থেকে গেছে তার অনেক কাজ। তবুও অনলাইনের মাধ্যমে কিছুটা সক্রিয় আছেন তিনি। যতটুকু সম্ভব কাজ করে যাচ্ছেন। করোনাকালীন সময়ে তার জীবনাচারণ, জীবনবোধ ও নানা বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সাথে কথা বলেন বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পী।
কালচারাল ইয়ার্ড: এই গৃহবন্দী সময়ে কীভাবে কাটছে? এ সময়ে আপনার পরিবর্তীত জীবনাচরণ ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে চাই।
ইভান সাইর: ঘরেই সময় কাটছে। বাইরে যাবার তাড়া নেই। ঘুম, সিনেমা, রোজা, নামায, ব্যায়াম, মিউজিক, ফেইসবুক থেকে কিছু লাইভ শো, দেশে বিদেশে পরিচিত জনদের খোঁজ খবর নেয়া, কখনো অলসতা, কখনও নীরবতা, কখনো খুব মন খারাপ, কখনও ফুরফুরে এই সবকিছু মিলিয়ে কেটে যাচ্ছে সময় আলহামদুলিল্লাহ্।
জীবনবোধ হল জীবন আসলে কিছুই না, একটি সুন্দর মিথ্যা ছাড়া। নিজেকে চিনতে পারাটার জন্য সময় দরকার। এখন পাওয়া গেল। নিজেকে চিনতে পারা মানে যদি কাজের জায়গা দিয়ে বলি, আমি কি করতে চাই। আসলে সেটা করছি কি না, সেটা না করে জোয়ারে গাঁ ভাসিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি কি না। নিজে যেমন, তেমন কাজের জন্য অপেক্ষা করার মানসিক শক্তি আছে কি না, আবার সে মতন নিজেকে তৈরি করার মানষিক জোর আছে কি না। এ সব উপলব্ধি ভালোই হচ্ছে। আবার যদি মানুষের সাথে সম্পর্কের জায়গা থেকে বলি, তবে ফেইক রিলেশানগুলো, মিথ্যা হাহাহিহিগুলো ধরা পরে যাচ্ছে। জেনুইন রিলেশান উপলব্ধি করার বোধ মোটা দাগে ধরা দিচ্ছে মগজে। সবমিলিয়ে এক দারুণ স্থিরতার উপস্থিতি পাচ্ছি জীবনে।
ইভান সাইর সম্পর্কিত আরও খবর
⇒ ঈদের নাটকে ইভান সাইর
কালচারাল ইয়ার্ড: করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে নাটক ও সিনেমা কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
ইভান সাইর: ঠিক এই সময়ে নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন ক্রাইসিস সময়ে নাটক, সিনেমাই সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ এগুলোই তো সমাজের আয়না। এই সময়ে পৃথিবীব্যাপী ঘরবন্ধি মানুষগুলোকে বিনোদন দিয়ে, তাঁদের মনের খোরাক জুগিয়ে মানসিক শক্তি দিচ্ছে নাটক, সিনেমা। বিশেষ করে সবচেয়ে বড় যে ভূমিকা তা হল, আগামীতে নাটক, সিনেমার বিশেষ করে সিনেমার মধ্য দিয়েই এই করোনার সময়টা মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। এটা অনেক শক্তিশালী একটা ব্যাপার। কাজেই যে কোনকিছুতেই নাটক, সিনেমা কিংবা গান অনেক মূল্যবান ভূমিকা রাখে।
কালচারাল ইয়ার্ড: এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দী হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় কি মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা?
ইভান সাইর: তা তো অবশ্যই। এটা নিয়ে আমার অন্তত দ্বিমত নেই। এমনকি এতে করে সংস্কৃতির প্রকাশে বা প্রতিভার প্রকাশে নতুন এক ধরণ প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে সবকিছুরই একটা শৃঙ্খলা লাগবে। সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কালচারাল ইয়ার্ড: করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন?
ইভান সাইর: অনেক বদল আসবে। সেটাই স্বাভাবিক। এতদিনের যে অভ্যাস তার থেকে বের হয়ে নতুন এক অভ্যাসের সাথে মিলিয়ে নিতে হবে নিজেদের। সব বদলে যাবারই কিছু ভাল আর কিছু মন্দ দিক আছে। তবে মানুষ তো অভ্যাসের দাস। ঠিক কি ধরণের বদল আসবে, তা দেখতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। এখনো নির্দিষ্ট করে বলার সময় আসে নি বলে আমার মনে হয়।
করোনাকালীন সময়ে তারকাদের ভাবনা
⇒ ‘সিনেমা-নাটককে জীবনমুখী ভাবনায় নির্মাণ করতে হবে’
কালচারাল ইয়ার্ড: অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
ইভান সাইর: এটা মজার প্রশ্ন। ধন্যবাদ। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব ভাবনাই আছে। আর অতীত স্মৃতি বিচ্ছিন্নভাবে আসে। স্কুলের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ তৈরি হয়েছে হোয়াটস আপ গ্রুপে। সেখানে কথাও হয় এখন নিয়মিত। তেমনি অনেক পুরনো মানুষের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। সেই খাতিরে সে মানুষগুলোর সাথে জড়িয়ে থাকা স্মৃতিরা আসে। বিশেষ করে ছোটবেলা, কাজের শুরু, কিছু কঠিন দিন, স্মরণীয় কতকিছুই মনে আসে। আবার এমন সব কথা মনে আসে, যা কখনো মনে পরত না এমন সময় না আসলে।
কালচারাল ইয়ার্ড: কালচারাল ইয়ার্ডকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ইভান সাইর: ধন্যবাদ আপনাকে এমন সুন্দর সব প্রশ্নগুলোর জন্য। আর সকলের মতন আমিও প্রার্থনা করি পৃথিবী যত দ্রুত সম্ভব, যতটা সম্ভব সুস্থ হয়ে উঠুক। মানুষ সচেতন থাকুক, ভালো থাকুক। আর করোনায় ঘরবন্দী জীবনেও কিন্তু মিলিয়ে, মানিয়ে নিয়ে ব্যস্ততা মন্দ নয়। পরিবারের, ভালোলাগার মানুষগুলোর সাথে ভালোবাসা আরও বেড়ে যাবার সময় এটা।