টলিউডের অভিনেত্রী পায়েল মুখার্জি। মাইকেল, দেবী গড়ে গড়বড়, দেখ কেমন লাগে, ফাঁস, চল কুন্তল, ভানুসহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। হিন্দি ও ভোজপুরী সিনেমায়ও দেখা গেছে তাকে। ঢালিউডের ক্যাপ্টেন খান ও গণ্ডি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন এই গ্লামারাস অভিনেত্রী। তার অভিনীত আগন্তুক ছবিটি সম্প্রতি টলিউডে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু করেনার কারণে সেটি এখনও মুক্তি পায় নি। করোনাকালীন সময়ে ঘরবন্দী জীবন, তার জীবনবোধ, ভাবনা ও নানা বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সাথে কথা বলেন এই তারকা।
কালচারাল ইয়ার্ড: এই গৃহবন্দী সময়ে আপনার পরিবর্তীত জীবনাচরণ ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে চাই।
পায়েল মুখার্জি: যে সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, এর জন্য আমরা প্রত্যেককেই অপ্রস্তুত ছিলাম। আমাদের প্রত্যেকের যে রুটি রোজগার, সেটা ভীষণভাবে পরিবর্তীত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অনেকের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, সবাইকে কোন না কোনভাবে অবসন্নতা গ্রাস করেছে। শুরুতে আমাকেও এই অবসন্নতা গ্রাস করেছিলো। এই পরিস্থিতির যে অনিশ্চয়তা, কবে আবার আমরা কাজ করতে পারবো?
প্রথমে কিন্তু আমাদের রুটিন লাইফ পরিবর্তীত হচ্ছিলো, ঘুম বিঘ্নিত হচ্ছিলো। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে নিজেদেরকেই নিজেরাই মোটিভেটেড করতে হবে। এই সময়টা ভীষণভাবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার সময়। আজকে কিন্তু আমি অনেক বেশি নিজের লাইফকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করেছি। এই লকডাউনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আমি নিজেকে পরিবর্তীত করেছি। এ সময়ে আমি প্রোপারলি একটা টাইম মেইনটেইন করে ঘুমাই। আমি এখন আর্লি ঘুমাতে যাই, আর্লি ঘুম থেকে উঠি। তো সেগুলো থেকে শুরু করে রেগুলার লাইফে একটা ওয়ার্ক আউট করা। একটা কার্ডিও, একটা ফ্রি হ্যান্ড, এগুলো করি। যেগুলো কিনা আমাদের ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। হেলদি ডায়েট আমি ফলো করি। আগে কাজের টাইমে প্রোপার ডায়েট চার্ট মেইনটেইন করা হতো না। সেগুলো করছি। এভাবে এ সময়টাকে আমি ইউজ করছি। আমি মনে করি, এ সময় সবাইকে ড্রিপেশনে না ভুগে এগুলো নিয়ে ভাবা দরকার। বহুদিন পরে নিজের পরিবারকে সময় দেয়া সুযোগ এসেছে। এখন সবাই মিলে বসে গল্প ও আড্ডা দেয়া উচিত।
আরেকটি কথা, যেহেতু এখন এতোটা অবসর রয়েছে। এ সময়টায় আমাদের প্রত্যেকের সৃজনশীল সত্তাকে আমরা আরও বেশি এক্সপ্লোর করতে পারি।
কোভিড ১৯ নিয়ে নির্মাতাদের ভাবনা :
⇒ ‘শুটিং না করে ঘরে থাকার নীতিতে অটল থাকার কোনো বিকল্প নেই’
কালচারাল ইয়ার্ড: করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে চলচ্চিত্র কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
পায়েল মুখার্জি: চলচ্চিত্র আমাদের জীবনেরই একটা প্রতিচ্ছবি। সেক্ষেত্রে চলচ্চিত্র কিন্তু মানুষকে ইনফ্লুয়েন্স করে, অনেক বেশি মোটিভেট করে। আমার মনে হয়, এই পরিস্থিতিতে এমন চলচ্চিত্র হওয়া উচিত, যাতে মানুষকে ইন্সপায়ার করতে পারে। এরকম বিষয় মাথায় রেখে আমরা যদি কাজ করতে পারি, সেটা ডেফিনেটলি ভালো হবে। এছাড়া আরেকটি কথা মাথায় রাখতে হবে যে, আমরা করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত সকল এডভাইসরি ফলো করছি। যেমন মাস্ক পড়া, প্রপার স্যানিটাইজেশন করা, সোস্যাল ডিসটেন্স মেইনটেইন করা। তাহলে মানুষ কিন্তু এগুলোতে উদ্ধুদ্ধ হবে। মানুষ যখন দেখবে যে আর্টিস্টরা এই ব্যাপারগুলো করছে, তাহলে এ বিষয়টা তখন খুব পাওয়ারফুল হয়। যখন তারা দেখে যে তাদের আইডলরা একই ধরণের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তো একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবে আমি মনে করি, এ ধরণের কাজের মাধ্যমে এসময় চলচ্চিত্র বিরাট ভুমিকা রাখতে পারে।
কালচারাল ইয়ার্ড: এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দী হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় কি মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা।
পায়েল মুখার্জি: মানুষ কিন্তু ডেফিনেটলি সংস্কৃতিমনস্ক। বিশেষ করে আমাদের বাঙালি জাতির সঙ্গে সংস্কৃতি শব্দটা ওঁতোপ্রোতভাবে জড়িত। তো সেদিক থেকে হয়তো কর্মব্যস্ত সময়ে আমরা কিছু করতে পারি না। এখন যে অখন্ড অবসর, এ সময়টাকে মানুষ কাজে লাগিয়েছে। এ সময়ে যে একটা প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে মানুষ গেলে, তো পরবর্তীতে এটার একটা ইমপেক্ট তো আমাদের সোস্যাল লাইফে পড়বেই। প্রত্যেকের সৃজনশীল সত্তাকে আমরা আরও বেশি এক্সপ্লোর করতে পারবো। সেটা নাচ, গান থেকে পেইন্টিংসহ অনেক কিছুই হতে পারে। ধরুন, কেউ হয়তো ছোটবেলায় গান শিখেছে। অনেক দিন ধরে গাইতো না। সে এ সময়টাতে একটা ইন্সিপিরেশন পেলো, সে গাইবে। এ সময় তো নিজের সংস্কৃতিতে অবশ্যই সে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছে।
করোনাকালীন সময়ে তারকাদের ভাবনা
⇒ ‘সিনেমার মধ্য দিয়েই করোনার সময়টা মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত থাকবে’
কালচারাল ইয়ার্ড: করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন?
পায়েল মুখার্জি: সংস্কৃতির অনেকগুলো অঙ্গন রয়েছে। যেমন আমাদের চলচ্চিত্রের ইতিহাস ১০০ বছরেরও পুরনো। তার আগেও মানুষ সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তো সেই সংস্কৃতি তো থাকবে। তবে চলচ্চিত্র বা নাটক আগামী কিছুটা সময় কিন্তু ডাউনফলের মধ্য দিয়ে যাবে। যেহেতু এখন আমাদের বেসিক নিডসগুলো কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিনোদনের ক্ষেত্র কিন্তু অনেক পরে আসে। তাই কিছুটা সময় বিনোদন সেক্টরটা ক্ষতিগ্রস্ত থাকবেই। কারণ আমরা জানি না আমাদের সিনেমা হল কবে ওপেন হবে। যে রেজ্যুলেশন মেইনটেইন করে শুটিং করতে বলা হয়েছে, তা মেইনটেইন করাও ডিফিক্যাল্ট। শুটিং কস্ট অনেক বেড়ে যাবে। এ পরিস্থিতিগুলোকে সামাল দিয়ে প্রোপার কাজ আবার কবে শুরু হবে? কাজ শুরু হলেও আগের কোয়ানটিটিতে কাজ কিন্তু হবে না। সেক্ষেত্রে অনেক আর্টিস্ট ও কলা-কুশলীরা জবলেস থাকবে। তুলনামূলক কম লোক কাজ পাবে। সেখানে কিন্তু আমাদের উদ্বেগের জায়গা রয়েছে।
এত কষ্টের মধ্যেও কিছু ভালো জিনিস হয়তো আছে এই সময়টায়। আগামী দিনের জন্য শুভ কামনা রইলো যে, সবকিছু যেন দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যায়। আর এ সময়টায় যে ভালো দিকগুলো আমাদের দিয়ে গেছে, সেগুলো নিযে যেন পরবর্তী জীবনে এগিয়ে যেতে পারি।
কালচারাল ইয়ার্ড: অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
পায়েল মুখার্জি: আমাদের যে একেবারে স্কুলজীবন, সেটা সারাজীবন আমাদের তাড়া করে বেড়ায়। যে যেখানেই পৌঁছাক না কেন, স্কুলজীবনের মতো সেই সুন্দর ও সাবলীল সময় আর কখনো ফিরে আসে না। আমার অবসর সময়ে ওই স্মৃতিগুলোই বারবার ফিরে এসেছে। এ জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট কাজ হচ্ছে, পুরনো অ্যালবাম দেখা। পুরনো অ্যালবামের থেকে পুরনো পুরেনো স্মৃতি চলে আসে। সে কাজগুলো আমিও করেছি। নিজের সে সময়টাকে খুব মিস করেছি। কিন্তু সেগুলো এ সংকটকালীন সময়েও একটা সুন্দর ফ্রেস করে যায়।
কালচারাল ইয়ার্ড: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
পায়েল মুখার্জি: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।