কৌতুক অভিনেতা আনোয়ারুল আলম সজল। ভারতীয় টেলিভিশন জি বাংলার জনপ্রিয় কমেডি শো ‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার-৬’-এর দ্বিতীয় রানার আপ হন তিনি। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু চলচ্চিত্র, টেলিভিশন নাটক ও ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। নিয়মিত অভিনয়ে পাশাপাশি তিনি টেলিভিশন ও রেডিওতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানান ধরনের ভিডিও তৈরি করে ইউটিউব ও ফেইসবুকের মাধ্যমে বিনোদনের পাশাপাশি মানুষকে অনেক ম্যাসেজ দিয়ে থাকেন। করোনাকালীন এই গৃহবন্দী সময়েও তার এই প্রচেষ্টা অব্যহত ছিলো। সম্প্রতি তার ব্যক্তিজীবন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানা বিষয়ে নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সাথে কথা বলেন ‘মীরাক্কেল’ খ্যাত এই তারকা।
কালচারাল ইয়ার্ড : এই গৃহবন্দি সময়ে আপনার পরিবর্তীত জীবনাচরণ ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে চাই।
আনোয়ারুল আলম সজল : ঘরবন্দী জীবনে আসলে নিজেকে নিয়ে ভাবার অনেক বেশি সময় ছিলো, করোনা পরবর্তী সময় নিয়ে ভেবেছি। ছোট খাটো কি কি ভুল ছিলো বা বদ অভ্যাস ছিলো, যা আসলে না করলেও জীবন চলে, সেগুলো যেন পরবর্তীতে আর না হয়; সেটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, এই সময়ে স্ক্রিপ্ট লেখার উপর খুব বেশি জোর দিয়েছি। যাতে করে লকডাউনের পরে আমাকে যখন আবার আমার কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে হবে, তখন যেন আমার কাছে প্রচুর কন্টেন্ট থাকে । খালি হাতে যেন মাঠে নামতে না হয়। সব কিছু নিয়ে ভাববার অনেক সময় পেয়েছি, তাই সেগুলো লেখার বা বাসায় বসে চর্চা করার অনেক সময় পেয়েছি এবং গৃহবন্দী সময়টাকে আমি পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছি।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন।
আনোয়ারুল আলম সজল : এই সময় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দ্বারা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব, কারণ একটি সচেতনতা বা কোন বার্তা যখন মানুষের কাছে একটি গানের মাধ্যমে বা হাসির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তখন সেটি বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায় ।
করোনাকালীন সময়ে তারকাদের ভাবনা
⇒ আগামীতে একটা ইতিবাচক সাংস্কৃতিক বিশ্ব আমরা দেখতে পাবো: নিরব
কালচারাল ইয়ার্ড : এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দী হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় কি মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা।
আনোয়ারুল আলম সজল : অনেকেই এই ব্যাপারটাতে বিরক্ত হয়। ফেইসবুকে বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরতে ঘুরতে যখন দেখা যায় কেউ বারান্দায় বসে গান গাইছে, কেউ ছাদে নাচছে, আবার কেউ অপরিণত হাতে ছবি একে সেই ছবি বিভিন্ন জায়গায় আপলোড করছে; এতে অনেকেই বিরক্ত হয়। ব্যাপারটা নিয়ে মজা করে, কিন্তু আমি এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখি।
একটি পারফর্মেন্স সব সময় শুধুমাত্র অন্যদের আনন্দ দানের জন্য হবে না। শিল্পী নিজেও মানুষ। তারও একটা মন আছে। একটি শিল্পসত্তা আছে। তাই কিছু কিছু পারফর্মেন্স শিল্পীকে নিজের মনের আনন্দের জন্যেও করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ঘরে বসে নিজের প্রতিভার বিকাশের জন্য বা অন্যকে আনন্দ দানের জন্য কিছু করে তাতে ক্ষতি কি? আপনার হয়তো ভালো লাগছে না, কারো না কারো তো সেটা ভালো লাগতেও পারে।
কালচারাল ইয়ার্ড : অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
আনোয়ারুল আলম সজল : এ সময় আসলে বাইরে গিয়ে তো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব না। তাই ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে দেখা হয় কথা হয়। তখন স্কুল জীবনের স্মৃতি গুলো খুব মনে পরে। যদি কোনদিন সেই জীবনটা আবার ফিরে পাওয়া যেতো। এছাড়া কলকাতার বন্ধুদের সঙ্গে যখন দেখা হয়, তখন আমরা আমাদের ‘মিরাক্কেল’-এর দিনগুলোর কথা মনে করি। শত সহস্র সুখময় স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমাদের এই একটি নামের সাথে। যে দিনগুলো আর কোনদিনই ফিরে আসবে না।
কোভিড ১৯ নিয়ে নির্মাতাদের ভাবনা :
⇒ ‘শুটিং না করে ঘরে থাকার নীতিতে অটল থাকার কোনো বিকল্প নেই’
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন।
আনোয়ারুল আলম সজল : পরবর্তী দিনগুলো কঠিন হবে। আমাদের জন্য খুবই কঠিন সময় আসতে যাচ্ছে। কাজ না করে বাসায় বসেও থাকা যাবে না, আবার করোনা আতঙ্কে কাজ করতেও ইচ্ছে করবে না। এমনকি লকডাউনের এই শেষ মুহূর্তে এসে আমি এখনও ঠিক করতে পারি নি আমি কি কাজে নামবো নাকি না।
কালচারাল ইয়ার্ড : আমাদেরকেকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আনোয়ারুল আলম সজল : আপনাকে ও কালচারাল ইয়ার্ডকেও ধন্যবাদ।