সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও শিক্ষক ফাহিম ফয়সাল। সঙ্গীতাঙ্গনসহ মিডিয়ার বিভিন্ন শাখায় দীর্ঘ এক যুগ ধরে তিনি কাজ করছেন। বেশ কয়েকটি একক ও মিশ্র অ্যালবাম রয়েছে তাঁর। তিনি ‘স্বপ্নসুর’ ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও লিড ভোকাল। তাঁর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘নীলচে আকাশ’, ‘সিজদাহ করি তোমায়’, ‘ভালোবাসার শেষ খেয়াল’, ‘চোখের মাঝে’, ‘ছুঁয়ে দেবে’ ইত্যাদি। এছাড়া তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। ভালোবাসেন বই পড়তে, ভ্রমণ করতে ও ছবি তুলতে। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। করোনাকালীন এই গৃহবন্দী সময়ে ব্যাক্তিজীবন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানা বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সঙ্গে কথা বলেন এই সঙ্গীতশিল্পী।
কালচারাল ইয়ার্ড : এই গৃহবন্দী সময় কীভাবে কাটছে?
ফাহিম ফয়সাল : অন্য সবার মত আমারও গৃহবন্দী এই সময়টি খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। কারণ, সারাদিন বাসায় থাকছি। কোথাও যেতে পারছি না। এদিকে দিন রাত সব এক হয়ে গেলেও আমি খুব ব্যস্ত। কারণ, হাতে জমে থাকা বেশ কিছু গানের কাজ করছি। অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নিচ্ছি। ব্যক্তিগত পড়ালেখা করছি। অনলাইনে বিভিন্ন ইন্টারভিউ দিচ্ছি। এছাড়াও আমার ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেল ‘ফাহিম ফয়সাল অফিসিয়াল’ এ নিয়মিত ভিডিও প্রকাশ করছি। সব মিলিয়ে বলবো, বাসায় থাকলেও ব্যস্ততা আগের চেয়ে বেড়েছে বহুগুণ।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী কাজ নিয়ে কোন পরিকল্পনা করছেন কিনা।
ফাহিম ফয়সাল : কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বের সবদেশে যে বড় একটি ধাক্কা লেগেছে তার জন্য সবাই যার যার পরিকল্পনার পরিবর্তন করতে বাধ্য। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। এই যেমন, এ বছর আমার অনেক পরিকল্পনা ছিলো। প্রস্তুতিও শুরু করেছিলাম। কিন্তু সেগুলো শুরু করার সময়েই সারাবিশ্বে করোনা ছড়িয়ে পড়ে। তাই আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে আমি এখনই কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। বৈশ্বিক বিষয়ের পাশাপাশি দেশীয় বিষয়ের সব কিছু পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছি। তবে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি, সঠিক সময়ে যেন সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারি।
সঙ্গীতশিল্পী ফাহিম ফয়সালের আরও খবর :
⇒ ফাহিম ফয়সালের গানে মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘আঙুল ছুঁতে চাই’
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে সঙ্গীত কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন।
ফাহিম ফয়সাল : দেখুন, দেশ-জাতি ভেদে সঙ্গীত সব সময় সৃজনশীল একটি বিষয় বা শিল্প সংস্কৃতির অন্যতম একটি শাখা। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে মানুষের মন এখন অস্থির। আর অস্থির সময়ে মানুষের মনের প্রশান্তির জন্য সঙ্গীতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের হাতে এখন অবারিত সময়। আর যেহেতু মানুষ এখন বাসায় অবস্থান করছেন সেহেতু মানুষ সঙ্গীতের পাশাপাশি বিনোদনের অন্যান্য শাখায়ও বিচরণ করছেন।
কালচারাল ইয়ার্ড : এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দি হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় কি মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা।
ফাহিম ফয়সাল : অবশ্যই। ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। আমরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, মানুষ এখন নিজেকে নতুনভাবে চেনার সুযোগ পাচ্ছে বা জানছেন। অবসরে ঘরে বসেই সৃজনশীল নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছেন। এতে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটছে। সংস্কৃতির বিকাশে এই সময়টা অবশ্যই অনন্য। তবে সংস্কৃতিচর্চার বিষয়ে মাথায় রাখতে হবে, তা যেন হয় সুন্দর ও অনন্য। মনে যা আসলো, তাই করলাম বা যা ইচ্ছে, তাই করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিলাম এমনটা কিন্তু সংস্কৃতিচর্চা নয়। কারণ, এখন অনেকেই সংস্কৃতিচর্চার নামে ভাঁড়ামি করছে, এটা ঠিক না।
করোনাকালে সঙ্গীতশিল্পীদের ভাবনা
⇒ প্রিয় কিছু মুখ খুঁজে বেড়াই মনের অজান্তেই : ইউসুফ আহমেদ খান
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন।
ফাহিম ফয়সাল : মানুষ এখন চরম অতঙ্কে আছে। আমারতো মনে হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সচেতন মানুষ মাত্রই প্রয়োজন না হলে বাসা থেকে বেরই হবেন না। অনর্থক আড্ডা দেয়া, পাবলিক প্লেসে যাওয়া, সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া ইত্যাদির বিষয়ে সর্ব্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবেন। একান্ত প্রয়োজন না হলে এর সবকটি এড়িয়ে চলবেন। আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের অধিকাংশেরই মূল জায়গা হচ্ছে ইভেন্ট। যেখানে অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটে। যেহেতু মানুষ এখন থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি সকল ধরনের পাবলিক প্লেস এড়িয়ে চলবেন সেহেতু সংস্কৃতিচর্চকারীদের জন্য এটা হবে সবচেয়ে ক্ষতির দিক। যদিও এখন অনেকেই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করছেন ঠিকই, কিন্তু এটাও বেশী দিন ভালো লাগবে না বলেই আমার বিশ্বাস।
কালচারাল ইয়ার্ড : এ লকডাউনের অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
ফাহিম ফয়সাল : দেখুন, আমরা এখন সবাই স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী বা স্বেচ্ছায় নির্বাসনে আছি। একজন সুস্থ ও স্বাধীন মানুষ হিসেবে এর চেয়ে অস্বস্তির কারণ আর কি হতে পারে? সামাজিক জীব হিসেবে আমি অবশ্যই হারিয়ে যেতে চাই অতীতের সোনালী সেই দিনগুলোতে যখন আমরা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তাম একা, বন্ধু-বান্ধব বা পরিজন নিয়ে। যখন ছিলোনা কোন বাঁধা-বিপত্তি। তবে খারাপ লাগে এই ভেবে, অতীতে আমরা যে স্বাধীন একটি সময় কাটিয়েছি তা হয়তঃ আর কখনও হবে না। তবে আল্লাহ দয়া করলে সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে, এই বিশ্বাস পোষণ করি। সর্বোপরি মহান আল্লাহর রহমতে পরিবার নিয়ে সুস্থ আছি এটাই সবচেয়ে বড় নেয়ামত।
কালচারাল ইয়ার্ড : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
ফাহিম ফয়সাল : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ এবং কালচারাল ইয়ার্ড-এর উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।