চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য। বাংলা চলচ্চিত্রে তার অভিষেক হয় ২০১৩ সালে এফআই মানিকের ‘এক জবান’ সিনেমা দিয়ে। ‘হিটম্যান’, ‘অন্তর জ্বালা’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। মুক্তি অপেক্ষায় আছে তার অভিনীত আরও কয়েকটি সিনেমা। চলতি বছরের শুরুতে ‘আনন্দ অশ্রু’ সিনেমার শুটিং শেষ করেছেন। এছাড়া আরও কিছু ছবি চুক্তিবদ্ধ আছেন তিনি। বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালে সবাই গৃহবন্দী থাকলেও এই অভিনেতা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যাক্তিগতভাবে ও সমিতির উদ্যোগে অসহায় শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সম্প্রতি কালচারাল ইয়ার্ডের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় ব্যাক্তিজীবন ও চলচ্চিত্রাঙ্গেনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন এই তারকা।
কালচরাল ইয়ার্ড : আপনার কলোনাকালীন সময়টা কীভাবে কাটছে?
জয় চৌধুরী : করোনাকালীন এ সময়ে ঘরে আছি সবার মতোই। তবে অনেকে ঘরে থাকছেন, অনেকেই নিয়ম মানছে না, তারা ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন। এটা মানা খুবই জরুরী। যখন ৪ হাজার লোককে পরীক্ষা করা হতো তখন আমরা পেতাম ৪শ, ৫শ, ৬শ এরকম। মানে ১০ ভাগের এক ভাগ পেতাম আমরা। কিন্তু আমরা এখন পাচ্ছি ৩/৪ হাজার জন। মানে ৫০ ভাগ পাচ্ছি আমরা। সো এখনও আমরা সিরিয়াস না। যখন খুবই কম ছিলো করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, তখন আমরা সিরিয়াস ছিলাম। এখন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেছে, আর আমরা সিরিয়াস না।
এখন আমি ঘরবন্দি অবস্থায় সেফটি মেইনটেইন করে আছি। কিন্তু যেহেতু সংগঠন করতে হয়, সবার কাছে যেতে হয়। আমি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সঙ্গে জড়িত আছি। সমিতির কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আমি, সো বিভিন্ন সোস্যাল ওয়ার্ক করতে হয়। আমরা শিল্পীদের জন্য কাজ করে থাকি। এছাড়া আমি আরেকটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছি। যেমন, ইয়াংস্টার টিম, আমরা মূলত সোস্যাল ওয়ার্ক করে থাকি। আমাদের বাইরে বের হতে হয়। কারণ আমি যদি বের হই তাহলে দু’টা পরিবারের কাছে দু’বেলা খাওয়ার মতো বাজার যাবে। আমি যতটুকু সময় বাইরে যাচ্ছি, তখন সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বের হচ্ছি, বাকি সময়টা আমি বাসায়ই কাটাচ্ছি।
চিত্রনায়ক জয় চৌধুরীর সাক্ষাতকার
⇒ দর্শকদের ভালোবাসার মূল্য দিতে চাই: জয় চৌধুরী
কালচরাল ইয়ার্ড : করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে চলচ্চিত্র কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন।
জয় চৌধুরী : এ সময়ে আপনি ঘরে বসে চলচ্চিত্র থেকে বিনোদন নিতে পারেন। এ মুহর্তে চলচ্চিত্র আর কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। কিন্তু হ্যা, এই মুহুর্তে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িতরা একটা ভূমিকা রাখতে পারে, সেটা হচ্ছে চলচ্চিত্রের শিল্পীরা নানাভাবে আশেপাশের লোকজনকে এ ব্যাপারে সতর্ক করতে পারি। এছাড়া বাসায় বসে সিনেমা দেখে একজন দর্শক বিনোদন নিতে পারে। এটাই এখন চলচ্চিত্রের বড় ভূমিকা। এছাড়া আর কোন ভূমিকা তো দেখছি না।
কালচরাল ইয়ার্ড : করোনাকালীন সময়ে শিল্পী সমিতির কার্যক্রম নিয়ে যদি বলেন।
জয় চৌধুরী : করোনাকালীন আমাদের কার্যক্রমের কথা বলতে গেলে, আমাদের এখন ৪৪৯জন শিল্পী আছেন, আরও ২০০জন সহযোগী আছেন। এদের মধ্যে আমাদের ৩০০ জনের মতো শিল্পী আছেন, যারা অস্বচ্ছল, তাদেরকে আমরা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাজার সদাই থেকে শুরু করে যা যা লাগছে, সেভাবে সাহায্য করছি।
যতদিন এই দুর্যোগ মুহুর্ত থাকবে, ততদিন আমরা তাদের সাহায্য করে যাবো। এছাড়া আমরা ফোনে, অনলাইনে সবার খোঁজ খবর নিচ্ছি। তাদের প্রয়োজনীয় মাস্ক, স্যানিটাইজার দিচ্ছি। করোনাকালে আমরা শিল্পীদের পাশে আছি এবং সবসময় পাশে থাকবো, ইনশাআল্লাহ।
কালচরাল ইয়ার্ড : এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দী হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় কি মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা।
জয় চৌধুরী : হ্যাঁ, অবশ্যই। এই অবসর সময় যারা আমরা বাসায় আছি, এই সময় আমরা আমাদের সময়টাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ করতে পারি। এ সময়ে আমরা ভালো চিন্তা করতে পারি। এ ভালো চিন্তা যেমন কেউ গান করছে, কেউ আবৃত্তি করছে। কেউ নামাজ পড়ছে, ইবাদাত-বন্দেগী করছে। এ সময়ের এই চর্চা পরবর্তী জীবনেও প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি।
কালচরাল ইয়ার্ড : অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
জয় চৌধুরী : অবসর সময়ে আমার ছেলেবেলা খুব মনে পড়ে। যেমন আমার স্কুল ও কলেজ জীবনের নানা সময় স্মৃতিতে ধরা দেয়। আমাদের স্কুল ও কলেজ লাইফের বন্ধুদের নিয়ে আমাদের চ্যাটিং গ্রুপ খোলা আছে, সেখানে আমাদের অনুপস্থিতিগুলো নিয়ে আমরা স্মৃতিচারণ করি। আমাদের সে সময়গুলো ফিরে পেতে খুব মন চায়। সে সময়ের খেলাধুলা, ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো আসলেই মিস করি।
কালচরাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন।
জয় চৌধুরী : সাংস্কৃতিক মানুষ বলতে যদি চলচ্চিত্র অঙ্গনের কথা বলি, সেটা খুব বেশি অনিশ্চিয়তায় ভরা। যেমন, সেটা সারা পৃথিবীতেই। কারণ আগের মতো আবার সব কবে ঠিক হবে, কীভাবে শুটিং হবে, সোস্যাল ডিসটেন্স মেইনটেইন করে আবার হল চালু হবে, সবাই হলে যাবে? সব ঠিক হবে কবে? কোন কিছুই আমরা এখনও জানি না। শুটিং করতে গেলেও তো এটা সোস্যাল ডিসটেন্স মেইনটেইন করে কাজ করা সম্ভব না। আমরা এখনও জানি না আমাদের ভবিষ্যতে কি আছে।