সঙ্গীতশিল্পী পিংকি ছেত্রী। ছোটবেলা থেকে গানের চর্চা করলেও ২০১২ সালে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নাইনের গানের রিয়েলিটি শো ‘পাওয়ার ভয়েস’র মাধ্যমে গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন নেপালি বংশদ্ভুত এই বাংলাদেশি শিল্পী। ইতোমধ্যেই তিনি বেশ কিছু একক ও দ্বৈত গান গেয়েছেন। কণ্ঠ দিয়েছেন চলচ্চিত্রের গানেও। প্লেব্যাক, স্টেজ শো, টেলিভিশন শো এবং মিউজিক ভিডিও নিয়ে তিনি ব্যস্ত সময় পার করতেন। হঠাৎ করে করোনা চলে আসায় সবার মত তারও স্বাভাবিক জীবনের ব্যতয় ঘটে। এ সময় গৃহবন্দী থাকলেও গানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন ও স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা অব্যহত ছিলো। করোনাকালীন সময়ে ব্যাক্তিজীবন ও সঙ্গীতাঙ্গনের নানা দিক নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সাথে কথা বলেন এই গায়িকা।
কালচরাল ইয়ার্ড : গৃহবন্দী সময়ে আপনার পরিবর্তীত জীবনাচরণ সম্পর্কে জানতে চাই।
পিংকি ছেত্রী : এ সময়ের জীবনাচরণ বলতে আসলে, আমরা এ কয়েক মাসে বাসায় থাকতে থাকতে এ প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। বাসায় থাকতে কিছুটা খারাপ লাগছে, আমরা স্বাভাবিকভাবে বের হতে পারছি না। আগের মতো স্টেজ শো করতে পারছি না, মিউজিক ভিডিওর শুটিং করতে পারছি না। তাই এ সময় আমরা ঘরে বসে নিজেদের মতো আমাদের সঙ্গীত চর্চা চালিয়ে যাচ্ছি। পরিবারের সাথে আছি, তাদেরকে সময় দিচ্ছি। সব মিলিয়ে নিজের দৈনন্দিন রুটিনটা অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে।
কালচরাল ইয়ার্ড : করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে সঙ্গীত কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন।
পিংকি ছেত্রী : সঙ্গীত সব সময়ই মানুষের পাশে ছিলো, একটা অনুভূতির জায়গা থেকে। হয়তোবা সেভাবে অর্থনৈতিকভাবে বা অন্যভাবে সঙ্গীত মানুষকে সাহায্য করতে পারে না। তবে মানসিক শান্তি বা অনুভবের জায়গা থেকে সঙ্গীত অবশ্যই কাজ করে। মানুষের অনুভূতিকে জাগ্রত করে। মানুষের মানসিকতাকে আরও স্ট্রং করে। এর চেয়ে বড় ভূমিকা আর হয় না বলেই আমার মনে হয়।
কালচরাল ইয়ার্ড : এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দী হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা।
পিংকি ছেত্রী : এ সময় মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে কিনা সেটা বলতে পারছি না, তবে এ সময়ে মানুষের অনেক পরিবর্তন এসেছে। এতোটা সময় ধরে মানুষ যেহেতু বাসায় ছিলো, তারা এ সময়ে অনেক কিছু নিয়ে ভেবেছে, সৃজনশীল অনেক কিছু করেছে। অবশ্যই অনেক পরিবর্তন ঘটবে।
আর মানুষের বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বিকাশের বিষয় থাকে। এ জন্য আসলে কোন নির্দিষ্ট সময়ের দরকার পরে না। যেভাবে চাইবে, যে কোন সময় সেটার বিকাশ মানুষ ঘটাতে পারে। তবে সময়ের একটা ব্যাপার সব সময়ই থাকে। যেমন, অনেকাংশে সময় মানুষকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
কালচরাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন।
পিংকি ছেত্রী : আমরা যারা এ অঙ্গনে কাজ করি, তাদের জন্য সে সময়টা কঠিন হবে বলে আমি মনে করি। আমরা যারা শিল্পীরা আছি, যারা নাটকে কাজ করি, যারা মিডিয়াতে বিভিন্ন অঙ্গনে আছি, তাদের জন্য করোনা পরবর্তী সময়টা কষ্টকর হবে। তবে অন্যান্য অঙ্গনের কথা সেভাবে আমি বলতে না পারলেও বলতে পারি, আমরা যারা সঙ্গীতাঙ্গনে আছি, আমাদের জন্য এটি অত্যন্ত কঠিন হবে। কারণ আরও দু-এক বছর এই অবস্থা থাকবে। সবাইকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। জনসমাগম সবাই এড়িয়ে চলবে। আর আমাদের কাজই হচ্ছে জনসমাগমের মধ্যে। আমরা কাজই করি জনগনের মাঝখানে। সেক্ষেত্রে এই জায়গার কাজগুলো বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের জন্য সার্ভাইভ করা একটু কঠিন হয়ে যাবে। এরপরও আল্লাহ ভরসা।
সঙ্গীতশিল্পী পিংকি ছেত্রীর আরও খবর
⇒ পিংকি ছেত্রীর নতুন গান ‘চলে গেছো’
কালচরাল ইয়ার্ড : অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
পিংকি ছেত্রী : আমি গানের মানুষ, আমি গান শুনতে পছন্দ করি অবসর সময়ে। আর এ সময়ে স্মৃতিকথা যেটা মনে আসে যদি জানতে চান তাহলে বলবো, আমার ছেলেবেলার কথা খুব মনে আসে এ সময়ে। ছেলেবেলায় আমি আমার দাদীকে হারিয়েছি, নানীকে হারিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমার এটাচমেন্ট অন্য ধরণের ছিলো। সে সময়গুলো মনে পড়ে। এখন এটা খুব বেশি মনে পড়ে এই কারণে যে, আমার বাবা-মা ভাই এক জায়গায়, আর আমি এখন অন্য জায়গায়। আর তাই এ সময় একাকীত্ব ফিল করি বেশি, সেই সময়গুলোও খুব বেশি মনে পড়ে। তবে এ সময়টা আমার জন্য খুব ভালো যাচ্ছে না।
কালচরাল ইয়ার্ড : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
পিংকি ছেত্রী : আপনাদেরও অসংখ্য ধন্যবাদ।