বিশেষ প্রতিবেদক :
চিরবিদ্রোহী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর মহাপ্রয়াণ ঘটেছে। করোনাকালীন এ দু:সহ সময়ে করোনা ভাইরাসেই তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক ও কণ্ঠযোদ্ধা। ছিলেন সাংবাদিক, দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম পথিকৃৎ ও ভাষা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। ভাষা আন্দোলন ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য পেয়েছিলেন একুশে পদক।
শনিবার (২০ জুন) সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৬ বছর। এই সাংস্কৃতিক বটগাছের চিরপ্রয়াণে শোকাহত সাংস্কৃতিক অঙ্গন। শোকাহত হৃদয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারও।
কামাল লোহানীর প্রয়াণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন। শোক জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সারা যাকেরসহ শিল্প, সংস্কৃতি, নাটক ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা।
তাঁর প্রয়াণে শোক জানিয়ে সংস্কৃতি প্রতিমিন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, কামাল লোহানী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। জাতি তাঁর মৃত্যুতে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
কামাল লোহানীর পুরো নাম আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। তিনি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার খান সনতলা গ্রামে ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন।
পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ইতি টানেন একাডেমিক পড়াশুনার। জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। পেশা হিসেবে শুরু করেন সাংবাদিকতা। কিন্তু তিনি মনোনিবেশ করেন সংস্কৃতিচর্চায়। নৃত্যকলা, সঙ্গীত, নাটক ও চলচ্চিত্রে কাজ করেন।
১৯৫৩ সালে প্রথম রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে গ্রেপ্তার হন। মার্ক্সবাদের দৃঢ় অনুসারী ছিলেন তিনি।
১৯৫৫ সালে দৈনিক ‘মিল্লাত’ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতার শুরু করেন। সে বছরই তিনি ন্যাপে যোগ দেন এবং জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এরপর তিনি ‘আজাদ’, ‘দৈনিক জনপদ’, ‘বঙ্গবার্তা’, ‘দৈনিক বাংলার বাণী’তে কাজ করেন।
তিনি ‘বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট’ এর মহাপরিচালক ছিলেন। ১৯৯১ সালে তিনি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শেখেন। ছায়ানট, উদীচী, ক্রান্তিসহ বহু সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ‘ছায়ানট‘ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন ‘ক্রান্তি’ নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আরও খবর
⇒ বিশ্ব নাটকের ‘রুদালী’ ঊষা গাঙ্গুলির চিরপ্রয়াণ
তিনি উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি ছিলেন। তিনি একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও উপদেষ্টা ছিলেন।
মঞ্চ নাটক ‘আলোর পথযাত্রী’ পরিচালনার পাশাপাশি এতে তিনি অভিনয়ও করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকা বেতারের দায়িত্ব নেন।
শনিবার দুপুর থেকে কামাল লোহানীর মরদেহ উদীচী অফিসে রাখা হয়। নিয়ম মেনে সেখানে জানানো হয় শোক ও শ্রদ্ধা। দেশের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সেখানে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার নিজের খান সনতলা গ্রামে তাকে সমাহিত করা হবে।