ঢালিউডে হালের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈকত নাসির। দেশা: দ্য লিডার চলচ্চিত্র নির্মাণ করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এ সিনেমায় শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি নির্মাণ করেছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমা ‘পাষাণ’, ‘হিরো ৪২০’ ও ‘ক্যাসিনো’। এছাড়া বেশ কিছু ওয়েব সিরিজও নির্মাণ করেছেন। তিনি ‘আকবর :ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন ঢাকা’ নামের একটি সিনেমার কাজ শুরু করেছিলেন। করোনার কারণে বন্ধ আছে ছবিটির কাজ। এছাড়া তিনি নির্মাণ করবেন বাংলাদেশের আলোচিত আপকামিং সিনেমা ‘মাসুদ রানা’। করোনাকালীন চলচ্চিত্র ও ওয়েব সিরিজের নানা বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনাকালীন সময় কীভাবে কাটছে? আপনার এ সময়ের জীবনাচরণ ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে চাই।
সৈকত নাসির : করোনা যখন শুরু হলো, মনে হয়েছে যে, যাক কয়েকটা দিন সময় পেলাম, পরিবারকে সময় দেই। তখন কিছুটা এনজয় করছিলাম। কয়েকদিন পর থেকে আসলে বোরিং লাগা শুরু হলো। এরপর লেখালেখি শুরু করি। বেশ কিছু গল্প লিখলাম। কিন্তু ১৫ দিন যাওয়ার পর থেকে আসলে মানসিকভাবে কোন কিছুতে স্থির থাকতে পারছিলাম না। খুব অস্থিরতার মধ্য দিয়েই কাটছিলো। এ রকম জীবনাচরণের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। জীবনবোধ আসলে যেটা-নাথিং স্টেয়েবেল। যেমন আমরা জানি যে, সবারই মৃত্যু আছে বা সব কিছুরই শেষ আছে। তবে ব্যাপারটা আমরা ভুলে যাই। এই জীবনবোধটা মনের মধ্যে চলে এসেছে এ সময়ে।
কালচারাল ইয়ার্ড : আপনারা তিনজন পরিচালক মিলে করেনাকালেই শুরু করছেন ‘ত্রিভুজ’ নামের চলচ্চিত্র। কবে নাগাদ শুরু হচ্ছে এর কাজ?
সৈকত নাসির : আমরা শুটিং শুরু করার চিন্তা করেছিলাম এরমধ্যেই। মাঝখানে শুনলাম যে, এলাকাভিত্তিক লকডাউন শুরু হবে। বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে যায়। এ জন্য আমরা এগুইনি। আমাদের কোরবান ঈদকে টার্গেট নিয়ে কাজ করার কথা ছিলো। তবে এখন এটা ঈদে রিলিজ হবেনা। এরপরও আমরা কাজ শুরু করবো। এখনই ডেট বলতে চাই না। ছবিটি নিয়ে কোন গ্যাদারিং আমরা চাইনা। খুব তাড়াতাড়ি সময়ে আমরা কাজ শুরু করবো।
কালচারাল ইয়ার্ড : এ সিনেমার বিষয়বস্তু নিয়ে যদি বলেন।
সৈকত নাসির : এই গল্পটা লিখেছেন অনন্য মামুন ভাই। তবে এতে আমি আর দীপঙ্কর দা’রও ইনপুট আছে। এই ছবির মূল বিষয় করোনাকালে মানুষের যে জীবনবোধ। এই রিয়েলাইজেশনের উপর ভিত্তি করেই সিনেমাটির গল্প। এ গল্পে দেখানো হবে যে, মানুষ কিভাবে সমস্যাকে কাটিয়ে একটি নতুন সময়ে এসে হাজির হয়।
কালচারাল ইয়ার্ড : আপনি ‘ক্যাসিনো’ সিনেমার কাজ শেষ করলেন। এটি রিলিজের পরিকল্পনার কথা জানতে চাই।
সৈকত নাসির : আমার মনে হচ্ছে না যে, খুব সহসা এই করোনার সময়টা কেটে যাবে। সেটা হচ্ছে যদি কোন ভ্যাকসিন আবিস্কার হয় তাহলে কাটবে। তবে কয়দিন পরে দেখা যাবে মাল্টিপ্লেক্সগুলো খুলে গেছে। আমরা আরও তিন মাসের মতো দেখবো। যদি কোন কিছু না খুলে তখন আমরা ছবিটা অ্যাপসে রিলিজ দেবো। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোন ফেইথফুল অ্যাপস আমরা পাচ্ছি না বাংলাদেশে, যেখানে ছবিটা রিলিজ দিলে পাইরেসি হবে না। পাইরেসি হবে না এমন কোন অ্যাপস নিশ্চিত হলে আমরা সিনেমাটা সেখানে ছেড়ে দেবো।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে চলচ্চিত্র কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
সৈকত নাসির : চলচ্চিত্র নিশ্চয়ই অনেক বড় একটা ব্যাপার। খুব কম সংখ্যক লোক দিয়ে এটি নির্মাণ করা সম্ভব হয় না। ছোট আকারে হযতোবা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সিনেমা করার জন্য এ সময় আমরা খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারবো না। তবে চলচ্চিত্র সবরকমের বিপর্যয়ে মানুষকে একধরণের স্বস্তি দেয়। যে কোন খারাপ সময়ে চলচ্চিত্র ভূমিকা রাখতে পারে। তবে আমাদের নির্মাতা ও কলা-কুশলীদের এ সময়ে চলচ্চিত্র দিয়ে ভূমিকা রাখা সম্ভবপর না।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী কাজের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
সৈকত নাসির : করোনা শুরু করার আগে আমার একটা সিনেমার কাজ শুরু করেছিলাম। ছবিটি হচ্ছে ‘আকবর :ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন ঢাকা। ঢাকার নব্বই দশকের গ্যাং কালচার নিয়ে ছবিটি। ছবিটি মাত্র দুদিন শুটিং করেছিলাম। এটা অনেক বড় একটা প্রজেক্ট। করোনার মাঝে এটা করা আসলেই পসিবল না। আরেকটা হচ্ছে মাসুদ রানা। মাসুদ রানা দুটি হচ্ছে। একটা এমআর-৯, যেটা হলিউডে করছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। আরেকটা সিনেমার ফার্স্ট পার্ট সেটা হচ্ছে মাসুদ রানা। মাসুদ রানা কিভাবে মাসুদ রানা হয়ে উঠেছে সেটা। রাসেল রানাকে নিয়ে চ্যানেল আই ও ইউনিলিভারের যে ছবিটা এটা আমি করছি। করোনা পরবর্তীতে এ কাজগুলো করবো। তবে মাসুদ রানাই প্রথমে শুরু করবো।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী পৃথিবী চলচ্চিত্রের মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন?
সৈকত নাসির : কথায় আছে যে, মানুষের একটা দরজা বন্ধ হয়ে গেলে, অনেকগুলো দরজা খুলে যায়। কিন্তু আমাদের আল্টিমেটলি অনেকগুলো দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের সিনেমা হলগুলো আবার কবে খুলবে, বা আর খুলবে কিনা। আমার মনে হয়, ৭০ ভাগ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাবে। যা কখনই খুলবে না। সেক্ষেত্রে হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মধ্যস্ততাকারী কর্মসংস্থানের বিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য হবে। এতে একটা সুবিধা হবে যে, আগে হলে সিনেমা রিলিজের ক্ষেত্রে মধ্যস্ততাকারী যারা আছে, তাদের কারণে আমরা এক ধরণের প্রতারণার স্বীকার হতাম। হল থেকে প্রাপ্ত মুনাফা আমরা তেমন পেতাম না। এ সময়টা এ ধরণের লোক আউট হয়ে যাবে। যেটা ভালো হবে। আর এ সময় যুক্ত হবে অ্যাপস আর মাল্টিপ্লেক্স। ওটিটিতে সিনেমা রিলিজ হলে যে টাকাটা প্রডিউসার লগ্নি করবে সেটা তারা সহজেই ফেরত পাবে। এ সময় আমরা অন্যকোন দরজা নক করছি সবাই। আশা করি কোন না কোন দরজা খুলে যাবে।
কালচারাল ইয়ার্ড : এই করোনাকালীন অবসর পেয়েছেন অনেক। এ সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
সৈকত নাসির : একটা অনিশ্চিত সময় পার করছি আমরা। আগে আমরা বলতাম দেখা হবে, আর এখন বলি বেঁচে থাকলে দেখা হবে। সময় চেঞ্জ হয়ে গেছে। মানুষ যখন এরকম ভয়ে থাকে, অনিশ্চয়তায় থাকে, এ সময়ে শৈশবটা মনে পড়ে সবচেয়ে বেশি। ওই সময়ে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কাটানো মুহুর্তগুলো ভেসে আসে সবসময়। এ সময় আমার বারবার মনে হচ্ছে, যদি আবারও আমার শৈশবে ফিরে যেতে পারতাম।
কালচারাল ইয়ার্ড : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সৈকত নাসির : আপনাদেরও ধন্যবাদ।