চলচ্চিত্র নির্মাতা নূর ইমরান মিঠু নির্মাণ করেছেন ‘কমলা রকেট’। সিনেমাটি নেটফ্লিক্সসহ বেশ কিছু দেশী ও বিদেশী উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে ও প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বিশিষ্ট নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ সিনেমায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। নির্মাণ করেছেন অসংখ্য টেলিভিশন নাটক। ‘টেলিভিশন’ সিনেমায় ফারুকীর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তার সহকারী পরিচালক ছিলেন অনেক দিন। পরিকল্পনা করছেন নতুন সিনেমা নির্মাণের। করোনাকালে চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতির নানা বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনাকালীন সময় কীভাবে কাটছে। আপনার এ সময়ের জীবনাচরণ ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে চাই।
নূর ইমরান মিঠু : এ সময়টা আমি গ্রামের বাড়িতে কাটাচ্ছি। গ্রামের বাড়িতে ঢাকার মতো অখন্ড অবসর নেই। এখানে আগের মতোই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি আমরা। অনেক দিন এভাবে বাবা মাকে সময় দেওয়া হয় নি। এ সময়ে তাদেরকে সময় দিচ্ছি। আমার ৯ মাস বয়সী একটি বাচ্চা আছে। ওকে সময় দিচ্ছি। এগুলো নিয়ে মোটামুটি ভালোই আছি। এদিকে নতুন সিনেমার চিত্রনাট্য করছি। একটা সিনেমা নিয়ে কথা চলছে। সব ঠিক থাকলে আগামী দুই/তিন মাসের মধ্যে আমরা শুটে যাবো।
ভেবেছিলাম, করোনা পরবর্তীত সময়ে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন ঘটবে। যেমন- লোভ, হিংসা, মিথ্যা কথা, সবকিছুর উপর সুবিধা খোঁজা এবং যে টাকা মানুষের দরকার নাই, সেটা আরও চাওয়ার মানসিকতা। কিন্তু এতদিনেও মানুষের মধ্যে এ ধরণের কোন পরিবর্তন পাই নি আমি। আমার মনে হয়েছে পৃথিবীর শ্বাস নেওয়ার জন্য এই করোনার দরকার ছিলো। কিন্তু এ সময়েও প্রতারণা, ধর্ষণ সবই চলছে। কিন্তু পৃথিবীর একটা পরিবর্তন আসবেই। তবে মানুষের মানসিক কোন পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না।
নির্মাতা নূর ইমরান মিঠুর সাক্ষাতকার
⇒ ধারাবাহিকভাবে সিনেমা বানিয়ে যেতে চাই: মিঠু
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে চলচ্চিত্র ও নাটক কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
নূর ইমরান মিঠু : নাটক ও চলচ্চিত্রের ভূমিকা অনেকটা স্লো পয়জনিংয়ের মত। যেমন ধরেন, বহু বছর পর দৌলতদিয়ার এক পতিতার জানাযা হয়েছে, কবর হয়েছে। এর ব্যবস্থা করেছে গোয়ালন্দের ওসি। সেই ওসির মধ্যে এই উপলব্ধি জন্মেছে যে পতিতা হলেও কিন্তু সে একজন মানুষ। আর এই উপলব্ধি তার মধ্যে এসেছে কোন শিল্প মাধ্যম যেমন নাটক বা চলচ্চিত্র থেকেই। করোনাকালীন এই সময় নাটক, সাহিত্য ও চলচ্চিত্র মানুষের মধ্যে উপলব্ধির জন্ম দিতে পারছে। কারণ এ সব শিল্প মাধ্যমের কাজই হচ্ছে মানুষের মানবিকতা জাগ্রত করা। নাটক ও সিনেমা মানুষের মন জোগাবে না, মন জাগাবে। মানুষের সুকুমার প্রবৃত্তিকে জাগ্রত করবে।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী কাজের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
নূর ইমরান মিঠু : এই মুহুর্তে একটা সিনেমার চিত্রনাট্য করছি। ২-১ মাসের মধ্যে হয়তোবা সব ঠিক থাকলে কাজ করতে পারব। আরও কিছু কাজ নিয়ে কথা চলছে।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী পৃথিবী চলচ্চিত্রের মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন?
নূর ইমরান মিঠু : করোনা মহামারীর পরে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি, সমাজনীতি, দর্শন সব কিছুতে একটা বিশাল পরিবর্তন অবশ্যই আসবে বলে আমার মনে হয়। বিশেষ করে একটি দেশের দুটি প্রধান বিষয় হচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। কিন্তু আমাদের দেশে এই দু’টিরই খুব নাজুক অবস্থা। এখানে শিক্ষার উন্নয়ন মানে জিপিএ-৫ পাওয়া। বিএ, এমএ পাশ করা। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা ডাক্তার হতে চায়, ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, কারণ এগুলোতে অনেক টাকা। এখন মানুষ অভিনেতাও হতে চায়, কারণ এখন অভিনয়েও অনেক টাকা। একজন অভিনেতার টার্গেট হওয়া উচিত আমি অভিনয় করে এমন কিছু করবো, যাতে আমার অভিনয় দেখে মানুষ আরও মানবিক হবে, মানুষ ভালো হবে। একজন লেখক মানুষের জন্য লিখবে, সে মনে করবে না যে অনেক টাকা আয় করবে। একজন বিজ্ঞানীর প্রধান টার্গেট এই না যে, করোনার ঔষধ আবিষ্কার করলে আমি অনেক টাকা পাবো। তার টার্গেট থাকবে করোনার ঔষধ আবিস্কার করলে অনেক লোককে বাঁচানো যাবে।
এখন প্রত্যেকটা শিক্ষার অনুঘটক হয়ে গেছে টাকা। শিক্ষা এমন কিছু গোষ্ঠী তৈরি করেছে, যারা অনেক টাকার মালিক হতে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষকে মানবিক করে তোলা। এছাড়া আমাদের স্বাস্থ্যখাত করোনার পরবর্তী সময়ে আরও উন্নত হবে বলে আমার বিশ্বাস। এই সময়টা মানুষের মধ্যে একটি বোধের জায়গা করে দিবে। মানুষের মধ্যে এই বোধ জাগলে পৃথিবীটা আরও সুন্দর হবে।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা খুব বেশি সচ্ছল না। এ সময় যদি খুব বেশি দিন থাকে, তবে তাদের এ সময় টিকে থাকাটাই মুশকিল হবে। তবে শিল্প-সাহিত্যে একটা বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বাইসাইকেল থিফের মতো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। কিন্তু এই পরবর্তী সময়ে খারাপ সময় যাবে। একটি স্বাভাবিক সময় আসতে সময় লাগবে। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কাজের ক্ষেত্র খুবই কঠিন হবে।
কালচারাল ইয়ার্ড : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
নূর ইমরান মিঠু : আপনাদেরকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।