কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
এক বিশাল শিল্পীজীবন পার করে পরপারে পাড়ি জমালেন কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ভোরে সূত্রাপুরে নিজ বাসায় ৮০ বছর বয়সে মারা যান তিনি। শোক-শ্রদ্ধায় কিংবদন্তি অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক এটিএম শামসুজ্জামানকে চিরবিদায় জানাচ্ছে মানুষ। কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের পক্ষ থেকে এই গুনীর প্রতি শ্রদ্ধা।
গত কয়েক বছরে কিংবদন্তি এই অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে মৃত্যুর গুজব উঠেছে বহুবার। সর্বশেষ মৃত্যুকেও অনেকে গুজব বললেও সব গুজবের উর্দ্ধে উঠে তিনি সত্যি সত্যি চলে গেলেন। এর আগে তাঁর মৃত্যুর গুজব নিয়ে এটিএম নিজেই বলেছিলেন, ‘বেঁচে থাকতেই তোমরা আমাকে যেভাবে মেরে ফেলেছো, অন্তত ২০বার তো হবেই; তাতে আমার ক্ষতি নেই। তবে যেদিন সত্যি সত্যি চলে যাবো সেদিন আর আটকিয়ে রাখতে পারবে না। পারলে সেদিন বেঁচে থাকার গুজবটা ছড়িয়ে দিও।’
নারিন্দার পীর সাহেবের মুরিদ ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিলো পীর সাহেব তাঁর গোসল-জানাজা-দাফন করাবেন। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে সেখানে নেওয়া হয়। জোহরের নামাজের পর নারিন্দায় পীর সাহেবের বাড়িতে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ আসর সূত্রাপুর মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাঁকে জুরাইন কবরস্থানে বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবি’র কবরের পাশে সমাহিত করা হবে।
আর এ জন্য তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর প্রিয় কর্মস্থল এফডিসিতে বা শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে নেওয়া হয়নি বলে জানান তাঁর পরিবার।
তবে এটিএম শামসুজ্জামানকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বহু চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত করছেন প্রিয় শিল্পীকে। শোবিজ ও সঙ্গীতাঙ্গনের বহু মানুষ তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে তাঁর বাসায় ভিড় জমান।
এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনীতি ও সাংষ্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই মহান শিল্পীর প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস), ডিরেক্টরস গিল্ডসহ নানা সংগঠন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভেসে বেড়াচ্ছে শোক-শ্রদ্ধা
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী রফিকুল আলম এই কিংবদন্তি সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘শুধু একজন অভিনেতা হিসেবে নয়, তিনি রাজনৈতিকভাবেও সচেতন একজন মানুষ ছিলেন। বিশেষত বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। যখন রাজপথে অগ্নিসংযোগের রাজনীতি হচ্ছিল তখন তিনি টানা ৯৩ দিন রাজপথে ছিলেন। তাই তার মতো একজন পরিপূর্ণ মানুষ পাওয়া সত্যিই কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘শুধু অভিনেতা নন, আমরা একজন আপাদমস্তক সংস্কৃতিকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টকেও হারালাম।’
স্মৃতিকাতর অভিনেত্রী আনোয়ারা বলেন, ‘উনি সাধারণত ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। খারাপ মানুষের চরিত্রে। বাস্তবে অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। উনার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। তা বলে শেষ করা যাবে না। উনার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।’
এটিএম এর সঙ্গে বহু নাটকে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। তিনি এই অভিনেতার মৃত্যুর গুজব প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত সত্যটা হলো। এটিএম ভাই চলে গেলেন। আর হলো না দেখা। কতো সময়, কতো স্মৃতি আমাদের। আবেগতাড়িত হচ্ছি খুব। অপার শ্রদ্ধা। শান্তিতে থাকুন আপন মানুষ।’
একুশে পদক ও পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধূরি পরিচালিত বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন। প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন নারায়ণ ঘোষ মিতার পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য।
১৯৬৫ সালের দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করেন তিনি। এরপরে কখনও প্রধান চরিত্র, কখনও কৌতুক অভিনেতা, আবার কখনও খলনায়ক– প্রতিটি জায়গায়ই রেখেছেন তাঁর অভিনয়ের স্বাক্ষর।
উদয়ন চৌধূরি ছাড়াও কাজী জহির, খান আতাউর রহমান, সুভাষ দত্তের সহকারী পরিচালক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে শাবনূর-রিয়াজ জুটিকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন খ্যাতিমান এই চলচ্চিত্রকার। ছবির নাম ‘এবাদত’।