রোমান কবির
বাংলা চলচ্চিত্রের একজন কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। ছয় দশকের এক বিশাল অভিনয় জীবন পাড়ি দিয়েছেন তিনি। মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি শিল্পী তিনি। তিনি শুধু অভিনেতাই নন, একজন সফল গল্পকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা ও পরিচালক।
এটিএম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছেন। পৈতৃক বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ি। ঢাকার সূত্রাপুর দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে পিতার রেখে যাওয়া বাড়িতে শেষ বয়ষ পর্যন্ত বসবাস করেছেন। ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ৮০ বছর বয়সে চলে গেলেন চিরতরে।
এক বিশাল শিল্পীজীবন পার করে গেছেন তিনি। গত কয়েক বছরে কিংবদন্তি এই অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে মৃত্যুর গুজব উঠেছে বহুবার। তাঁর মৃত্যুর গুজব নিয়ে এটিএম নিজেই বলেছিলেন, ‘বেঁচে থাকতেই তোমরা আমাকে যেভাবে মেরে ফেলেছো, অন্তত ২০বার তো হবেই; তাতে আমার ক্ষতি নেই। তবে যেদিন সত্যি সত্যি চলে যাবো সেদিন আর আটকিয়ে রাখতে পারবে না। পারলে সেদিন বেঁচে থাকার গুজবটা ছড়িয়ে দিও।’
অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের বাবা নূরুজ্জামান ও মাতা নুরুন্নেসা বেগম। বাবা ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
তিনি ঢাকার পগোজ স্কুলে, ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুলে ও রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।
এটিএম শামসুজ্জামান অভিনয় জীবন শুরু করেন মঞ্চে। তবে থিতু হন চলচ্চিত্রজীবনে। প্রায় শ’খানেক ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। চলচ্চিত্রে শুরুটা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। এরপর খল অভিনেতা হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি লিখেছেন চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য।
বর্ষিয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের আরও খবর
⇒ শোক-শ্রদ্ধায় কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের চিরবিদায়
⇒ এটিএম শামসুজ্জামানের হাতে বুলুবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা
নারায়ণ ঘোষ মিতা নির্মিত ‘জলছবি’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এ ছবিতে তিনি প্রথম চিত্রনাট্যকার হিসেবেও আত্নপ্রকাশ করেন। চলচ্চিত্রের জন্য। এরপর প্রায় শতাধিক সিনেমার কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। ১৯৬১ সালে উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশের মেধাবী চলচ্চিত্র নির্মাতা খান আতাউর রহমান, কাজী জহির ও সুভাষ দত্তের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ২০০৯ সালে শাবনূর-রিয়াজ জুটিকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন খ্যাতিমান এই চলচ্চিত্রকার। ছবির নাম ‘এবাদত’।
শেষ জীবনে বহু টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গেছেন।
১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেন নির্মিত ‘নয়নমণি’ সিনেমায় খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিচিতি পান।
এটিএম শামসুজ্জামান অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘অবুঝ মন’, ‘বড় বউ’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘নয়নমনি’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’, ‘ভুল যখন ভাঙলো’, ‘চোখের জলে’, ‘শ্লোগান’, ‘স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা’, ‘সংগ্রাম’, ‘দায়ী কে?’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘লাঠিয়াল’, ‘অভাগী’, , ‘পুরস্কার’, ‘প্রিন্সেস টিনা খান’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘লাল কাজল’, ‘রামের সুমতি’, ‘ঢাকা ৮৬’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘অজান্তে’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ’, ‘আধিয়ার’, ‘শাস্তি’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘হাজার বছর ধরে’ ‘তোমার জন্য পাগল’, ‘জামাই শ্বশুর’ , ‘আমার স্বপ্ন তুমি’, ‘দাদীমা’, ‘আয়না’, ‘মন বসেনা পড়ার টেবিলে’, ‘এবাদাত’সহ অসংখ্য।
একুশে পদক ও পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভুষিত হন এই বর্ষিয়ান অভিনেতা।