কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’–ঐতিহাসিক ৭ মার্চ নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণের লেখা বিখ্যাত কবিতা। সেই বিখ্যাত কবিতা থেকে এবার গান হচ্ছে। ২০২১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট এ উপলক্ষে একটি অনলাইন লাইভের আয়োজন করে। এই লাইভে কবি নিজে উপস্থিত থেকে গানটির উদ্বোধন করেছিলেন।
শাহীন সরদারের সুর সংযোজন ও সংগীতায়োজনে পৃথক দুটি ট্র্যাকে এ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আবু বকর সিদ্দিক ও ঐশিকা নদী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে নির্মলেন্দু গুণের লেখা কবিতা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ৫০তম বর্ষে গানে রুপান্তরিত হলো।
৭ মার্চ সংক্রান্ত আরও খবর
⇒ ৭ মার্চের ভাষণের অডিও-ভিজ্যুয়াল সংরক্ষণের ইতিহাস
⇒ অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গানের উদ্বোধনের লাইভ অনুষ্ঠানে কবি নাসির আহমেদ, শিল্পী সংগঠক মাহমুদ সেলিম, কবি সুমন সরদার, শিল্পী বিশ্বজিৎ রায়, আবৃত্তিশিল্পী বেলায়েত হোসেনসহ গণ্যমান্য কিছু ব্যক্তি অংশ নেবেন।
জানা যায়, মুজিববর্ষে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বেশ কয়েকটি গানে এর আগে শাহীন সরদার সুরারোপ করেছেন।
নির্মলেন্দু গুণের লেখা কবিতা:
‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে-
‘কখন আসবে কবি?’ ‘কখন আসবে কবি?’
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে- ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।
তাহলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তাহলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে,
ফুলের বাগানে ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি?
জানি, সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে
হয়েছে উদ্যত কালো হাত।
তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ…।
হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে,- আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।
সেদিন এই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর;
না পার্ক না ফুলের বাগান,- এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখণ্ড অখণ্ড আকাশ যে রকম, সে রকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু-ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়।
আমাদের স্বাধীনতাপ্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশে ছিল
এই ধু-ধু মাঠের সবুজে।
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে এই মাঠে ছুটে এসেছিল
কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক, লাঙল জোয়াল কাঁধে
এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে
এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক, হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে
এসেছিল মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা,
ভবঘুরে আর তোমাদের মতো শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে।
একটি কবিতা পড়া হবে তার জন্য সে কী ব্যাকুল প্রতীক্ষা মানুষের।
‘কখন আসবে কবি?’ ‘কখন আসবে কবি?’
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা,
জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা- ;
কে রোধে তাঁহার বজ্র কণ্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শুনলেন তাঁর
অমর কবিতাখানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
সেই থেকে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আমাদের।