কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি ও নিপীড়নকারীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল সারা দেশ। এ ঝড় বইছে সংস্কৃতি অঙ্গনেও। সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকা ও শিল্পীরা ঘৃণ্য এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মানবন্ধন থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রতিবাদ জারি রেখেছেন তারা।
জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান তাঁর ফেসবুক পেজে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন,
‘রোজিনা সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন, সিঁধ কাটতে নয়। দেখতে পেলাম হেনস্তার শিকার হয়ে তিনি মাটিতে পড়ে যাচ্ছেন। এই আমাদের আচরণ! এই আমাদের সভ্যতা! রোজিনার গলার ওপর চেপে বসা আঙুলগুলো গভীর অর্থময় এক প্রতীকের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে, আঙুলগুলো কোনো ব্যক্তির গলায় নয়, বরং বাংলাদেশের বাক্স্বাধীনতার কণ্ঠনালিতে চেপে বসেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই এমন অশুভ একটি ঘটনা আমাদের দেখতে হলো? রোজিনাকে তাঁর পরিবারের কাছে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
‘কালকের ঘটনাটার মাঝে একধরনের মাস্তানির ভাব আছে! সাংবাদিক সমাজের উচিত এই বাড়াবাড়ি বা মাস্তানির ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের সবার বিচার নিশ্চিত করতে সোচ্চার থাকা এবং রুটিন করে আগামী এক মাস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ের দুর্নীতি নিয়ে আরও বেশি বেশি রিপোর্ট করা! যা তারা থামাতে চেয়েছে, তাকেই আরও জ্বালিয়ে দেওয়াই হবে আসল উত্তর!’
নাট্যনির্মাতা আশফাক নিপুন
এর মধ্যে যারাই বলছে, বলবে “দেশটাকে শেষ করে দিল আমলারা”, “দেশ তো চালায় আসলে আমলারা”—একদম চোখ বন্ধ করে ধরে নেবেন সব কটা টাউট! দেশে যখন উন্নয়নের নহর বয়ে যায়, তখন কিন্তু কেউ বলে না “দেশ তো চালায় আমলারা।” পদ্মা সেতুর বেলায় কিন্তু কেউ বলে না “দেশ তো চালায় আমলারা।” বড় বড় ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলের বেলায় কেউ বলে না “দেশ তো চালায় আমলারা।” উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পা দেওয়ার কারণ হিসেবে কেউ বলে না “দেশ তো চালায় আমলারা।” শুধু কোনো ঝামেলা পাকলেই রব শুরু হয়ে যায়, এই টাউটদের “দেশ তো চালায় আমলারা, দেশটাকে শেষ করে দিল আমলারা।” দেশ যদি আমলারাই চালায়, দেশটা যদি আমলারাই শেষ করে দেয়, তাহলে ১০০%+ ভোটে নির্বাচিত সরকার আর জনপ্রতিনিধিরা আসলে কী? এই আমলাদের কামলা?
এফএফএসবি সাধারণ সম্পাদক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা বেলায়াত হোসেন মামুন
হাতকড়া থাকার কথা ছিল দুর্বৃত্ত আমলা ও সরকারি কর্মচারীদের হাতে। কিন্তু এই আমলানির্ভর রাজনীতির আমলে তা তো হওয়ার নয়। তাই এই সময়ে যে জবাবদিহি চাইবে, তার ঠিকানা হবে কারাগার। এই দেশের এখন গভীর অসুখের কাল। দেশ অসুস্থ।
গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ
বাঘিনী, এই মুহূর্তে তোমার মুক্তি চাই না। তুমি একটি উপলক্ষ মাত্র। তোমার মাধ্যমেই স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিপরায়ণ মন্ত্রী-আমলা ধ্বংস হবে, মাথা উঁচু করে থাকো আর চিৎকার করে গাও “তোমরা বন্ধ ঘরের বন্ধনীতে করছ বিশ্বগ্রাস, আর ত্রাস দেখিয়েই করবে ভাবছ বিধির শক্তি হ্রাস। সেই ভয়-দেখানো ভূতের মোরা করব সর্বনাশ।
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী
করোনার কারণে আমরা যে মুখোশ পরা শুরু করেছি, সেই অভ্যাসটা থাকুক। কিন্তু আসুন, আসল মুখোশটা খুলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াই। দৃপ্ত কণ্ঠে আওয়াজ তুলি, “রোজিনা ইসলামের মুক্তি চাই”।
চলচ্চিত্র পরিচালক দীপংকর দীপন লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ সেই কবে লিখে গেছেন, “তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।”’ অভিনেত্রী তানভীন সুইটি লিখেছেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর নিপীড়ন ও তাঁকে আটকে রাখার তীব্র নিন্দা জানাই। দুর্নীতির অবসান চাই।’
কণ্ঠশিল্পী বেলাল খান লিখেছেন, ‘সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে, রোজিনাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। যাতে ভবিষ্যতে কেউ আমলাদের দুর্নীতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে সাহস না করে! রোজিনা ইসলামের জামিন বাতিল, কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই দেশে সৎ সাহসী রিপোর্টারের, অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ের জন্য এভাবেই পুরস্কৃত হতে হয়!’
এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে এক দীর্ঘ স্ট্যটাসে টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আবদুন নূর তুষার জানিয়েছেন: …এসব প্রশ্ন করে কোন লাভ নেই। কারণ এই ঘটনা প্রমান করছে যে এই সমাজে চোরের মায়ের বড় গলা ছাড়া আর কোন গলা স্বাধীন না। গলা চিপা বা গলা পরীক্ষা যেটাই করা হোক না কেন, ঘাড় বন্ধক দিয়ে মাথানিচু করা সমাজে এটাই ঘটবে। আমরা কেবল বলতে পারি….. নিন্দা করতে পারি … হতাশ হয়ে বলতে পারি- ছি! ছি! ছি!
এছাড়া এঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, আবু শাহেদ ইমন, দীপু হাজরা, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাম, মেহের আফরোজ শাওন, ভাবনাসহ অনেকে।