কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক :
বাংলা চলচ্চিত্রের মুকুটহীন নবাব আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন বাংলা সিনেমার এই কিংবদন্তি পুরুষ। মৃত্যুবার্ষিকীতে কালচারাল ইয়ার্ড পরিবার তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।
রূপালী পর্দার সোনালী দিনের নায়ক আনোয়ার হোসেনের ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই কেটেছে শৈশব-কৈশোর। ১৯৫১ সালে জামালপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে আইএ করেন তিনি। স্কুলজীবন থেকেই নাটকে অভিনয়ের হাতেখড়ি। প্রথম অভিনয় করেন আসকার ইবনে সাইকের ‘পদক্ষেপ’ নাটকে। ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন।
ঢাকায় এসেও তিনি মঞ্চ নাটকে কাজ শুরু করেন। আনোয়ার হোসেন ১৯৫৮ সালে ‘তোমার আমার’ সিনেমার মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিনয়জীবন শুরু করেন।
দীর্ঘ ৫২ বছরের অভিনয় জীবন তাঁর। পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে খান আতাউর রহমানের ‘নবাব সিরাজউদ্দোলা’ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের মাধ্যমে যেমন মুকুটহীন নবাবের উপাধী পেয়েছেন। পরবর্তীতে আবার জহির রায়হানের কালজয়ী সিনেমা ‘জীবন থেকে নেয়া’য় বিপ্লবী ছাত্রনেতার ভূমিকায় অভিনয় করে খ্যাতিমান হয়েছেন। এছাড়া গ্রামের মজুর শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে অভিনয় প্রতিভায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, লোককাহিনীভিত্তিক, নাট্যধর্মী, পারিবারিক মেলোড্রামা, পোশাকি ফ্যান্টাসি, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, বক্তব্যধর্মীসহ বিভিন্ন ধরনের সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
তার ও সুমিতা দেবী অভিনীত দুই দিগন্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ঢাকার বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন হয়েছিল। ‘উজালা’ তার অভিনীত প্রথম উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র। এটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। ১৯৬৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেন।
আনোয়ার হোসেন অভিনীত অসংখ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে বেশ কিছু ছবি কালজয়ী হয়ে আছে। যেগুলোর আবেদন কখনই কমার নয়। এগুলোর মধ্যে আছে নবাব সিরাজউদ্দৌলা, কাঁচের দেয়াল, জীবন থেকে নেয়া, ধীরে বহে মেঘনা, রূপালী সৈকতে, নয়নমণি, গোলাপী এখন ট্রেনে, সূর্যস্নান, লাঠিয়াল, সূর্য সংগ্রাম, নাচঘর, দুই দিগন্ত, শহীদ তিতুমীর, ঈশা খাঁসহ অসংখ্য ছবি। ‘সূর্য সংগ্রাম’ নায়ক হিসেবে আনোয়ার হোসেনের শেষ ছবি।
কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের আরও খবর
⇒ বাংলা সিনেমার মুকুটহীন নবাবের জন্মদিন
১৯৭৫ সালে ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে প্রথমবারের মত আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ১৯৭৮ সালে তিনি আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সরকার চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে একুশে পদক প্রদান করেন। অভিনেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই পুরস্কার পান। তিনি ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। এছাড়াও বাচসাস, পাকিস্তানের নিগারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গুণী এ অভিনয়শিল্পী।
পারিবারিক জীবনে তিনি নাসিমা খানমকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির ৪ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান রয়েছে।