কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক :
না ফেরার দেশে চলে গেলেন বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার, লেখক, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. ইনামুল হক । সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার জামাতা লিটু আনাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গুনী এই মানুষটির মৃত্যুতে কালচারাল ইয়ার্ড পরিবার গভীর শোক ও তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনীর মোটবীতে জন্মগ্রহণ করেন ড. ইনামুল হক। ফেনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকার নটর ডেম কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএইচডি করেছিলেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ৪৩ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। দীর্ঘ এই শিক্ষকতার ক্যারিয়ারে ১৫ বছর রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ২ বছর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাকে ট্রাকে পথনাটক করেন। ইতোমধ্যে তাঁর ১৮টি নাটক বিভিন্ন নাট্যপত্রে, বিশেষ ম্যাগাজিনে এবং বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
ইনামুল হকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে নির্জন সৈকতে, গৃহবাসী, মুক্তিযুদ্ধ নাটকসমগ্র, স্ট্রিন্ডবার্গ এর দু’টো নাটক, মহাকালের ঘোর সওয়ার, বাংলা আমার বাংলা অন্যতম।
কলেজে থাকা অবস্থায় প্রথম তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন। তার অভিনীত প্রথম শঞ্চ নাটক ‘ভাড়াটে চাই’। ১৯৬৮ সালে বুয়েট ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু হয় ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়’র, যার প্রতিষ্ঠিতা সদস্য ছিলেন তিনি। এই দলের হয়ে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’, ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘নূরুল দীনের সারা জীবন’সহ আরও অনেক নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন।
১৯৯৫ সালের তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’। এই দলের হয়ে তিনি ‘জনতার রঙ্গশালা’, ‘সরমা’সহ আরও বহু নাটকে অভিনয় করেছিলেন।
ড. ইনামুল হক সম্পর্কিত আরও খবর
⇒ ড. ইনামুল হকের মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া
তাঁর লেখা প্রথম মঞ্চ নাটক ‘বিবাহ উৎসব’। এরপর আরও বেশ কিছু নাটক লিখেছিলেন তিনি।
ড. ইনামুল হক ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইন্সটিটিউট অব ড্রামা’। তিনি সেখানকার অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তার অভিনীত প্রথম টিভি নাটক ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’। ‘উড়ে যায় বক পক্ষী’, ‘কাজী সাহেবের তিন পুত্র’, ‘দূরের বাড়ি কাছের মানুষ’, ‘অয়োময়’, ‘এইসব দিনরাত্রি’ সহ অসংখ্য টেলিভিশন নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন।
ড. ইনামুল হকের লেখা প্রথম টিভি নাটক ‘অনেকদিনের একদিন’। এরপর প্রায় ৬০টি টেলিভিশন নাটক লিখেছিলেন । তার লেখা আলোচিত টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সেইসব দিনগুলি’, ‘নির্জন সৈকতে’ ও ‘কে বা আপন কে বা পর’। এছাড়াও দেশ স্বাধীনের পর বিটিভির প্রথম নাটক ‘বাংলা আমার’ এবং একুশের প্রথম নাটক ‘মালা একশত মালঞ্চের’র তারই লেখা ছিলো।
মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে বৃহন্নলা, প্রিয়তমেষু, আমার বন্ধু রাশেদ, রূপ কথার গল্প, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী অন্যতম।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদকসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভুষিত হয়েছেন।
পারিবারিক জীবনে তিনি নাট্যব্যক্তিত্ব লাকী ইনামকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই মেয়ে হৃদি হক আর প্রৈতি হক। দুই জামাতা অভিনেতা লিটু আনাম ও সাজু খাদেম।