কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক :
বাংলাদেশের মেধাবী চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত প্রথম ইংরেজি ভাষার সিনেমা ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ এবার প্রদর্শিত হলো কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪৩তম আসরে। এ আসরে পরিচালক ফারুকী নিজে উপস্থিত থেকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেন।
রবিবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ ছবিটি দেখানো হয়। বহুদিন পর অনলাইনের বদলে কোনো উৎসবে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন নির্মাতা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উৎসবের বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, বিশেষ প্রদর্শনীতে আমাদের ছবি ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ উপস্থাপন করার ঠিক আগে কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। অনলাইন জীবন থেকে বাস্তব জগতে ফিরে খুব ভালো লাগছে!
এ উৎসবে ফারুকীর সঙ্গে উপস্থিত আছেন ছবির সঙ্গীত পরিচালক ও সহ-প্রযোজক এ আর রহমান এবং ছবির প্রধান নারী চরিত্র অস্ট্রেলিয়ান মেগান মিচেল।
বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন দেশের মোট ১৬টি সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী হচ্ছে উৎসবে। এর মধ্যে ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ অন্যতম।
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে পুরনো চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যে একটি কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ২৬ নভেম্বর শুরু হওয়া উৎসব ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে ৬৩টি দেশের মোট ৯৮টি সিনেমা প্রদর্শিত হবে। এই উৎসবে জুরি প্রধান হিসেবে আছেন প্রখ্যাত নির্মাতা এমির কুস্তরিকা।
বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী ও অস্ট্রেলিয়ার অভিনেত্রী মেগান মিশেল এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা তাহসান খান, ভারতের ঈশা চোপড়া, বিক্রম কোচার এবং কিরণ খোজের মতো তারকা অভিনেতারা এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা ও সহপ্রযোজনা করেছেন উপমহাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ এ আর রহমান। এছাড়া প্রযোজক হিসেবে আরও যুক্ত আছেন ফরিদুর রেজা সাগর, অঞ্জন চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশা, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী ও আমেরিকান প্রযোজক শ্রীহরি সাঠে। বঙ্গবিডি ছবিটির অন্যতম কো-প্রডিউসার।
এছাড়া সিনেমাটির চিত্রনাট্য একাধিক ফেস্টিভ্যালে ফান্ড জিতে নেয়। ২০১৪ সালে বুসান ফিল্ম ফেস্টিভালে এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে নির্বাচিত হয় ছবিটির চিত্রনাট্য।
‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ সিনেমার আরও খবর
⇒ ফারুকী-নওয়াজউদ্দিনের সাথে তাহসান
⇒ ভারতীয় প্রযোজক ও অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী নিয়ে ফারুকীর সিনেমা
এছাড়া ছবিটি ভারতের এনএফডিসি আয়োজিত ফিল্ম বাজারে শ্রেষ্ঠ প্রজেক্টের পুরস্কার লাভ করে। মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা এবং এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড-এর যৌথ উদ্যোগে দেয়া অ্যাপসা ফিল্ম ফান্ডও পায় ছবিটি।
নির্মাতা হিসেবে নিজের ব্যক্তিগত কিছু অনুভূতিকে সিনেমায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে জানিয়ে নির্মাতা ফারুকী বলেন, ‘যা মানসিক আঘাত আমার পৃথিবী নিয়ে ভাবনার এবং দেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমার জন্ম হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চল নোয়াখালীতে। এই এলাকার মানুষদের নিয়ে বহু বছর ধরেই ট্রল করা হয়। তাই, খুব কম বয়সেই আমি বুঝে গেছি, এই ট্রলের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে! কোন এলাকা থেকে এসেছি তা নিয়ে মিথ্যা বলা শুরু করলাম। আমার স্কুলের কোনো বন্ধুকে বাড়িতে আনতাম না, তারা যেন আমার বাবা মায়ের আঞ্চলিক ভাষা শুনে আমার এলাকা সম্পর্কে ধারণা করতে না পারে। বড় হতে হতে বুঝতে পেরেছি এটা মনের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে, কীভাবে আমাদের হৃদয়ে একটি শূন্যস্থান তৈরি করে দেয় যখন আমরা নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে পারি না, নিজেকে গ্রহণ করতে পারিনা, নিজের পরিচয় নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারি না।
ফারুকী বলেন, ছোটবেলার এই অস্তিত্বহীনতার বেদনা ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ -এর কেন্দ্রীয় চরিত্র অনুভব করে। এই বিষয়টি আমার কাজে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।