কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক :
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক হায়দার রিজভী পোল্যান্ডের লজ ফিল্ম স্কুল থেকে সিনেমার উপর গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন সেখানেই চলচ্চিত্র নির্মাণযজ্ঞে নেমে পড়েন। আশির দশকেই নির্মাণ করেন দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘প্রাসিয়ান অফিসার’ এবং ‘নার্সারি রাইমস’। গুনী এই নির্মাতার অসাধারণ সিনেমা দুটি এই প্রজন্মের দর্শকদের জন্য প্রদর্শিত হয়। পালিত হয় তাঁকে নিয়ে লেখা রাজীব আহসান সম্পাদিত বই ‘হায়দার রিজভী: সিনেলোকের পরমপুরুষ’ এর প্রকাশনা উৎসব।
শনিবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এক প্রকাশনা উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রকাশ হয় গুনী চলচ্চিত্র ব্যাক্তিত্বকে নিয়ে লেখা তথ্যসমৃদ্ধ বইটি। বইটি প্রকাশ করে প্যান্ডোরাস বক্স। প্রকাশনা উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
এই প্রকাশনা উৎসব ও সিনেমা প্রদর্শনী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে বসে এক মিলনমেলা। মিলনমেলা দেশের প্রতিথযশা সাংবাদিক, চলচিচত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের কর্মী থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষেরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মফিদুল হক, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, অমিতাভ রেজা চৌধুরী প্রমুখ।
হায়দার রিজভী বহুদিন পর বাংলায় একটি সিনেমা নির্মাণ করতে যাচ্ছেন এমন খবরে খুশি চলচ্চিত্রজনরা। তাঁর হায়দার রিজভীর এই সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানান।
তারা বলেন, হায়দার রিজভী সিনেমা নির্মাণ করছেন আবারও এর মাধ্যমে আমারা এতদিন যে বঞ্চিত ছিলাম তা থেকে মুক্তি পাবো। বাংলা সিনেমা নির্মাণের জন্য হায়দার রিজভীর প্রতি সাধুবাদ জানিয়ে নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করেন।
একনজরে হায়দার রিজভী
১৯৪৪ সালে কিশোরগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন হায়দার রিজভী। ১৯৬২ সালে লন্ডনে যান বাবার ইচ্ছায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি পড়তে। কিন্তু চলচ্চিত্রপ্রেমী হায়দার রিজভী ১৯৬৬ সালে ‘অ্যাক্টরস স্টুডিও’ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন অভিনয়ের উপর। এরপর দুই বছর যুক্তরাজ্যে পেশাদারি মঞ্চনাটকে কাজ করে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। তৎকালীন পিটিভির ঢাকা কেন্দ্রে সহকারী প্রযোজক হিসেবে যোগদান করেন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে টেলিভিশনের পাশ ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ স্থানে যাতায়াতে নানাভাবে সহায়তা করতেন তিনি। তিনি পাকিস্তানি মিলিটারির নৃশংসতার তথ্য বিভিন্ন বিদেশি মিডিয়াতে গোপনে সরবরাহ করতেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিটিভিতে প্রযোজক পদে উন্নীত হন তিনি।
এর পরের বছর পোল্যান্ডের লজ ফিল্ম স্কুল-এ বৃত্তি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের উপর পড়াশুনা করতে যান। ১৯৮৪ সালে বিশ্বখ্যাত নির্মাতা আন্দ্রে ভাইদা এবং লার্স ভন তিয়ার-এর প্রধান সহকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। তিনি পোল্যান্ডে একাধিক প্রামাণ্যচিত্র, কাহিনীচিত্র এবং টিভি সিরিজ নির্মাণ করেছেন।
২০০৫ সালে দেশে ফিরে বৈশাখী টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা সিইও হিসেবে যোগদান করেন। ২০১২ সাল থেকে তিনি চলচ্চিত্র শিক্ষকতা শুরু করেন। বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিষয়ে পাঠদান করান তিনি। দেশে বিদেশে তাঁর বহু ছাত্র-ছাত্রী চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত আছেন।