কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
তাঁকে বলা হতো বাংলা নাটকের গ্যালিলিও। অসংখ্যবার মঞ্চে তিনি হাজির হয়েছিলেন ব্রেটল ব্রেখটের ‘দ্য লাইফ অব গ্যালিলিও গ্যালিলি’ অবলম্বনে নাটকের গ্যালিলিও চরিত্র দিয়ে। হয়ে উঠেছিলেন মঞ্চ নাটকের প্রিয় মুখ।এরপর তিনি টেলিভিশন নাটকের অভিনয়েও নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। জনপ্রিয় নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের দুটি নাটকের দুটি জনপ্রিয় চরিত্র নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। ফরিদ মামা আর বড় চাচা হয়ে দর্শক হৃদয়ে আসন গেড়েছেন।
আলী যাকের। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় নাটকে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। মহা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। যুদ্ধ ও নাটক চালিয়ে গেছেন একই সাথে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুনীর চৌধুরীর বিখ্যাত নাটক ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। এরপর একের পর এক কালজয়ী নাটকে অভিনয় করেছেন। তিনি অনেক নাট্যকর্মীদের শিক্ষক হিসেবে অভিনয়ের দিকপাল হয়ে আছেন।
তাঁর অভিনীত বিখ্যাত মঞ্চ নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’, ‘বাকী ইতিহাস’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে’, ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘ম্যাকবেথ’, ‘নূরুলদীনের সারাজীবন’, ‘গ্যালিলিও’সহ অসংখ্য। নূরুলদীন, গ্যালিলিও ও দেওয়ান গাজীর মতো বিখ্যাত চরিত্রে ধারণ করেছিলেন তিনি। শেক্সপিয়ারের কিং লিয়ার চরিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছে থাকলেও হয়নি।
আলী যাকের মঞ্চে নির্দেশনাও দিয়েছেন। টেলিভিশন নাটকেও বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আলী যাকের। হুমায়ূন আহমেদের নাটক ‘আজ রবিবার’র বড় চাচা ও ‘বহুব্রীহি’ নাটকের ফরিদ মামা চরিত্র এখনও জনপ্রিয়তায় সেরা। আলী যাকের অভিনীত জনপ্রিয় আরও নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘অচিনবৃক্ষ’, ‘আইসক্রিম’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘পাথর সময়’, ‘গণি মিয়ার পাথর’সহ অনেক। অভিনয় ও নির্দেশনা ছাড়াও লেখক হিসেবেও আলী যাকের ছিলেন সমাদৃত।
তিনি খুব কমসংখ্যক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু সে সব চরিত্রেগুলোও কালজয়ী হয়ে আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আগামী’, ‘নদীর নাম মধুমতী’, ‘লালসালু’ ও ‘রাবেয়া’।
দেশের বিজ্ঞাপন জগতের একজন মহীরুহ তিনি। এশিয়াটিকের মতো বিরাট বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্ণধার ছিলেন তিনি।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর রতনপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবু তাহের ও মায়ের নাম রিজিয়া তাহের। স্ত্রী নাট্যজন সারা যাকের, ছেলে অভিনেতা ইরেশ যাকের ও কন্যা শ্রিয়া সর্বজয়া। বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর ২ বছর অতিক্রান্ত হলো এ বছর।
আলী যাকের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সদস্য ছিলেন। ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি। ১৯৯৯ সালে শিল্পকলায় অবদানের জন্য পেয়েছিলেন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু হত্যার বেদনাবিধুর আখ্যান ‘জনকের অনন্তযাত্রা’