কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের অন্যতম কিংবদন্তি শিল্পী শাফিন আহমেদ চলে গেলেন। রেখে গেলেন বহু গুনগ্রাহী, কাঁদিয়ে গেলেন সঙ্গীতাঙ্গনসহ অসংখ্য সঙ্গীতপ্রেমী মানুষকে। গত ২৫ জুলাই লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান এই সঙ্গীত কিংবদন্তি। মঙ্গলবার ৩০ জুলাই বিকেলে দেশে আনা হয় শাফিনের মরদেহ। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেও তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন সঙ্গীতাঙ্গনের তার সহকর্মী ও সহযোদ্ধাসহ সঙ্গীতপ্রেমী শত শত মানুষ।
এর আগে দুপুরে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় গুলশান আজাদ মসজিদে। সেখানে বাদ জোহর জানাজা শেষে নেওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। বাবা সংগীতঙ্গ কমল দাশগুপ্তর কবরে চিরন্দ্রিায় শায়িত হলেন তিনি। শাফিন আহমেদের মা কিংবদন্তি নজরুলশিল্পী ফিরোজা বেগমও শায়িত আছেন সেখানে।
ভাই তাহসিন আহমেদ ও হামিন আহমেদসহ স্বজন এবং মাইলস’র সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীতাঙ্গনের অনেকেই।
শাফিন আহমেদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গুলশানে হাজির হয়েছিলেন শিল্পী‘মাকসুদ ও ঢাকা’ ব্যান্ডের দলনেতা মাকসুদুল হক। তিনি এ সময় বলেন, শাফিন ক্লাসিক্যাল সুরের মিশেলে যে ব্যান্ডের অন্যরকম একটি আমেজ তৈরি করেছে, সেটি এই দেশের গানের ইতিহাসে মনে রাখতে হবে।
শাফিনের মৃত্যুতে যে ক্ষতি হল, তা তো পূরণ হবার নয়. তবে আরও কিছুটা বছর বাঁচতে পারত মন্তব্য করে মাকসুদ বলেন, শুধু গায়ক নয়, ওর যে স্টাইল, গেটআপ, মেকআপ, সেটি তো আলাদা। এজন্য গায়কের বাইরে ওর ফ্যাশন সচেতনতাও অনেকে দৃষ্টি কেড়েছে।
তিনি বলেন, ওর মত অনেকে চুল রেখেছে, স্টাইল করার চেষ্টা করেছে। সব মিলিয়েই শাফিন একটা ‘প্যাকেজ’। অন্য অনেকের চেয়ে নানাভাবেই সে আলাদা।
ব্যান্ড সঙ্গীতের একটা প্রজন্ম পর পর চলে যাচ্ছে বলে এ সময় জানান অবসকিউর ব্যান্ডের দলপ্রধান সাঈদ হাসান টিপু। তিনি বলেন, চাইম ব্যান্ডের খালিদ ভাই কিছুদিন আগেই চলে গেলেন। এবার শাফিন ভাইও চলে গেলেন। আর এখানে আসার পথেই খবর পেলাম হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলও নেই। কী বলব! ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
শাফিন আহমেদকে বিদায় জানাতে এসেছিলেন গীতিকার রনিম। তিনি বলেন, শাফিন ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা তো ২৭/২৮ বছরের। সেই ১৯৯৭ সাল থেকে। আমার লেখা অনেকগুলো গান তিনি করেছেন। এর মধ্যে ‘জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন’ গানটা হিট করে। আজকে শাফিন ভাই বিদায় জানাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
এ সময় গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ, জয় শাহরিয়ার, কবির বকুল, শওকত আলী ইমন ও শাহরিয়ার শাকিলসহ অনেকেই এসেছিলেন শাফিন আহমেদকে বিদায় জানাতে।
১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন নন্দিত ব্যান্ড সঙ্গীতশিল্পী শাফিন আহমেদ। বাবা প্রয়াত বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ কমল দাসগুপ্ত ও মা প্রয়াত নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফিরোজা বেগম। বড় ভাই হামিন আহমেদসহ ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়ে পশ্চিমের সঙ্গীতের সঙ্গে সখ্যতা। ১৯৭৯ সালে বড় ভাই হামিন আহমেদসহ তিনি গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ড দল ‘মাইলস’। নব্বই দশকের ব্যাপক জনপ্রিয় এই ব্যান্ডের গানগুলো এখনও রয়েছে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। কালজয়ী সব গান রচনা ও গায়কিতে তুলে এনেছিলেন শাফিন ও হামিন। এর মধ্যে রয়েছে ফিরিয়ে দাও, জ্বাল, জ্বালা, আজ জন্মদিন তোমারসহ অসংখ্যা গানের অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। এরপর কিছুটা মান অভিমান থেকে মাইলস থেকে দুই দফা দুরে সরে গিয়েছিলেন শাফিন। তিনি নিজেই গড়ে তুলেছিলেন ‘ভয়েস অব মাইলস’নামের ব্যান্ড।
গত ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে একটি কনসার্টে অংশ নিতে গিয়েছিলেন শাফিন। এরপর ২০ জুলাই ভার্জিনিয়ায় আরেকটি কনসার্টে অংশ নেওয়ার কথা। কিন্তু সেই শোয়ের মঞ্চে ওঠার খানিক আগেই হোটেল রুমে লুটিয়ে পড়েন শাফিন আহমেদ।
কয়েকদিনের চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ জুলাই বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টার দিকে তিনি মারা যান।