কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
বৃটিশ আইনের আদলে চলচ্চিত্রকে নিয়ন্ত্রণে এতোদিন কার্যকর ছিলো একটি কর্তৃত্বর্বাদী সেন্সর বোর্ড। যে বোর্ড তাদের মতের বিরুদ্ধে হলেই চালাতো কাঁচি। যে কাঁচিতে কাটা পড়তো প্রযোজক-পরিচালকের স্বপ্নের সিনেমার শট, দৃশ্য ও শব্দ। এই কর্তৃত্ববাদী অবস্থার বিলোপ চেয়ে দিনের পর দিন চলচ্চিত্রকাররা ও কর্মীরা দাবি করে আসছিলেন একটি সার্টিফিকেশন বোর্ডের। যেই বোর্ড চলচ্চিত্রকে যাচ্ছেতাইভাবে কর্তন করতে পারবেনা। যেখানে থাকবে গ্রেডিং পদ্ধতি। যেখানে কর্তৃত্ববাদী কোনো রূপ প্ররিগ্রহ করবেনা। সার্টিফিকেশন বোর্ড গ্রেড অনুযায়ী সার্টিফিকেট প্রদান করবে। একটি রাষ্ট্র সংস্কারের প্রাক্কালে এমন একটি বোর্ড গঠন হলো অবশেষে। এতে করে চলচ্চিত্রকর্মীদের দাবি পূরণের পথে হাঁটলো বোর্ড।
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড তাদের কার্যপরিধির মাধ্যমে এই দাবির বাস্তবায়ন করবে এটিই তাদের চাওয়া।
সর্বশেষ ২০২৩ সালে এই আইনের খসড়া অনুমোদন হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। ্ বছরে সেন্সর বোর্ড আবারও পুনর্গঠন হলে চলচ্চিত্রকর্মীরা জোরালোভাবে তাদের দাবি তুলে ধরে সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠনের পক্ষে। তাদের দাবির মুখে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় নতুন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করেছে।
মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেট আইন, ২০২৩-এর ধারা ৩-এর উপ-ধারা (১) অনুযায়ী বোর্ড গঠন করা হয়েছে। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব। বোর্ডের সদস্য সচিব করা হয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানকে। এছাড়া ১৫ সদস্যের এই বোর্ডে আছেন চলচ্চিত্র পরিচালক, গবেষক ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।
নবগঠিত চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডে যারা রয়েছেন-
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র)
জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার প্রতিনিধি
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষক জাকির হোসেন রাজু
চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক রফিকুল আনোয়ার রাসেল
প্রযোজক, পরিচালক, পরিবেশক, লেখক ও সংগঠক জাহিদ হোসেন
চলচ্চিত্র সম্পাদক ইকবাল এহসানুল কবির
চলচ্চিত্র পরিচালক খিজির হায়াত খান
অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ
চলচ্চিত্র পরিচালক তাসমিয়া আফরিন মৌ।
এর আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সার্টিফিকেশন আইন থাকার পরও সেন্সর বোর্ড গঠন নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মধ্য থেকে আসে সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠনের দাবি। এই দাবির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এতে নির্মাতা আশফাক নিপুণ ও অভিনেত্রী কাজী নওশাবা সার্টিফিকেশন আইনের পক্ষে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এছাড়া নতুন বোর্ড থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন আশফাক নিপুণ।
এদিকে দীর্ঘদিন পর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া নতুন অন্তর্বর্তী সরকার চলচ্চিত্রকর্মীদের দাবিতে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করেছেন। এতে চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দাবির বাস্তবায়নের শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। তবে এই চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড নিরপেক্ষতা বজায় রেখে প্রযোজক-পরিচালকের স্বপ্নের সিনেমাকে কাঁচি না চালিয়ে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন প্রদান করবেন এমনটাই আশা তাদের।