কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। তিনি ছিলেন একাধারে নৃত্যশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী। তিনি আর নেই। শনিবার ভোররাত ১টা ১০ মিনিটে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর খবরে শোবিজ পাড়ায় শোকের ছায়া বিরাজ করছে। সত্তর ও আশির দশকের তুমুল জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকা অভিনেত্রী অঞ্জনা। নায়ক রাজ রাজ্জাক ও সোহেল রানার মতো সে সময়ের হার্টথ্রব নায়কদের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তাঁর নাচ ও অভিনয় এই প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছেও অনুকরণীয়।
অঞ্জনা তারকাদের অশ্রসিক্ত ভালোবাসায় শেষ বিদায় নিয়েছেন। তাঁর শেষ বিদায়ে এফডিসিতে বেড়েছে ভিড়। এই শিল্পীর মরদেহ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এফডিসিতে আনা হয়। প্রথম জানাজা শেষে দুপুর ২টায় নেওয়া হয় চ্যানেল আইতে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয় সোনালি দিনের এই নন্দিত অভিনেত্রীকে।
এফডিসিতে অঞ্জনার শেষ বিদায়ে তারকাদের ভিড়
এফডিসিতে অঞ্জনাকে শেষ বিদায় জানাতে চিত্রনায়ক আলমগীর, উজ্জ্বল, নতুন, পরিচালক মতিন রহমান, মিশা সওদাগর, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, মুক্তি, সুব্রত, মেহেদীসহ বহু তারকা। ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা।
অঞ্জনার মৃত্যুতে কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন আবেগাপ্লুত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমার খুব কাছের বান্ধবী অঞ্জনা। কোনোদিন তাকে অসুস্থ হতে দেখিনি। দারুণ হাসিখুশি একজন মানুষ ছিলেন। কী থেকে কী হয়ে গেলো বুঝতে পারছি না! এটা মানা আমার জন্য খুব কষ্টের।’
নায়ক উজ্জ্বল বলেন, ‘অঞ্জনাকে হারালাম। এখানে “হারালাম” শব্দটি অবশ্য সঠিক হবে না। আমরা যারাই জন্ম নেই, তারা কর্ম করে চলে যাওয়ার জন্যই পৃথিবীতে আসি। শিল্পী হিসেবে অঞ্জনা প্রচুর কাজ করে গেছেন। অনেক বড় প্রতিভাবান একজন শিল্পী ছিলেন তিনি। সবার সঙ্গে তার আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। আমি মনে করি, এটা অঞ্জনার সরলতার অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।’
পরিচালক মতিন রহমান বলেন, ‘খুব সহজ-সরল ছিলেন অঞ্জনা। জীবনধারা খুব সহজ ছিল। অনেক হাসিখুশি একজন মানুষ ছিলেন। তার হাসিখুশি মুখটা আর দেখতে পাবো না।’
চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস বলেন, ‘ঠিক কী বলবো বুঝতে পারছি না। অনেক সিনেমায় তার সঙ্গে অভিনয় করেছি। অনেক কথা মনে আসছে। আমি তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। ভালো থাকুক, যেখানেই থাকুক।’
অভিনেতা মিশা সওদাগর বলেন, ‘তিনি একজন মানবিক শিল্পী ছিলেন। কোনো দিন কারো বিরুদ্ধে তাকে কিছু বলতে শুনিনি। গতকাল রাতেও হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। খুব কষ্ট হচ্ছে তার জন্য।’
অভিনেত্রী অঞ্জনা ১৯৮১ সালে ‘গাংচিল’ ও ১৯৮৬ সালে ‘পরিণীতা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য দুইবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। চলচ্চিত্র জগতে আসার আগে তিনি একজন নামী নৃত্যশিল্পী ছিলেন। ১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ দিয়ে অঞ্জনার অভিনয় জীবন শুরু হয়। তবে শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’ তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র। ১৯৭৮ সালে তিনি আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘অশিক্ষিত’ চলচ্চিত্রে নায়ক রাজ রাজ্জাকের বিপরীতে লাইলি চরিত্রে অভিনয় করেন। রাজ্জাকের বিপরীতেই ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
অঞ্জনার মৃত্যু ঘিরে রহস্য:
ডিসেম্বরের শুরুতে জ্বরে আক্রান্ত হন অঞ্জনা। জ্বর না কমায় গত ২২ ডিসেম্বর তাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েক দিন করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। এমনটাই জানিয়েছেন তার ছেলে নিশাত রহমান জানান। তবে শেষ বিদায়ের জন্য অভিনত্রেীকে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে গোসল করাতে নেওয়া হয়। সে সময় তার শরীরের নানা জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। এরপর অঞ্জনার মরদেহ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে নেওয়া হলে, সেখানেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়। গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই অসুস্থ ছিলেন এই নায়িকা। এরপর শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন না হলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। চিকিৎসকের পরামর্শে চেকআপের পরে তার রক্তে ইনফেকশন ধরা পড়ে। এক সপ্তাহের বেশি সময় চিকিৎসা নিলেও কোনো উন্নতি হয়নি অঞ্জনার। পরে ১ জানুয়ারি তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে অঞ্জনাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
আরও পড়ুন: দোজার গবেষণাকর্ম ‘চলচ্চিত্রের সৈয়দ শামসুল হক’ উপস্থাপন
সালমান শাহকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে শোবিজ তারকারা