কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
আট বছর আগের এই দিনে প্রয়াত হয়েছিলেন ঢালিউডের নায়ক রাজ রাজ্জাক। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। নায়করাজের মৃত্যু ঢালিউড ও টলিউডে শোক বয়ে যায়। যা আজও বিরাজমান। তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা, সংগ্রাম, শিল্পী হয়ে ওঠা এবং পরবর্তী সময়ে দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে এক অমলিন ছাপ রেখে যাওয়া-সব মিলিয়ে রাজ্জাকের জীবন যেন এক অনন্য কাব্য।
এই দিনে কালচারাল ইয়ার্ড রাজ্জাককে স্মরণ করছে শ্রদ্ধায়।
রাজ্জাকের জন্ম
কলকাতার টালিগঞ্জে ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি। টালিগঞ্জই ছিল ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। ছোটবেলা থেকেই নাটক ও সিনেমার প্রতি তাঁর ছিল প্রবল ঝোঁক। বিদ্যালয় জীবনে মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন এবং ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন নাট্যপ্রেমী। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে দেশভাগ ও পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তাঁকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। ১৯৬১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশে) চলে আসেন।
ঢাকায় এসে প্রথমদিকে তিনি নানা কষ্টে দিন কাটান। অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া সহজ ছিল না। তিনি টেলিভিশনে অভিনয় দিয়ে শুরু করেন। এরপর চলচ্চিত্রে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিতে থাকেন। তাঁর প্রথম দিককার সিনেমার মধ্যে “বেহুলা” (১৯৬৬) ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে প্রকৃত সাফল্য আসে সুভাষ দত্ত পরিচালিত “আনোয়ারা” (১৯৬৭) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এখানেই জন্ম নেয় ‘নায়করাজ’ রাজ্জাকের তারকাখ্যাতি।
ষাটের দশকের শেষ থেকে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত রাজ্জাক ছিলেন ঢালিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক। তাঁকে ছাড়া যেন কোনো হিট ছবির কল্পনাই করা যেত না। একের পর এক বাণিজ্যিক ও সামাজিক ছবি তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে-“অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী” (১৯৭২), “অশিক্ষিত” (১৯৭৮), “অঙ্গার” (১৯৬৯), “পিচঢালা পথ” (১৯৭০), “বাবা কেন চাকর” (১৯৯৭), “রংবাজ” (১৯৭৩)।
তাঁর সাথে সুচন্দা, শাবানা, কবরী, ববিতা প্রমুখ অভিনেত্রীদের জুটি ছিল দর্শকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
১৯৭০ সালে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন চলচ্চিত্র সাংবাদিকরা তাঁকে ‘নায়করাজ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তারপর থেকে তিনি শুধু একজন নায়ক নন, বরং একটি প্রতিষ্ঠান। দর্শকের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন স্বপ্নের মানুষ, যার অভিনয়, রোমান্স, সংলাপ, হাসি–কান্না সবই ছুঁয়ে যেত হৃদয়কে।
নায়ক হিসেবে সাফল্যের পাশাপাশি রাজ্জাক চলচ্চিত্র পরিচালনায়ও হাত দেন। “অনন্ত প্রেম” (১৯৭৭) তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। এরপর তিনি বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। এছাড়াও প্রযোজনার মাধ্যমে তরুণ শিল্পীদের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
রাজ্জাকের স্ত্রী নায়লা রাজ্জাক। তাঁদের পাঁচ সন্তান— বাপ্পারাজ, সম্রাট, শরিফ, তন্ময় ও একজন কন্যা। বাপ্পারাজ এবং সম্রাট চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাবার পথ অনুসরণ করেছেন।
আরও পড়ুন: এক যুগ পরে মুক্তি পেলো কামার আহমেদ সাইমনের সিনেমা ‘অন্যদিন…’