কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ৮২তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়েছে গত বুধবার, ২৭ আগস্ট। তবে এই উৎসব ঘিরে এবার আলোচনায় উঠে এসেছে ফিলিস্তিন ইস্যু। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা এক খোলা চিঠির মাধ্যমে গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যা’ ও ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানাতে উৎসব কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
‘ভেনিস ফর প্যালেস্টাইন’ উদ্যোগ
‘ভেনিস ফর প্যালেস্টাইন’ নামের এই উদ্যোগের আওতায় উৎসব শুরুর আগেই একটি আবেদনপত্র পাঠানো হয় ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের মূল সংস্থা বিনালে দি ভেনেজিয়া এবং এর দুটি শাখা ভেনিস ডেজ ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস’ উইক-এর কাছে।
চিঠিতে নির্মাতারা উৎসব কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন, ভেনিস উৎসব যেন “শূন্য ও দুঃখজনক প্রদর্শনীতে” পরিণত না হয়। তাদের দাবি, উৎসবটি অতীতের মতোই “সংলাপ, সক্রিয় অংশগ্রহণ ও প্রতিরোধের জায়গা” হয়ে উঠুক এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বয়ানকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরুক।চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে চলমান “জাতিগত নিধন, বর্ণবৈষম্য, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অবৈধ দখল, ঔপনিবেশিকতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো” নিয়ে সক্রিয়ভাবে আলাপ করতে হবে।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা
এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ইতালির প্রখ্যাত অভিনেতা টনি সারভিল্লো, অভিনেত্রী-পরিচালক আলবা এবং অ্যালিস রোরওয়াচার, ফরাসি পরিচালক সেলিন সিয়ামা, ব্রিটিশ পরিচালক কেন লোচ, ব্রিটিশ অভিনেতা চার্লস ড্যান্স এবং ফিলিস্তিনি নির্মাতা আরাব নাসের ও তারজান নাসের।ফিলিস্তিনি নির্মাতারা চলতি বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন গাজা’ ছবির জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন।চিঠিতে তারা লিখেছেন, “আমাদের উদাসীনতার ধারা ভাঙতে হবে এবং সচেতনতার পথ তৈরি করতে হবে। মানবতা ছাড়া কোনো সিনেমা নেই।”
বিনালের প্রতিক্রিয়া
চিঠির জবাবে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজক সংস্থা বিনালে দি ভেনেজিয়া দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব বরাবরই “উন্মুক্ত আলোচনার জায়গা এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর প্রতি সংবেদনশীল একটি প্ল্যাটফর্ম” হিসেবে কাজ করে আসছে।তারা উদাহরণ হিসেবে এ বছর প্রতিযোগিতায় থাকা তিউনিসিয়ার পরিচালক কাওথের বেন হানিয়ার ‘দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব’ চলচ্চিত্রের কথা উল্লেখ করেছে। এই চলচ্চিত্রটি ২০২৪ সালে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত পাঁচ বছরের এক ফিলিস্তিনি শিশুর গল্প নিয়ে নির্মিত।তারা আরও জানায়, গত বছর উৎসবে ইসরায়েলি পরিচালক দানি রোজেনবার্গের ‘অব ডগস এন্ড মেন’ ছবিও প্রদর্শিত হয়েছিল, যা হামাস আক্রমণের প্রেক্ষাপটে নির্মিত।
মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপট
এই বিতর্ক এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন গাজা উপত্যকার মানুষ ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে। বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন সম্প্রতি জানিয়েছে, গাজায় মানুষ এখন “মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে” ভুগছে। যদিও ইসরায়েলি সরকার এই দাবিকে অস্বীকার করেছে।এছাড়া, এই ইস্যু জাতিসংঘের আসন্ন বৈঠকের আগেই সামনে এসেছে। ওই বৈঠকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডাসহ বহু দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করবে।
৮২তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। চলচ্চিত্রকর্মীদের এই প্রতিবাদ এবং উৎসব কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এই প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। ফিলিস্তিনের সংকট নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের এই আহ্বান বিশ্বজুড়ে মানবিকতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিতে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে বলে আশা করা যায়।
আরও পড়ুন: টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আলী’