কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
বাংলাদেশের ফ্যাশন জগতে দীর্ঘ দেড় দশকের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর নতুন স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পথচলা শুরু করেছেন ফ্যাশন ডিজাইনার এ বি ওয়ালীউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, যিনি পরিচিত ওয়ালী চৌধুরী নামে। তাঁর হাতের নকশা, কাপড়ের নির্বাচনে আভিজাত্য এবং রঙের সুনিপুণ সমন্বয় ইতোমধ্যেই তাঁকে দেশে আলোচিত করে তুলেছিল। এবার সেই অভিজ্ঞতা ও স্বপ্ন নিয়ে তিনি ফ্যাশনের বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করছেন।
ফ্যাশনে যাত্রা ও পরিচিতি
ওয়ালী চৌধুরীর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায় ২০১১ সালে, যখন তিনি আয়োজন করেন ব্যতিক্রমধর্মী প্রদর্শনী “ডিজাইনারস কালার হুইল প্রেজেন্টেশন”। এতে দেশের শীর্ষ মডেলরা অংশ নেন এবং উপস্থিত ছিলেন ফ্যাশন আইকন বিবি রাসেল, প্রয়াত ফটোগ্রাফার চঞ্চল মাহমুদ, শিল্পী সামিনা চৌধুরী ও অভিনেত্রী শম্পা রেজা। সেই আয়োজন তাঁকে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে আলাদা পরিচিতি এনে দেয়।
শুধু ডিজাইনারই নন, শুরুর দিকে কোরিওগ্রাফার হিসেবেও তিনি অসংখ্য ফ্যাশন শোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল ও লন্ডনে একক ফ্যাশন শো আয়োজন করে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
নিউইয়র্কে নতুন অধ্যায়
২০২১ সালে ওয়ালী চৌধুরী স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। বর্তমানে তিনি স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে নিউইয়র্কের কুইন্সে বসবাস করছেন। সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান “অ্যাবাউট টাইম ইভেন্ট ইনক”, যার লক্ষ্য বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও পোশাকের ঐতিহ্যকে তুলে ধরা।
ইতোমধ্যেই তিনি নিউইয়র্কে গায়িকা সামিনা চৌধুরীর একক সংগীতানুষ্ঠান এবং ফাহমিদা নবীর বই প্রকাশনা অনুষ্ঠান সফলভাবে আয়োজন করেছেন। সামনের শীত মৌসুমে আরও কয়েকটি ফ্যাশন শো আয়োজনের পাশাপাশি আগামী বছর ঈদের পরে বাংলাদেশ থেকে নামকরা শিল্পীদের নিয়ে বড় আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে জামদানি ও কাতান দিয়ে ওয়েস্টার্ন ডিজাইন তৈরি করে তিনি দেশীয় ঐতিহ্যকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিতে চান।
ফ্যাশন দর্শন
ওয়ালী চৌধুরীর মতে, ডিজাইনের মূল সাফল্য শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যে নয়, বরং কাপড়ের গুণগত মান, রঙের সামঞ্জস্য, ঋতুর উপযোগিতা এবং আরামের মধ্যে নিহিত। তাঁর ভাষায়— “কাপড় এমন একটি জিনিস যা সারাক্ষণ সবার পরতে হয়। তাই সেটি যদি একই সঙ্গে আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল হয়, তবে সেটিই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য।”
তাঁর বিশ্বাস, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা একজন মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, তবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে সৃজনশীলতা, ট্রেন্ড বোঝা, স্টাইল সেন্স এবং কাস্টমারের সঙ্গে যোগাযোগ দক্ষতাই আসল মূলধন।
স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করলেও ওয়ালী চৌধুরী সবসময় নিজের জন্মভূমির সংস্কৃতিকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন। তাঁর বিশ্বাস—বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম যদি সঠিকভাবে নিজেদের সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারে, তবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতেও তারা আন্তর্জাতিক মানের সাফল্য অর্জন করতে পারবে।