কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটের মৃদু আলো-আঁধারি মিলনায়তন। মঞ্চে শান্ত আবহে শুরু হলো এক অনন্য সন্ধ্যা—‘ভুবনজোড়া আসনখানী’। রবীন্দ্রসংগীত, সাহিত্য ও সমাজচেতনার সংমিশ্রণে সাজানো এই আয়োজন যেন হয়ে উঠেছিল এক ক্ষুদ্র রবীন্দ্রজগত।
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এই ‘কথালাপ ও সঙ্গীত সন্ধ্যা’তে মিলেছিল সাহিত্য, চিন্তা ও সুরের নিবিড় মেলবন্ধন।
অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যে অধ্যাপক রীতা দত্ত স্মরণ করিয়ে দেন রবীন্দ্রনাথের সেই সমাজদর্শন, যা আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পে নারীর প্রতি সমাজের বৈষম্য, অবহেলা ও অবজ্ঞার যে চিত্র ফুটে উঠেছিল, তা আজও আমাদের বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি যেমন ‘হৈমন্তী’, ‘শাস্তি’, ‘মধ্যবর্তিনী’ গল্পে নারী চরিত্রের ভেতর দিয়ে সমাজের নির্মমতা দেখিয়েছেন, তেমনি তুলে ধরেছেন নারীর ভালোবাসা, আত্মমর্যাদা আর সংগ্রামের কণ্ঠস্বর।”
রীতা দত্তের বিশ্লেষণে ধ্বনিত হয় রবীন্দ্রচিন্তার মানবিক মর্ম—যেখানে নারী কেবল করুণা বা অনুকম্পার নয়, বরং এক পূর্ণ মানসিক সত্তার প্রতীক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিষদের শিল্পীরা পরিবেশন করেন উদ্বোধনী সংগীত। সঞ্চালনায় ছিলেন পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তাঁর পরিমিত কথনে ও পরিচ্ছন্ন উপস্থাপনায় সন্ধ্যার ছন্দ তৈরি হয় প্রথম থেকেই।
তারপর একে একে মঞ্চে আসেন সংগীতশিল্পী শাশ্বতী তালুকদার, ডলি সাহা ও সেঁজুতি দে—তাঁদের কণ্ঠে রবীন্দ্রসুর যেন মিলনায়তনের দেয়াল ছুঁয়ে ছড়িয়ে পড়ে শ্রোতার মনে। প্রতিটি গানে ছিল অনুরাগ, শ্রদ্ধা ও চেতনার মৃদু তরঙ্গ।
‘ভুবনজোড়া আসনখানী’ নামের মতোই এই আয়োজন যেন ছড়িয়ে দিল এক বিস্তৃত মানসিক পরিসর—যেখানে কথায়, সুরে ও ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ নতুন করে ফিরে এলেন চট্টগ্রামের এক সন্ধ্যায়।