কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
তানজিয়া জামান মিথিলার চোখে এখন একটিই ধাওয়া—স্বপ্ন ছোঁয়ার। থাইল্যান্ডের ফুকেটে চলছে ৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা, আর সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এগিয়ে চলেছেন দুর্বার আত্মবিশ্বাস নিয়ে। ১২১ দেশের প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়াই করে তিনি এখন অবস্থান করছেন ‘পিপলস চয়েস’ ভোটিংয়ে শীর্ষ দু’জনের মধ্যে। এ অগ্রগতি শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্বের সামনে এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।
দু’দিন আগেই ভোটিং তালিকায় ৫ নম্বরে উঠে আসে তার নাম। তারপর যেন সময়ই পাল্টে যেতে শুরু করে—একটার পর একটা প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে মিথিলা পৌঁছে যান সেরা দুইয়ে। বৃহস্পতিবার সকালে তার ফেসবুক পোস্ট থেকেই জানা যায় সুখবরটি। সেখানে তিনি লিখেছেন, “১২১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন ২ নম্বরে। আর মাত্র ৫০ হাজার ভোট পেলেই উঠে যাব এক নম্বরে।”
তিনি দেশের মানুষকে আহ্বান জানিয়ে বলেন—১০ লাখ মানুষ যদি প্রতিদিন ১০টি ভোট দেয়, তবে ৬ দিনেই লাখো, কোটি ভোট জমা হবে বাংলাদেশের প্রতিনিধির পক্ষে।
তারকাদের প্রচারণায় উত্তাপ ভোটিংয়ে
মিথিলার এই অগ্রগতি দেশের তারকাদেরও উজ্জীবিত করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার জন্য ভোট চাইতে এগিয়ে এসেছেন জয়া আহসান, রুনা খান, শবনম বুবলী, মুমতাহিনা টয়া, ঐশী, জান্নাতুল পিয়া, শবনম ফারিয়া, সালমান মুক্তাদিরসহ অনেক তারকা। তাদের পোস্ট ও শুভকামনা মিথিলার পেছনে তৈরি করেছে একটি বিশাল সমর্থনবলয়।
ভোট দেওয়ার নিয়ম সহজ, আর সময় আছে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত
মিস ইউনিভার্স অ্যাপে গিয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন করলেই দেখা যাবে ‘পিপলস চয়েস’ সেকশন। সেখান থেকে মিথিলাকে সিলেক্ট করে বিজ্ঞাপন দেখলেই বাড়বে ভোটের সংখ্যা। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ভোট দেওয়া যাবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত।
এ যেন বাংলাদেশের সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও প্রতিনিধিত্বকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দেওয়ার এক অনন্য সুযোগ।
থাইল্যান্ড থেকে মিথিলার অনুভূতি: দেশের ভালবাসায় বিস্মিত
এক আবেগঘন বার্তায় মিথিলা জানান, “বিদেশে এসে দেশের মানুষের ভালোবাসা আমাকে নতুনভাবে ভাবাচ্ছে। এত মানুষ শুভকামনা জানাচ্ছে, ভোট দিচ্ছে—এটাই আমাকে দেশকে নিয়ে আরও বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে।”
তার কণ্ঠে গভীর আত্মবিশ্বাস—“মুকুট জয়ের সব যোগ্যতা আমাদের আছে। আমার লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশের নাম বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল করা।”
যদিও… মূল প্রতিযোগিতায় আরও দীর্ঘ পথ
সূত্র বলছে, ‘পিপলস চয়েস’ মিস ইউনিভার্সের একটি অংশমাত্র। শুধু ভোটে শীর্ষে থাকা মানেই সরাসরি সেরা পর্যায়ে উত্তরণ নয়। মুকুট ছিনিয়ে আনতে হলে মিথিলার সামনে রয়েছে আরও বহু পর্ব, আরও কঠিন প্রতিযোগিতা। তবে তার অগ্রগতি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্যই বড় প্রাপ্তি।
মিথিলার সাফল্যের পথচলা
তানজিয়া জামান মিথিলা সেপ্টেম্বরেই জিতেছেন মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২৫-এর মুকুট। এর আগে ২০১৯ সালে তিনি জিতেছিলেন ফেস অব বাংলাদেশ, ফেস অব এশিয়া এবং মিস সুপারন্যাশনাল খেতাব।
মডেলিং-অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি পরিচিত বাল্যবিবাহবিরোধী আন্দোলন এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে কাজ করার জন্যও।
২০২০ সালে একই খেতাব জিতলেও, করোনা পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক পর্বে যেতে পারেননি তিনি।
এবার শুধু প্রতিযোগিতা নয়—বলিউডে ‘রোহিঙ্গা’ ও ‘লাইফ’—দুটি চলচ্চিত্রেও যুক্ত হয়েছেন তিনি। বলা যায়, তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উত্তাল সময় এখনই।
শেষ কথা: বাংলাদেশের গর্বের নতুন গল্প লিখছেন মিথিলা
স্বপ্নের দরজায় পা রেখেছেন মিথিলা। বাকি শুধু আরও একটু পথচলা, আরেকটু সাহস, আরেকটু ভোট।
বাংলাদেশের কোটি মানুষের সমর্থনই হতে পারে সেই শক্তি, যা প্রথমবারের মতো দেশকে বিশ্বের অন্যতম বড় সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মঞ্চে এনে দেবে ইতিহাসের মুকুট।
তিনি লিখেছেন—
“আমি বিশ্বাস করি, এ বার মুকুটটা আমরা ঘরে নিয়ে আসতে পারব।”
স্বপ্ন সত্যি হতে কি আর বেশি বাকি?