বিকিনি বিতর্কে শঙ্কিত মিথিলা: ‘নিজেদের মানুষই যদি পাশে না থাকে…’
প্রকাশের সময় :
কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা। থাইল্যান্ডে বসছে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা—মিস ইউনিভার্সের ৭৪তম আসর। সেই বিশাল মঞ্চে এবার লাল-সবুজ পতাকা হাতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন মডেল ও অভিনেত্রী তানজিয়া জামান মিথিলা। গত সেপ্টেম্বরে ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২৫’–এর মুকুট জেতার পর থেকেই চলছে তার প্রস্তুতি; অক্টোবরে প্রতিযোগিতার মূল ক্যাম্পে যোগ দিতে তিনি উড়াল দেন ব্যাংককে।
মঞ্চের আড়ালে দিনে দিনে স্পষ্ট হয়েছে প্রতিযোগিতার কঠিন বাস্তবতা—কঠোর শিষ্টাচার, লাগাতার ট্রেনিং, সময়ানুবর্তিতা আর শারীরিক-মানসিক শক্তির নিরন্তর পরীক্ষা। সেখানে দাঁড়িয়ে দেশেরই এক অংশের কাছ থেকে প্রশ্নবাণ কিংবা ট্রল—এসব তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। আর তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিওতে খোলাসা করলেন নিজের হতাশা, ক্ষোভ আর মনখারাপের গল্প।
মিথিলার কণ্ঠে আক্ষেপ,
“আমাকে অন্য দেশের মানুষ ট্রল করলে কিছু যায়-আসে না। কিন্তু নিজের দেশের মানুষ! এত কষ্ট, এত ডিসিপ্লিন—সব চোখের সামনে দেখেও যদি অ্যাপ্রিসিয়েশন না পাই, সেটা খুবই কষ্টের।”
তবে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু যেটা—বিকিনি পরা—সে প্রসঙ্গটি থেকে সরে যাননি তিনি। খুব সরাসরি বললেন প্রতিযোগিতার নিয়মকানুনের কথা।
“আমি যদি বিকিনি না পরি, তাহলে টপ ৩০–এ যাওয়া সম্ভব না। আপনারা তো চান আমি জিতি? বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে চাইলে, নিয়ম মেনে আমাকে সেটি পরতে হবে। এটা ধর্মের প্রশ্ন নয়—এটা প্রতিযোগিতার অংশ।”
মিস ইউনিভার্সের অঙ্গন নিয়ে তার বিশ্লেষণও স্পষ্ট এবং বাস্তবসম্মত— এটি এমন একটি জায়গা যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সেরা প্রতিযোগীরা, সেরা প্রস্তুতি নিয়ে, একই লক্ষ্যকে সামনে রেখে দাঁড়ান। কেউই খারাপ নন, কেউই পিছিয়ে নন। ফলে প্রতিযোগিতা শুধু সৌন্দর্যের নয়—শরীরচর্চা, সৃজনশীলতা, উপস্থিত বুদ্ধি, ভাষা, আত্মবিশ্বাস—সবকিছু মিলিয়ে এক সর্বাঙ্গীণ যুদ্ধ।
মিথিলা সে কারণেই বলছেন—
“এদের সঙ্গে কম্পিট করতে হলে আমাকে সত্যিই খুব ভালো করতে হবে। আর দেশের মানুষকেও একটু এগিয়ে আসতে হবে, পাশে দাঁড়াতে হবে।”
বাংলাদেশে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা নিয়ে মতবিরোধ নতুন নয়। কিন্তু মিথিলার ভিডিও বার্তাটি যেন নতুন করে প্রশ্ন তোলে—আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশকে এগিয়ে নিতে গেলে, নিজের দেশের সমর্থন কি যথেষ্ট পাওয়া যায়?
থাইল্যান্ডে এখন প্রস্তুতির চূড়ান্ত ধাপ চলছে। মিথিলা প্রতিদিনই লড়ছেন নিজের সীমা ছাড়ানোর জন্য। সামনে সেই বহুল আলোচিত প্রশ্ন—তিনি কি পারবেন বাংলাদেশের জন্য বার্তা বদলে দিতে?
ভোট, মঞ্চ আর বিচারকের সামনে তার ফল—এসবের বাইরে আরেকটি প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে—
নিজেদের মানুষই যদি পাশে না থাকে, তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার লড়াই কতটা একাকী হয়ে যায়?