গেলো বছরে মঞ্চনাটকের জন্য বছরটা ভালো যায়নি। রাজনৈতিক অস্থিরতায় বেশ থমকে গেছে এ অঙ্গন। আগের বছরের তুলনায় এ বছর খুব কম নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। যেখানে করোনার পরেও এতো কম ছিলনা। মাত্র ২৪টি নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে ২০২৪ সালে। এর আগের বছর ২০২৩ সালে যেখানে ৭৩টি নাটক আসে। তার আগের বছর অর্থাৎ করোনার পরের বছর ছিল ৩৪টি নতুন নাটক। গত দুই বছরের তুলনায় এবার অনেক কম নাটক এসেছে। ছিলো না বলার মতো তেমন আলোচিত নাটক। বছরটি ভালো না গেলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনে ২০২৫ ভালো যাবে এমন প্রত্যাশা করছেন নাটক সংশ্লিষ্টরা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর শিল্পকলাসহ নাট্যাঙ্গনে বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। শিল্পকলার মহাপরিচালকের পদে নিযুক্ত হন জামিল আহমেদ। কিন্তু মঞ্চনাটকের সব স্বাভাবিক হতে শুরু করলে গত ২ নভেম্বর ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। দেশ নাটক প্রযোজিত নিত্যপুরাণ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেয়া হয় সেদিন। কিছু সংখ্যক লোকের প্রতিবাদ ও মবের কারণে সংগঠনটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিল্পকলা একাডেমির সামনে সমাবেশ করেন শতাধিক নাট্যকর্মী। সমাবেশ চলাকালে কয়েকজন লোক পেছন থেকে ডিম ছুড়ে মারেন। পরে বক্তব্যে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সভা শেষ করব না। ভেতরে নাটক হবে, বাইরে আমরা পাহারা দেব।’ পরে গত নভেম্বরে একই মঞ্চে মঞ্চস্থ হয় ‘নিত্যপুরাণ’।
দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মঞ্চে নাটক বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলিয়ে সমস্ত চড়াই-উতরাইয়ের মাঝেও কিছু নাটক মঞ্চস্থ হয়। সেগুলোরে মধ্যে আছে- বাতিঘরের ‘প্যারাবোলা’, দেশ নাটকের ‘পারো’, আরণ্যকের ‘কম্পানি’, অনুস্বরের ‘মহাশূন্যে সাইকেল’ ও ‘বিবিধ শোক অথবা সুখ’, ‘প্রাঙ্গণেমোরের ‘টিনের তলোয়ার’, স্বপ্নঘুরি রেপার্টরির নাটক ‘বোধ’সহ কিছু নাটক।
নতুন বছরে নতুন আশা
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত নভেম্বরে নাটকের শিক্ষক শাহমান মৈশানের নির্দেশনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গিয়ে শেষ হয় গণপরিবেশনা ‘লাল মজলুম’। নাটকটি বেশ সাড়া ফেলে। এতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত স্মৃতিসহ গণমানুষের ওপর নির্যাতন, সংগ্রাম ও গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে। এত হতাশার মাঝেও কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে নতুন কিছু নাটক। মঞ্চে এ বছর তুলনামূলক রেপার্টরি দলের কার্যক্রম বেশি ছিল। নাট্যাঙ্গনে তরুণরা এসেছেন নতুন উদ্যমে। নতুন বছরে নতুন করে ভালো ভালো কিছু প্রযোজনা নিয়ে মঞ্চে আলো ছড়াবে। এর মধ্যে বছরের শুরুতেই ঢাকার মঞ্চে এসেছে দুটি নতুন নাটক। একটি নবরস নৃত্য ও নাট্যদলের ‘সাতকাহন’, অন্যটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রযোজনা ‘দ্য রুলস অব লাভ’।
২ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয় নবরস নৃত্য ও নাট্যদলের চতুর্থ প্রযোজনা সাতকাহনের। ৩ জানুয়ারি একই স্থানে বিকেল ৫টা ও সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চায়িত হয় নাটকটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রদর্শনী। ৩ ও ৪ জানুয়ারি প্রতিদিন বেলা সাড়ে ৩টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চস্থ হচ্ছে এলিফ শাফাক ও নাইজেল ওয়াটসের উপন্যাস অবলম্বনে নাটক দ্য রুলস অব লাভ। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মেহেদী তানজিরের নির্দেশনায় নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রযোজনায় এটি মঞ্চায়ন হচ্ছে।