একজন মৃত মানুষ রশীদ চৌধুরীর ডাকে দশ পেশার দশজন এসে হাজির হয় পাহাড় ঘেরা অরণ্যে। একজন পাহাড়ি গার্ড তাদের নিয়ে রওনা হয় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে চুড়ায়। দুর্গম পথ হেঁটে যাচ্ছে আর ছোট ছোট কিছু বাধা যেন বড় বিপদের আশংকা বাড়াচ্ছে। একটি বিচ্ছিন্ন পাহাড় একটি নড়বড়ে সেতু দিয়ে সংযুক্ত। সেখান দিয়ে একজনের বেশি লোক পার হতে পারবেন না। এটি পার হয়ে উঠলেন চূড়ার বাংলোতে। নিজ নিজ ঘরে প্রত্যেকে পেলেন কোন না কোন অস্ত্র। প্রকৃতির বাতাস পাত্র-পাত্রীদের ভাবনার সঙ্গে মিশে শিহরিত করলো দর্শক মনকে। টানটান উত্তেজনা ….। সাসপেন্স থ্রিলার ছবির একটি সার্থক রুপায়ণ ঘটেছে কালের পুতুল সিনেমায়। সাসপেন্স থ্রিলার কালের পুতুল এক সময় মোড় নেয়ার চেষ্টা চালায় সাইকো থ্রিলার হিসেবে। হিচককের ‘সাইকো’ ছবির অনুভুতি পাই আমরা।
দশজন মানুষ যখন হঠাৎ করেই দেখে সেখানে টেলিভিশনে একটি আদালতের মাধ্যমে বলা হচ্ছে সেই দশজন মানুষ অতীতে কিছু খুন করেছেন। তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। এরপর সবার মধ্যে আতঙ্ক। কে আগে খুন হবেন। সেই সময় ছবির পাত্র-পাত্রীদের মধ্যে ভয় ও টেনশন। সেই টেনশন অনেক জায়গায় কম পাওয়া গেছে।
নির্মাতা আকা রেজা গালিবের প্রথম সিনেমা কালের পুতুল। তিনি হিচকক দ্বারা অনুপ্রাণিত। এর আগে পড়াশুনা করেছেন, চিন্তা করেছেন, দেখেছেন দেশে বিদেশে কত শত ছবি। এরপর সাহস দেখিয়েছেন সিনেমা বানানোর মতো এক বিশাল কর্মযজ্ঞে। এ কর্মযজ্ঞের কিছু জায়গায় দৃশ্যধারণ ও দৃশ্যসম্পাদনার দুর্বলতা মনে হলেও পরবর্তীতে কাটিয়ে ওঠা গেছে। অভিনয়শৈলী আর দৃশ্য কনটিনিউটিতে অপরিপক্কতা দৃশ্যমান ছিলো। তবে কিছু শক্তিশালী অভিনয়শিল্পী থাকার কারণে তা উতরে গেছে। প্রথম ছবি বিধায় পরিচালক ক্ষমা পেতে পারেন কিছু জায়গায়, তবে দ্বিতীয় ছবিতে আশা করি এসব জায়গাগুলোতে আরও পরিপক্ক হবেন।
সিনেমাটিতে রয়েছে পরিমিতিবোধ। শব্দসৃষ্টি, আবহ সঙ্গীত ও দৃশ্যের গাঁথুনির মধ্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে গা ছমছম করা পরিবেশ। রাইসুল ইসলাম আসাদ, লুৎফর রহমান জর্জ ও মাহমুদুল ইসলাম মিঠুর অভিনয় ছিলো দুর্দান্ত। অন্যদের সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও অভিনয় ফুটে উঠতে পারেনি অন্যদের। জান্নাতুন নূর মুনের অভিনয়ে আরও দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন আছে। শাহেদ আলী, বীথি রানী সরকার, আশিষ খন্দকারের অভিনয় দুর্দান্ত হওয়ার সুযোগ ছিলো। আরিফ অর্ককে আরও ট্রেইন করার দরকার ছিলো।ঋতু সাত্তারের জন্যও একই বয়ান। গতানুগতিক অভিনয়ের বাইরে ফেরদৌস নিজেকে ভালোভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
সিনেমাটোগ্রাফি ভা্ল করা যেত। তবে আলোর ব্যবহারে ত্রুটি লেগেছে। আবহ সঙ্গীত ভালই। তবে পরিচালক দ্বিতীয় ছবি আরও ভাল করবেন। হিচকক দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে হিচকককে ঠিকঠাক ধারণ করবেন এ প্রত্যাশা। সিনেমার কাহিনী বর্ণনা করলাম না। দর্শক হলে গিয়ে মিলিয়ে নেবেন। ঠকবেন না আশা করি। উসুল হবে টিকিটের টাকা।