নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় ফিল্ম আর্কাইভ। হাঁটি হাঁটি পা পা করে ৪০ বছরে পদার্পণ করলো প্রতিষ্ঠানটি। আর্কাইভের ৪০ বছর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আর্কাইভের আগারগাঁওয়ের নতুন ভবনে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী চলচ্চিত্র প্র্রদর্শনী ও আলোচনা সভা।
আর্কাইভ চত্ত্বরে দিনব্যাপী উৎসব ভাব ছিলো। এখানে সেখানে সাঁটানো বাংলা চলচ্চিত্রের নান্দনিক সব পোস্টার আর বেলুন। দিনব্যাপী ধ্রুপদী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সেমিনার ও আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়।
বিকালে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে এ দিনটির উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। অনুষ্ঠানে তথ্যসচিব আবদুল মালেক, চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক শচীন্দ্র নাথ হালদার অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের এ দিনকে ফিল্ম আর্কাইভ দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ফসল হিসেবে ১৯৭৮ সালে এক সরকারি ঘোষণায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট অ্যান্ড আর্কাইভ’ গঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৪ সালে এনাম কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ‘বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ’ নামে নতুন করে পথচলা শুরু হয়।
বহু বছর ভাড়া করা ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো প্রতিষ্ঠানটি। সচিবালয়ের ছোট্ট একটি কক্ষে কার্যক্রম শুরু হয়ে পরে বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। সবশেষে গত বছরের ৩০ জুন ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আগারগাঁওয়ে ১.১২ একর জমির ওপর আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত ফিল্ম আর্কাইভের নিজস্ব ভবন নির্মিত হয়েছে। এ ভবনেই এখন ফিল্ম আর্কাইভ।
তথ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেন, যাদের ইতিহাস নেই, তারা ইতিহাস ধ্বংস করে। শেখ হাসিনা ইতিহাসের পক্ষে তাই আর্কাইভ গড়েছেন। কারণ আর্কাইভ সঠিক ইতিহাস রক্ষা করে। সংস্কৃতিচর্চায় জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পরম যত্নবান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই আজ দেশের ফিল্ম আর্কাইভটি এখন বিশ্বমানের। আর ২০২১ সালের বিশ্ব ফিল্ম আর্কাইভ কংগ্রেস ঢাকায় আয়োজনের সম্মান দেশের একটি বড় অর্জন।
এরপর অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ: ৪০ বছরের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক সেমিনার। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখক, গবেষক ও শিক্ষক অনুপম হায়াৎ। প্রবন্ধে আর্কাইভের বর্তমান অবস্থাসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি।
আলোচক ছিলেন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ খ্যাত নির্মাতা আমজাদ হোসেন, ‘চাকা’ নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম ও ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।
নির্মাতা আমজাদ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক চেতনা, শ্রেণি সংগ্রাম, ইতিহাস-সঙ্গীতের ওপর ভালো দখল না থাকলে ভালো ছবি হবেনা। চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থায় নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। ইউরোপেও আজকে সিনেমার খরা চলছে। আমরা তো এখন অস্তগামী সূর্য। তারুণ্যের হাত ধরে সুদিন ফিরবেই।
নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম আর্কাইভের পুরো কতিত্ব বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করেন।
উৎসব আয়োজনে ১৯৩৫ সালে প্রমথেশ বড়ুয়ার নির্মিত দেবদাস ও ফরাসি নির্মাতা রবার্ট এনরিকোর নির্মাণে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ইনসিডেন্ট এট আউল ক্রিক’ দেখানো হয়। জহির রায়হানের অসমাপ্ত চলচ্চিত্র ‘লেট দিয়ার বি লাইট’ এর নির্বাচিত ফুটেজ প্রদর্শন করার কথা থাকলেও তাঁর পরিবারের আপত্তিতে তা দেখানো হয় না।