বিশেষ প্রতিবেদক :
২৮ ডিসেম্বর, বিশ্ব চলচ্চিত্র ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৮৯৫ সালের এই দিনে পৃথিবীতে প্রথম চলচ্চিত্র যাত্রার সূচনা হয়। ফ্রান্সের প্যারিসের গ্র্যান্ড ক্যাফেতে প্রথম দুই ভাই লুই লুমিয়ের ও অগাস্ত লুমিয়ের তাদের ক্যামেরায় তোলা এক মিনিটের চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন করে তাক লাগিয়ে দেন বিশ্বকে। তাদের দুই ভাই পৃথিবীতে লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় হিসেবে পরিচিত। তারা প্রথম এক মিনিট বা তার কম সময়ে ফিল্ম যেটুকু থাকতো তা দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তাদের প্রথম নির্মিত ছবি ৪৬ সেকেন্ডের‘ওয়ার্কারস লিভিং দ্য লুমিয়ের ফ্যাক্টরি’- একটি ফ্যাক্টরির কিছু শ্রমিক কাজ শেষে ফ্যাক্টরি থেকে বের হচ্ছে। যার বেশিরভাগ ছিলেন নারী শ্রমিক। এ সময় তারা নির্মাণ করেন, বেবি এ্যাট ব্রেকফাস্ট টেবিল, এ ট্রেন রিচেস দ্য স্টেশন, ওয়াটারিং দ্য গার্ডেন, ফিশিং ফর গোল্ড ফিশ প্রভৃতি। যেমন একটি শিশুকে তার বাবা মা খাইয়ে দিচ্ছে খাবার টেবিলে বসে, একটি স্টেশনে ট্রেন পৌঁছল প্রভৃতি। দুই ভাইয়ের এ চলচ্চিত্রযাত্রা বিশ্বময় ছড়িয়ে যায়। এর মাধ্যমে শুরু হয় এক নতুন ইতিহাসের যাত্রা।
সেই যাত্রায় শামিল হয় পুরো বিশ্ব। দেশে দেশে লুমিয়ের ভাইদের অনুসরণ করে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শনের হিড়িক পড়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে। চলচ্চিত্রের আবিস্কার, উদ্ভাবন, কারিগরি ও নান্দনিক উৎকর্ষ, তারকাপ্রথা চালু, স্টুডিও স্থাপন, সংগঠিত কোম্পানী গঠন, পদ্ধতিগত শিক্ষা, চর্চা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গবেষক, লেখক ও সাংবাদিক অনুপম হায়াৎ এর গবেষণা ও লেখার উৎস থেকে জানা যায়, এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা এডউইন পোর্টার (১৮৬৯-১৯৪১) প্রথম ১৯০২ সালে কাহিনীচিত্র ‘দ্যা লাইফ অব অ্যান আমেরিকান ফায়ারম্যান’ নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্র সম্পাদনার সূচনাও করেন তিনি। উত্তেজনাপূর্ণ এই চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম ডিজলভ ও ক্লোজআপ শট ব্যাবহার করেন।
বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবসের আরও খবর
⇒ বিশ্ব চলচ্চিত্রের এক বৈপ্লবিক দিন আজ
তিনি ১৯০৩ সালে নির্মাণ করেন ‘দ্যা গ্রেট ট্রেন রবারি’। যাকে বলা হয় পৃথিবীর সফল প্রথম কাহিনীচিত্র। সে সময় আরেকজন মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা ডেভিড ওয়ার্ক গ্রিফিথ চলচ্চিত্রে বিপ্লব ঘটান এক অর্থে। তিনি তাঁর চলচ্চিত্রে বিশাল সেট, বিপুল শিল্পী-কলাকুশলী দ্বারা ইতিহাসের সন্নিবেশ ঘটান তাঁর চলচ্চিত্রে। তিনি নির্মাণ করেন ‘বার্থ অব আ নেশন’ (১৯১৫), ইনটলারেন্সসহ (১৯১৬ ) বেশ কিছু সিনেমা। ১৯০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ওঠে চলচ্চিত্র কোম্পানী। ১৯১১ সালে শুরু হয় ‘হলিউড’ এর যাত্রা।
সোভিয়েত রাশিয়ায় ১৮৯৬ সালে লুমিয়ের ভাইদের মাধ্যমেই চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে তৈরি হয় রাশিয়ার চলচ্চিত্র। সেখানে আবির্ভাব ঘটে আইজেনস্টাইন, পুদভকিন, কোজিনংসেভ, দভজেংকোর মতো নির্মাতার। সেখানের চলচ্চিত্র রাশিয়ার বিপ্লবে অগ্রণী ভূমিকা পালণ করে। এছাড়া চলচ্চিত্র পৃথিবীর নানা দেশেরে সীমানা পেরিয়ে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, স্পেন, পোল্যান্ড, ইতালি, চীন, জাপান, ইরান, আলজিরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ ভারতবর্ষ ও বাংলা মুলুকেও এসে পৌঁছায়।
ভারতে প্রথম চলচ্চিত্র পদর্শন হয় বোম্বের ওয়াটসন হোটেলে ১৮৯৬ সালের ৭ জুলাই। লুমিয়ের ভাইদের প্রতিনিধি মরিস সেসতিয়ার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে এই প্রদর্শনী করেন। ১৮৯৮ সালে প্রথম বাংলায় চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন করেন ঢাকার মানিকগঞ্জের বকজুরি গ্রামের ছেলে হীরালাল সেন। তিনি প্রথমে দ্যা রয়েল বায়োস্কোপ কোম্পাণী গঠন করেন। তিনি প্রায় একশোর উপরে চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র, বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাণ করেন। তিনি ছিলেন প্রথম বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা যিনি প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।
১২৫ বছরের এক ক্ষুদ্র সময়ে চলচ্চিত্র শিল্প অনেকখানি এগিয়ে গেছে। তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় চলচ্চিত্রও অর্জন করেছে উৎকর্ষতা। চলচ্চিত্রশিল্পের বিকাশে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। বিশ্বের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের চলচ্চিত্রযাত্রা শুভ হোক। চলচ্চিত্র জীবনের মধ্যে যাপিত হোক জীবন।