বিশেষ প্রতিবেদক :
বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে ক্ষণজন্মা চিত্রনায়ক সালমান শাহ। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকে ঢালিউডে রাজত্ব করেছেন। মৃত্যুর ২৫ বছর পরও জনপ্রিয়তায় একটুকু ভাটা পড়েনি। বরং এখনও হাজারও তরুণের স্টাইলিশ আইকন তিনি। তরুণ চিত্রনায়কদের অনুকরণীয়। তাকে বলা হয় ঢালিউডের রাজপুত্র। তিনি এই সেপ্টেম্বরেই জন্মেছেন। চলেও গেছেন সেপ্টেম্বরে। তাঁর মৃত্যুদিন থেকে জন্মদিন অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর কালচারাল ইয়ার্ড আয়োজন করেছে সালমান শাহ স্পেশাল। এই আয়োজনে কালচারাল ইয়ার্ডে প্রকাশিত হবে সালমান শাহকে নিয়ে স্পেশাল ফিচার।
স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ
পুরো নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায়। গুনী পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের ছবি কেয়ামত থেকে কেয়ামত-এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন তিনি। তার নাম হয় সালমান শাহ। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি। এরপর একের পর এক ছবি করে হয়ে যান দেশের শীর্ষ চিত্রনায়ক।
অভিনীত সিনেমা
১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত। এই ছবিতেই নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়। এরপর একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিতে থাকেন তিনি। হয়ে উঠেন তরুণদের স্টাইলিশ আইকন, তরুণ-তরুণীদের স্বপ্নের নায়ক। এই স্বপ্নের নায়কের মৃত্যুর পর অনেক তরুণ-তরুণী আত্নহত্যা করেন বলেও বেশ খবর আসে।
চার বছরে সালমান শাহ প্রায় ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন। ১৯৯৪ সালে জহিরুল হক ও তমিজউদ্দিন রিজভী পরিচালিত তুমি আমার আকাশ, শিবলী সাদিকের অন্তরে অন্তরে, শাহ আলম কিরণের সুজন সখি, অনিক মহম্মদ হান্নান পরিচালিত বিক্ষোভ, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্নেহ, জীবন রহমানের প্রেমযুদ্ধ ছবিতে অভিনয় করেন।
১৯৯৫ সালে করেন শফী বিক্রমপুরীর দেনমোহর, দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর কন্যাদান, এম. এ. খালেকের স্বপ্নের ঠিকানা (বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ২য় সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা হিসেবে গণ্য। যার আয় প্রায় ১৯ কোটি টাকা)। হাফিজউদ্দিন পরিচালিত আঞ্জুমান, দিলীপ সোমের মহামিলন, তমিজউদ্দিন রিজভীর আশা ভালবাসা।
সালমান শাহকে নিয়ে আরও নিউজ :
⇒ প্রজন্মান্তরের তরুণদের আইকন সালমান শাহ
⇒ অন্তরে অন্তরে সালমান শাহ
১৯৯৬ সালে শাহ আলম কিরনের বিচার হবে, মালেক আফসারী নির্মিত এই ঘর এই সংসার, রানা নাসের পরিচালিত প্রিয়জন, মতিন রহমানের তোমাকে চাই, বাদল খন্দকার পরিচালিত স্বপ্নের পৃথিবী।
এ বছর সালমান শাহর মৃত্যুর পর মুক্তি পায় ছটকু আহমেদের সত্যের মৃত্যু নাই, জাকির হোসেন রাজুর জীবন সংসার, শিবলী সাদিকের মায়ের অধিকার, এম এম সরকার পরিচালিত চাওয়া থেকে পাওয়া। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় রেজা হাসমতের প্রেম পিয়াসী, নাসির খানের স্বপ্নের নায়ক, কাজী মোরশেদের শুধু তুমি, শিবলী সাদিকের আনন্দ অশ্রু।
আরও পড়ুন : সালমান শাহ থাকবে এই ঘর এই সংসারে
অভিনীত নাটক
সিনেমায় আসার আগে সালমান শাহ বেশ কিছু টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটক আকাশ ছোঁয়া, সৈকতে সারস, পাথর সময়, সব পাখি ঘরে ফেরে, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী ইত্যাদি।
সালমান শাহ’র পরিবার
সালমান শাহের পিতার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে পড়াশুনা করেন সালমান। একই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমীও তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকার ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ থেকে বি.কম. পাস করেন তিনি।
১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট তাঁর খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন সালমান শাহ।
রহস্যময় সালমান শাহ’র মৃত্যু
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনে নিজ বাসায় সিলিং ফ্যানের সাথে তাঁর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। ময়না তদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তাঁর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের ঝট কাটেনি এখনও। সালমান শাহ-এর মৃত্যুর জন্য তাঁর স্ত্রী সামিরাকে অভিযুক্ত করেছেন তাঁর মা নীলা চৌধুরী।
∴ পিবিআইর দাবি: শাবনূরকে নিয়ে পারিবারিক কলহে সালমানের আত্নহত্যা
সালমানের বাবা স্ত্রী সামিরা ও আরো কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলা এ হাত ও হাত ঘুরে এখন পিবিআইয়ের তদন্তাধীন রয়েছে। ২৪ বছরে অনেক জল ঘোলা হলেও এখনও অমীমাংসিত বাংলা চলচ্চিত্রের এই রাজপুত্রের মুত্যু রহস্য।