নিজস্ব প্রতিবেদক :
নন্দিত নির্মাতা ও উপস্থাপক হানিফ সংকেতের জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। সকল শ্রেণির মানুষের কাছে জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দীর্ঘ বিরতির পর আবারও অভিনয়ে ফিরছেন কিংবদন্তী অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার এটিএম শামসুজ্জামান এবং প্রবীণ অভিনেতা মাসুদ আলী খান। আগামী ২৯ নভেম্বর প্রচারিতব্য ‘ইত্যাদি’ অভিনয়ের দ্যুতি ছড়াবেন এই দুই কিংবদন্তি অভিনেতা।
বিটিভিতে প্রচারিতব্য এই অনুষ্ঠানের ইতোমধ্যেই তাদের দৃশ্যধারণ সম্পন্ন হয়েছে। এটিএম শামসুজ্জামান এবং মাসুদ আলী খানের দৃশ্য ধারণ করা হয় রাজধানীতে অবস্থিত ফাগুন অডিও ভিশনের নিজস্ব শুটিং স্পটে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ চার মাসেরও বেশি সময় ধরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। ওই সময় হানিফ সংকেত তার নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখতেন। একদিন এটিএম শামসুজ্জামান সুস্থ হয়ে ইত্যাদির ইত্যাদির মাধ্যমে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ইচ্ছে পোষণ করেন। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলে তাকে নিয়ে ইত্যাদির জন্য একটি নাট্যাংশ নির্মাণ করেন হানিফ সংকেত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, ‘কথায় আছে, রাখে আল্লাহ মারে কে। আমার যখন শারীরিক অবস্থা চরম খারাপ, তখন আমার অবস্থা জানতে পেরে অসংখ্য মানুষ আমার জন্য হাত তুলে দোয়া করলেন আল্লাহর কাছে। তাদের দোয়ায় আমি সুস্থ হয়ে আপনাদের সামনে ফিরে এসেছি। আমি যখন অসুস্থ ছিলাম তখন আমার মনে হচ্ছিল আমি কি আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারবো। আবার কি অভিনয় করতে পারবো। এই সময় ইত্যাদির হানিফ সংকেত আমার কাছে এলেন, আপনাকে আমরা নিয়ে যাবো, আপনার একটুও হাঁটতে হবে না। তিনি তার কথা রাখলেন। শুধু নিয়ে যাওয়াই নয়-চেয়ারে বসিয়ে কয়েকজনকে দিয়ে দোতালায় উঠালেন এবং ক্যামেরার সামনে দাঁড় করালেন। পরম ধৈর্য্য সহকারে বেশ সময় নিয়ে আমাদের পর্বটি ধারণ করলেন এবং শুটিং শেষে আবার বাসায় পৌঁছে দিলেন। তার আপ্যায়ন, শিল্পীর প্রতি সম্মান সবসময় আমার ভালো লাগে। এবারও তার সেবাযত্ন আমাকে মুগ্ধ করেছে।’
দর্শকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন-আমি যেন আগের মত অভিনয় করতে পারি, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার হায়াত আছে আপনাদের যেন আনন্দ দিতে পারি, সুখ দিতে পারি।’
এটিএম শামসুজ্জামান সম্পর্কিত আরও খবর :
⇒ কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান ফের হাসপাতালে ভর্তি
⇒ এটিএম শামসুজ্জামানের হাতে বুলুবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা
⇒ ভালো আছেন এটিএম শামসুজ্জামান, গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ
অপরদিকে দীর্ঘদিন অভিনয়ের বাইরে ছিলেন প্রবীণ অভিনেতা মাসুদ আলী খান। তাকেও ক্যামেরার সামনে দাঁড় করালেন হানিফ সংকেত। এ প্রসঙ্গে মাসুদ আলী খান বলেন, ‘প্রায় ৬ বছর আগে একটা দুর্ঘটনার ফলে আমার শিরদাঁড়ার একটা অংশ ভেঙ্গে যায়। ফলে আমার পক্ষে আর অভিনয় করা সম্ভব হতো না। অভিনয় করতে না পারলেও মনেতো একটা খেদ থাকেই। কারণ আমি নিয়মিত রেডিও-টেলিভিশনে অভিনয় করতাম। আর ইত্যাদি আমার অত্যন্ত প্রিয় একটা অনুষ্ঠান। এতে আমি বরাবরই অংশগ্রহণ করতাম। মনে একটা আশা পোষণ করছিলাম যে, যদি জীবনে কোন অনুষ্ঠান করা আর নাই হয় এই জীবন সায়াহ্নে এসে ইত্যাদির একটা পর্বে আমি অভিনয় করবোই। তাই এবার ইত্যাদির মাধ্যমে আপনাদের সামনে আসা। যতদিন বাঁচি আমি যেন মাঝেমধ্যে আপনাদের সাক্ষাৎ পাই। সেই দোয়া চাই।’
নির্মাতা হানিফ সংকেত বলেন, ‘বর্ষীয়ান এই অভিনয় শিল্পীরা আমাদের জাতীয় সম্পদ। আজকাল মিডিয়াতে দেখা যায় একটু বয়স হলে তার জন্য আর কোন চরিত্র থাকে না। কারণ অধিকাংশ নাটকেই কোন বাবা-মা বা বয়স্ক চরিত্র দেখা যায় না। আর কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার খোঁজ-খবর নেয়া শুধু সেলফিতেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে আমার নাটক বলেন, ইত্যাদি বলেন সবজায়গায়ই এইসব গুণী শিল্পীদের একটা বিশেষ স্থান থাকে। এই দুই গুণী অভিনেতা ইত্যাদির প্রায় নিয়মিত শিল্পী। দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর পরিবারের একজন সদস্য ফিরে এলে যেমন আনন্দ হয় ইত্যাদিতে আবার তাদের পেয়ে আমিও তেমনি আনন্দিত। যদিও তাদের এই দূরে থাকাটা ছিলো অসুস্থতার কারণে। তবে তাদের সেই অভিনয় দ্যুতি এখনও আছে। ইত্যাদির প্রতি তাদের এই ভালোবাসার কাছে আমি ঋণী।’