নিজস্ব প্রতিবেদক :
জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাষ দত্তের হাত ধরে সিনেমার নায়ক হিসেবে অভিষেক হয়েছিলো ইলিয়াস কাঞ্চনের। সময়টা সত্তরের দশকের শেষের দিকে। সেই যে শুরু এরপর আর থেমে থাকেন নি। আশির দশক ও নব্বই দশক দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সিনেমার ইন্ড্রাস্ট্রি। হয়েছিলেন পর্দার সেরা নায়ক। কিন্তু হঠাৎ-ই জীবনের ছন্দপতন। বহু ছবির ট্রাজিক হিরো বাস্তবে ট্রাজিডির মুখোমুখি। সড়ক দুঘর্টনায় স্ত্রীবিয়োগ। শোকে মুহ্যমান নায়ক বিদায় নিতে চেয়েছেন পর্দা থেকে। কিন্তু ভেঙ্গে না পড়ে এক সময় উঠে দাঁড়ালেন। নেমে পড়লেন রাস্তায়।
সড়কে যেন কোন প্রাণ হরণ না হয় সে জন্য গড়ে তোলেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন। ২৬ বছরের আন্দোলনে ইলিয়াস কাঞ্চন হয়ে উঠেন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে। হয়ে উঠেন হাজারো মানুষের আস্থার জায়গা। যার পেছনে থেকে যে কোন আন্দোলনে এগিয়ে যাওয়া যায়। চলচ্চিত্রের পর্দার নায়ক থেকে তিনি হয়ে উঠেন বাস্তব জীবনে সবার মহানায়ক। এই কিংবদন্তি মহানায়কের ৬৩তম জন্মদিন আজ। কালচারাল ইয়ার্ড পরিবার ইলিয়াস কাঞ্চনকে জানাচ্ছে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।
বাংলাদেশের বৃহৎ সামাজিক আন্দোলন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। জন্মেছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় আশুতিয়াপাড়া গ্রামে ১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর। বাবার নাম হাজী আব্দুল আলী, মাতার নাম সরুফা খাতুন।
ইলিয়াস কাঞ্চনের আরও খবর :
⇒ শুভ জন্মদিন সেরা নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন
⇒ ইলিয়াস কাঞ্চনকে অপমানের প্রতিবাদে শিল্পীদের মানববন্ধন
১৯৭৫ সালে কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন তিনি। কৈশোর থেকেই অভিনয় করতেন। যুক্ত ছিলেন নাট্য সংগঠনের সঙ্গে। কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাষ দত্তের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন ১৯৭৭ সালে। প্রথম সিনেমা ‘বসুন্ধরা’। সেই ছবিতে ববিতার বিপরীতে নায়ক হয়েছিলেন তিনি।
তিনি একই সাথে রোমান্টিক, অ্যাকশন, কমেডিয়ান ধাঁচের সিনেমা করেছেন। পরিবারের সুবোধ বালক হিসেবেও বেশ কিছু সিনেমায় দেখা গেছে তাঁকে। ৩০০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ সিনেমাটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসা সফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র।
১৯৭৯ সালে জাহানারা কাঞ্চনকে বিয়ে করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর বান্দরবানে একটি চলচ্চিত্রের শুটিং করছিলেন তিনি। ঢাকা থেকে তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান তার কাছে আসছিলেন গাড়িতে। চট্টগ্রামের অদূরে চন্দনাইশের পথে একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় ইলিয়াস কাঞ্চনের সব কিছু। সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তার প্রিয়তমা স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। এরপর শোকাহত ইলিয়াস কাঞ্চন ঘোষণা দেন চলচ্চিত্র জগত থেকে দূরে সরে যাওয়ার।
কিন্তু এক সময় শোককে শক্তিকে পরিণত করেন তিনি। নামেন রাস্তায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে। পর্দায় মানুষের দু:খ-দুর্দশা দুর করার জন্য নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হতেন মিছেমিছি। সেই পর্দার নায়ক এবার সত্যি সত্যিই আবির্ভূত হলেন বাস্তবের মহানায়ক হিসেবে। ২৬ বছর ধরে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। এ জন্য তাকে অনেকের চক্ষুশূলও হতে হয়েছে। পদে পদে বাধা-বিপত্তি এসেছে। এরপরও তিনি থেমে থাকেননি। এগিয়ে যাচ্ছেন সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে।
১৯৮৬ সালে তিনি পরিণীতা সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে যৌথভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০০৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্র অভিনেতা হিসেবে শাস্তি সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কার পান। ২০১৮ সালে সমাজ সেবার জন্য তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।