নিজস্ব প্রতিবেদক:
চলচ্চিত্র আন্দোলনের দিকপাল, চলচ্চিত্র শিক্ষক, নির্মাতা, সমালোচক ও মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর কবির। বিপ্লবী মন্ত্রে যিনি ছিলেন সিদ্ধ। লন্ডনের উচ্চতর ডিগ্রির সনদ ছিড়ে ফেলে চলে এসেছিলেন বাংলাদেশে। তুলে নিয়েছিলেন ক্যামেরা। যে ক্যামেরা ব্যবহার হয়েছিলো অস্ত্র হিসেবে। সেই অস্ত্র দিয়ে তুলেছেন একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নির্মমতার চিত্র। বাংলাদেশের বিকল্প চলচ্চিত্রের অন্যতম অগ্রসেনানী চলচ্চিত্রের বিপ্লবী আলমগীর কবিরের জন্মদিন আজ। এই দিনে গুণী এই চলচ্চিত্রকারের প্রতি কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের শ্রদ্ধা।
১৯৩৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাঙামাটি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আলমগীর কবির। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের অসামান্য সৃষ্টি মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য দলিল ‘স্টপ জেনোসাইড’-এর চিত্রনাট্য করেছেন। জহির রায়হানের সঙ্গে থেকে পুরো কাজে সহায়তা করেছেন।
নিজে নির্মাণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘লিবারেশন ফাইটার্স’। আলমগীর কবির একে একে নির্মাণ করেছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ধীরে বহে মেঘনা, সীমানা পেরিয়ে, রূপালী সৈকতে, সূর্যকন্যা, পরিণীতা, মোহনা, মণিকাঞ্চন প্রভৃতি। নির্মাণ করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র কালচার ইন বাংলাদেশ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। তাঁর তিনটি চলচ্চিত্র ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউটের ‘বাংলাদেশের সেরা ১০ চলচ্চিত্র’ তালিকায় স্থান পেয়েছে।
বিপ্লবী চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির সম্পর্কে আরও খবর
⇒ চলচ্চিত্রের সীমানা পেরিয়ে বিপ্লবী আলমগীর কবির
⇒ চলচ্চিত্রাচার্য আলমগীর কবিরের প্রয়ান দিবস আজ
আলমগীর কবির ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে মেট্রিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৪ সালে হায়ার সেকেন্ডারি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগ থেকে ১৯৫৮ সালে অনার্স করেন। এরপর লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। অর্জন করেন ফলিত গণিতে বিএসসি ডিগ্রি।
দেশের তরুণ-তরুণীদের আধুনিক চলচ্চিত্রের ভাষা সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা ফিল্ম ইনস্টিটিউট। এ সময় তিনি মওলানা ভাসানীর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রের কাজ শুরু করেন।
বাংলা একাডেমির উদ্যোগে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ফিল্ম ইন বাংলাদেশ ও শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম তিনটি ছবির চিত্রনাট্যের বই ‘চিত্রনাট্য’। এ দেশে চিত্রনাট্যের ওপর এটাই ছিল প্রথম বই। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ও ইনস্টিটিউটে চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রশিক্ষণ কাজ শুরু হলে তিনি সেই কোর্সের সমন্বয়কারী নিযুক্ত হন এবং প্রশিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেন। সেই বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ এর স্মরণিকাও প্রকাশ করেন তিনি।
১৯৬৮ সালে মঞ্জরা বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। বিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি। এরপর তিনি ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন অভিনেত্রী জয়শ্রী কবিরকে। তিনি ছিলেন ৩ কন্যার জনক।
১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি বগুড়া চলচ্চিত্র সংসদের একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেথান থেকে ঢাকায় ফেরার পথে নগরবাড়ী ফেরিঘাটে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বরেণ্য এই চলচ্চিত্রকার।