রোমান কবির :
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি ঋত্বিক কুমার ঘটক। চলচ্চিত্র সংস্কৃতি নিয়ে সত্যিকার যারা কাজ করেন বা করতে চান তাদের চেতনায় বিরাজমান ঋত্বিক। ঋত্বিককে বাদ দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্র চর্চা সম্ভব নয়। তেমনিভাবে ঋত্বিকের চলচ্চিত্র বুঝতে হলে, তাঁর মননে যে যন্ত্রনা ফুটে উঠেছে সেটিকে বুঝতে হলে তাঁকে চেতনা ধারায় এসে স্মরণ করতে হবে। এই চলচ্চিত্রকারের প্রয়াণ দিবস আজ। চেতনা ধারায় এসে ঋত্বিককে স্মরণ করছে কালচারাল ইয়ার্ড পরিবার।
১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার ঋষিকেশ দাস লেনের ঝুলন বাড়িতে জন্মেছিলেন ঋত্বিক কুমার ঘটক। তাঁর কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে রাজশাহীতে। ১৯৪৬ সালে মাত্র একুশ বছর বয়সে দেশভাগের কারণে বাবা-মায়ের সাথে পাড়ি জমাতে হয়েছে পশ্চিমবাংলায়। এই দেশভাগের যন্ত্রনায় তিনি ভুগেছেন সারাজীবন। নিজের যন্ত্রনা ফুটে উঠেছে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে। তাঁর উল্লেখযোগ্য নির্মাণ দেশভাগ নিয়ে তার ট্রিলজি মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০), কোমল গান্ধার (১৯৬১) এবং সুবর্ণরেখা (১৯৬২)। তাঁর চলচ্চিত্রে দেশত্যাগী, বাস্তুচ্যুত, ছিন্নমূল, দলছুট, নির্বাসিত মানুষের কথা উঠে এসেছে।
ঋত্বিক ঘটক বলতেন, সিনেমা আমার কাছে শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার হাতিয়ার। তিনি দেশভাগকে মেনে নেননি। তিনি একের পর এক সিনেমা বানিয়েছেন। তাঁর যন্ত্রনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। বিপ্লব করেছেন সিনেমার মাধ্যমে। ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৫০ বছর বয়সে হাসপাতালে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে মারা যান ঋত্বিক ঘটক।
এই বাংলার জন্য যিনি সারাজীবন কেঁদেছেন। নিজের ভিটেমাটির জন্য হাহাকার করেছেন, সেই মাটিতে রাজশাহীতে অবস্থিত তার পৈতৃকভিটা শত্রু সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হয়েছে। যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শেষমেষ ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতিকর্মীদের বাধার মুখে তা সম্ভব হয়নি।
ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্র, নাটক ও পুরস্কার :
ঋত্বিক ঘটকের প্রথম ছবি ‘নাগরিক’। এটি মুক্তি পায় তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৭৭ সালে। এছাড়া তিনি নির্মাণ করেন অযান্ত্রিক (১৯৫৮), বাড়ী থেকে পালিয়ে (১৯৫৮), মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০), কোমল গান্ধার (১৯৬১), সুবর্ণরেখা (১৯৬২), তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩), যুক্তি তক্কো আর গপ্পো (১৯৭৭), মুসাফির (১৯৫৭), মধুমতী (১৯৫৮), স্বরলিপি (১৯৬০), কুমারী মন (১৯৬২), দ্বীপের নাম টিয়া রং (১৯৬৩), রাজকন্যা (১৯৬৫), হীরের প্রজাপতি (১৯৬৮)।
১৯৭৩ সালে তিনি অদ্বৈত মল্লবর্মনের উপন্যাস অবলম্বনে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ নির্মাণ করেন। ছবিটি ছিলো বাংলাদেশী প্রযোজিত। ১৯৭৪ সালে তিনি নির্মাণ করেন তাঁর জীবনের শেষ চলচ্চিত্র যুক্তি তক্কো আর গপ্পো। এটিকে তার আত্মজীবনীমূলক সিনেমা বলা হয়।
এছাড়া তিনি বেশকিছু তথ্যচিত্র ও নাটক নির্মাণ করেছেন। তিনি চলচ্চিত্র ও নাটকে অভিনয়ও করেছেন।
ঋত্বিক কুমার ঘটক পদ্মশ্রী পুরস্কার ও জাতীয় পুরস্কাসহ চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বেশকিছু পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৬৫ সালে তিনি স্বল্প সময়ের জন্য পুনের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ইনস্টিটিউটের ভাইস-প্রিন্সিপাল হন।