নিজস্ব প্রতিবেদক:
সবেমাত্র মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে। স্বাধীন দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা শুরু করলেন চলচ্চিত্র প্রযোজনা। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় নির্মাণ হলো সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’। সিনেমাটি ইতিহাস হয়ে রইলো। ছবিটির মুক্তিযোদ্ধা ও প্রযোজক ছিলেন মাসুদ পারভেজ। সেই প্রযোজকও এখন জীবন্ত ইতিহাস, জীবন্ত কিংবদন্তি। পরের বছর তিনি চলচ্চিত্র নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হলেন। হলেন সবার প্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল রানা। চিত্রনায়ক, প্রযোজক ও পরিচালক সোহেল রানার আজ জন্মদিন ।
১৯৪৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
১৯৭৩ সালে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র মাসুদ রানা সিরিজের একটি গল্প দিয়ে তৈরি হলো সিনেমা। সিনেমার পরিচালক ও চিত্রনায়ক ছিলেন সোহেল রানা। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম মাসুদ রানা হিসেবে পর্দায় আবর্তিত হলেন। গত চার দশকে তিনি অসংখ্য সিনেমায় নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। প্রথম ছবিতে গোয়েন্দা চরিত্রের সোহেল রানা পরবর্তীতে রোমান্টিক ও অ্যাকশন ধারার সিনেমায় অভিনয় করেন।
সত্তর দশকে তাঁর অভিনীত হিট সিনেমার মধ্যে রয়েছে মাসুদ রানা, এপার ওপার, গুনাহগার, মিন্টু আমার নাম, হাইজ্যাক, প্রতিহিংসা, দুস্ত দুশমন চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি। আশি ও নব্বই দশকে সোহেল রানার হিট সিনেমা লালু ভুলু। পেনশন, বীর পুরুষ, কমান্ডার, শক্তির লড়াই, বিশ্বপ্রেমিক, হাঙর নদী গ্রেনেড, সাহসী মানুষ চাই ইত্যাদি। এছাড়া তিনি ২০০৭ সালে স্বামীর সংসার, ২০১০ সালে খোঁজ – দ্যা সার্চ, ২০১২ সালে রাজা সূর্য খাঁ ও ২০১৩ সালে জজ ব্যারিস্টার সিনেমায় অভিনয় করেন।
সোহেল রানার আরও খবর
⇒ ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে সোহেল রানার সিনেমা
এছাড়া তিনি গুনাহগার, নাগপূর্ণিমা, লড়াকু, বীরপুরুষ, বজ্রমুষ্ঠি, ঘেরাও, জবাব, এপার ওপার, জীবন নৌকা, যাদুনগর, চোখের পানি, খাইছি তোরে, রিটার্ন টিকিট, মায়ের জন্য পাগল, ঘরের শত্রু, শত্রু সাবধান, ভালবাসার মূল্য কতসহ অনেকগুলো সিনেমা পরিচালনা ও প্রযোজনা করেন। তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান পারভেজ ফিল্মস’র ব্যানারে সিনেমাটি নির্মিত হয়।
সোহেল রানা মোট তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮৩ সালে লালু ভুলু ও ১৯৯৬ সালে অজান্তে সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া ২০০৩ সালে সাহসী মানুষ চাই সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ২০১৫ সালে তিনি ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন।
সোহেল রানা একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে নয় মাস অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার পরে প্রযোজনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’। অনেক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা পরিচালনা ও এতে অভিনয়ও করেছেন। ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ষাটের দশকের তুখোড় ছাত্রনতো ছিলেন তিনি। এখনও তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত। ২০০৯ সালে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।