![সরকারকে এই ক্রান্তিকালে এগিয়ে আসতে হবে : রবিন খান](https://culturalyard.com/wp-content/uploads/2020/06/Director-Robin-Khan-Cultural-Yard.jpg)
পরিচালক, নাট্যকার ও প্রযোজক রবিন খান। তিনি নীল নাকফুল, ডেউয়া পোলাউ ডটকম, নায়ক জামাই, শিউলির বিয়ে, অজানা আতঙ্ক, সাগরের সবুজ ডায়েরি, ছায়ামানবীসহ অসংখ্য জনপ্রিয় টেলিভিশন নাটক নির্মাণ করেছেন। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন, মালেক আফসারী, কামাল আহমেদসহ অনেকের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ইতোমধ্যে আরকে মুভিজের প্রযোজনায় ‘মন দেব মন নেব’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ঈদে ছবিটি মুক্তির কথা থাকলেও করোনার কারণে সেটি সম্ভব হয় নি। সম্প্রতি তিনি করোনাকালীন সময়ে নাটক ও চলচ্চিত্রের নানা বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সঙ্গে কথা বলেন।
কালচারাল ইয়ার্ড : এই গৃহবন্দি সময়ে আপনার পরিবর্তীত জীবনাচরণ ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে চাই।
রবিন খান : বেশ তো অনেকদিন হয়ে গেলো গৃহবন্দি জীবনের। যদিও এই গৃহবন্দিতা এক ভিন্ন ধরণের জীবন ব্যবস্থা বলা যায়। এই ব্যবস্থায় আমাদের জীবনাচারে ভিন্ন ধরণের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আগে ছিল রুটিনবদ্ধ কর্মময় জীবন আর এখন কোনো রুটিন নেই। অফুরন্ত অবসর। তবে এই অবসরের মাঝেও সাধ্যমত দীর্ঘ লকডাউনে থাকা নিম্ম আয়ের মানুষগুলোর জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। গ্রামের মানুষগুলোর খবর নিচ্ছি। করোনা পরবর্তীকালে নিজস্ব প্রোডাকশন ও ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে কিছু প্ল্যান করছি। এটাও ঠিক কখনও কখনও খুব বোর ফিল করছি।
আর যদি বোধের কথা বলেন, তাহলে বলবো, করোনা আমাদের চিন্তার জগতে এক বিরাট পরিবর্তন এনে দিয়েছে। প্রথম বোধ হচ্ছে, আমরা আমাদের জীবনকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। আমরা কেউ মরতে চাইনা। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আমরা জীবন নিয়ে যত প্ল্যানই করিনা কেন সবচেয়ে বড় প্ল্যানার হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা নিজে। কেউ কি ভেবেছিলো সারা পৃথিবী এভাবে থমকে যাবে একটি অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাসের কাছে। আমাদের চিন্তার বাইরেও আর এক জগৎ আছে যার নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই! এছাড়াও প্রকৃতির উপর মানুষের যে অব্যাহত নিদারুণ অত্যাচার এ বিষয়েও ভাববার সময় করে দিয়েছে করোনা। কেননা ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’ বলেও একটি কথা আছে। আমাদের সবারই উচিত হবে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে নিজেদের বাঁচতে শিখা
করোনাকালে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ভাবনা
⇒ ‘শুটিং না করে ঘরে থাকার নীতিতে অটল থাকার কোনো বিকল্প নেই’
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে চলচ্চিত্র বা নাটক কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন।
রবিন খান : দেখুন, আমি মনে করি এই করোনাকালে নাটক সিনেমাতো তৈরি করা যাচ্ছে না, সেই পরিবেশও নেই যে, নাটক বা সিনেমার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা যাবে বা কোনো ম্যাসেজ দেয়া যাবে। এটা সম্ভব হবে করোনা উত্তরকালে অথবা করোনা যদি আমাদের সাথে থেকেই যায়, তখন ভিন্ন আঙ্গিকে ছবি বা নাটক তৈরি করে দর্শকদেরকে বিভিন্ন ধরণের ম্যাসেজ বা বার্তা দেয়া যাবে। কারণ সিনেমা বা নাটক তো শুধু নিছক বিনোদন নয়, আমাদের মতো নির্মাতাদের একটা সামাজিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে।
তবে এই করোনা মহামারী আমাদের দেশের চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনে এক বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করে দিয়েছে যার ধকল কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় নিবে। আমাদেরকে নতুন করে পরিকল্পনা করে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কাজ করে যেতে হবে। আমাদের সংস্কৃতির এই শক্তিশালী দুটো মাধ্যমকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করতে শিল্পবান্ধব সরকারকেও এই ক্রান্তিকালে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা এই দুটি অঙ্গনের সাথে বহু মানুষের রুটি রুজি জড়িত রয়েছে।
কালচারাল ইয়ার্ড : এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দি হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় কি মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা।
রবিন খান : দেখুন, এই যে লকডাউনের পাথর সময় তা কাটিয়ে উঠতে মানুষ নানাবিধ সৃজনশীলতাকে বেছে নিয়েছে যাতে করে একগুঁয়েমীতে পেয়ে না বসে। এই অখণ্ড অবসর কিন্তু সৃজনশীল মানুষদের একটা সুযোগ করে দিয়েছে তাঁর সৃজনী শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর। দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনে কোনো সৃজনশীল কাজে আমরা নিবিড়ভাবে মনোসংযোগ করতে পারি নি, কিন্তু এই লকডাউনে কিন্তু আমরা তা পারছি। জীবনকে এক নতুন আঙ্গিকে দেখার এ সুযোগ আমাদের নতুন নতুন সৃজনশীলতার দ্বার উন্মুক্ত করে দিচ্ছে এটা ঠিক।
কোভিড-১৯ নিয়ে তারকাদের কথা
⇒ আগামীতে একটা ইতিবাচক সাংস্কৃতিক বিশ্ব আমরা দেখতে পাবো: নিরব
আর মানবিকতার যে কথা বলছেন, তা তো বাঙালীর সহজাত প্রবণতা। যে কোনো দুর্যোগ দুর্বিপাক কিংবা জাতীয় সংকটে বাঙালি মানবিকতার প্রশ্নে একাট্রা। করোনার মতো মরণঘাতী মহামারীতেও কিন্তু মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে সারা দেশের মানুষ করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যে যার সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষের এমন দুঃসময়ে প্রশাসন, করোনার সম্মুখ যোদ্ধা ডাক্তার, পুলিশ বাহিনী, দেশপ্রেমিক সেনা বাহিনী, মিডিয়া কর্মী সবাই মানবিক মানসিকতা নিয়ে করোনা সংকট মোকাবেলায় দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এমন মানবিক দেশ আপনি কোথায় পাবেন ?
কালচারাল ইয়ার্ড : অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
রবিন খান : এই করোনাকালীন অবসরে কত স্মৃতি যে মনে পড়ছে। সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে আমার শৈশবের স্মৃতি। স্কুলে পড়ি তখন। খুব ভালো ফুটবল খেলতাম। ভোর বেলায় চলে যেতাম বল নিয়ে মাঠে। আমাদের স্কুল টিমে আমি ছিলাম গোল কিপার। সেই ভোর বেলায় কাঁদা পানিতে মাখামাখি করে ফুটবল খেলে স্কুলের পাশের পুকুরেই দিতাম ঝাঁপ। গোসল থেকে সেরে উঠার পর আমাদের গেম টিচার কলা আর সিদ্ধ ডিম খেতে দিতেন। আহ জীবনেতো এরপর কত ডিম কলাই খেলাম কিন্তু আমার শৈশবের সেই ডিম কলার সাধ আর কোথাও পেলাম না। গৃহবন্দির এই দিনগুলোতে আমার সেই মুক্ত বিহঙ্গের মতো শৈশব, কৈশোরের দিনগুলো খুব বেশি মনে পড়ছে। ভালো ফুটবলার হিসেবে উত্তরবঙ্গের কতো মাঠ আমি দাঁপিয়ে বেড়িয়েছি। রবী ঠাকুরের ভাষায়, “ দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলো না, সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।”
বৈশ্বিক মহামারী করোনা নিয়ে সঙ্গীতশিল্পীদের দৃষ্টিভঙ্গি :
♦ এখন অনেকেই সংস্কৃতিচর্চার নামে ভাঁড়ামি করছে : ফাহিম ফয়সাল
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন।
রবিন খান : করোনা পরবর্তী পৃথিবী শুধু সংস্কৃতিসেবী বা সাংস্কৃতিক মানুষের জন্যই নয় সব শ্রেণী পেশার মানুষের জন্যই এক নুতন পৃথিবী হবে। যেহেতু সাংস্কৃতিক মানুষেরা একটু স্পর্শকাতর আবেগী মানুষ হয় তাই তাঁদের মনোজগতেও আসবে বিশাল পরিবর্তন। জীবন দর্শনে আরো বেশি ইতিবাচকতা। মেধা ও মননে হবে আরও বৈশ্বিক, আরো উদার মানবিক। কেননা মানুষের জীবন কত তুচ্ছ, মানুষের ধন দৌলত সব কিছুকে ছাপিয়ে মানুষ জীবনকে আরও বেশি ভালোবাসতে শিখবে। আর সংস্কৃতিসেবীরা সেই ভালোবাসা সমাজের বিভিন্ন স্তরে পৌঁছে দেবেন তাদের সৃজনশীল কর্ম নাটক, সিনেমা ও নানাবিধ মাধ্যম দিয়ে। যেখানে থাকবে মানব ও মানবিকতার জয়গান!
কালচারাল ইয়ার্ড : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
রবিন খান : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।