নিজস্ব প্রতিবেদক:
সম্প্রতি ভারতের মহারাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ছত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ বাংলাদেশী ফিল্ম হিসেবে পুরস্কার জিতেছে ড. জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ এবং গোলাম মোস্তফা প্রযোজিত ও নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘ও সোহাগী’। এর আগে গুজরাটের নিউ নরমাল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০-এ বেস্ট উইমেন সোস্যাল অ্যাওয়ারনেস ফিল্ম পদক অর্জন করেছে ছবিটি।
নির্মাতা ড. জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ কালচারাল ইয়ার্ডকে জানিয়েছেন, ছবিটি আন্তর্জাতিক আরও বেশ কিছু প্লাটফর্মে লড়ছে। ছবিটি ধাপে ধাপে এগিয়েও যাচ্ছে বিভিন্ন প্লাটফর্মে। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র লিফট-অব গ্লোবাল নেটওয়ার্কে বাংলাদেশের একমাত্র চলচ্চিত্র হিসেবে ছবিটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রথম রাউন্ডে বিজয়ী হয়। এখন ছবিটি ফাইনাল রাউন্ডে লড়ছে। এছাড়া স্বল্পদৈর্ঘ্যটি ‘রোশনাই’ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অফিসিয়াল মনোনয়ন পেয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের ঢাকায় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ও সোহাগী’ প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচিত হয়েছে। ছবিটি এ উৎসবের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রিমিয়ার হবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা ড. জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ ।
‘ও সোহাগী’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত ও স্বীকৃতি পাওয়ায় এ ছবির টিমের সকল সদস্য, বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নির্মাতা।
ও সোহাগী- সিনেমাটি স্বপ্নবঞ্চিত নারী-শিশুর বৃত্তাকার জীবনের বিয়োগান্ত উপাখ্যান। বিশ্বময় সমাজের সর্বত্র আমাদেরই মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় পুরুষের ঘৃণ্য লালসা ও ভয়াল পাশবিকতার থাবা ভালোবাসার অগণিত শিশু, কিশোরী ও নারীর স্বপ্ন-সম্ভাবনাকে গ্রাস করে অবলীলায়। আবহমানকালের ক্ষয়িষ্ণু বাস্তবতার সেই অন্ত:ক্ষরণ, স্বপ্নভাঙা মানব হৃদয়ের বেদনা ও অপূর্ণ জীবনের অব্যক্ত বিলাপ এ কাহিনীতে রূপক ও বহুস্তর জাদুময় ব্যঞ্জনায় প্রকাশিত।
জাহাঙ্গীর মোহাম্মদের সঙ্গে ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন গোলাম মোস্তফা। নাহার কৃপার চিত্রনাট্যে ছবিটির চিত্রগ্রহণ করেছেন রাকিবুল হাসান। দ্বিতীয় ইউনিটের ক্যামেরা ও ড্রোন পরিচালনা করেছেন আহমেদ হিমু। অভিনয় করেছেন সমন্বিত বর্ধণ, মোহাম্মদ রফিক, রওনক রিপন ও ঝুমুর আসমা জুঁই। সম্পাদনায় ছিলেন দেবাশীষ ডুব ও পোস্ট প্রডাকশন সুপারভাইসার হিসেবে ছিলেন চৈতালি সমাদ্দার। শিল্প নির্দেশনায় উত্তম গুহ ও সঙ্গীত পরিচালনায় সায়েম রানা। ছবিটি প্রযোজনার সঙ্গে আরও যুক্ত ছিলেন আবু জায়েদ, রহমতউল্লাহ।
উল্লেখ্য, ড, জাহাঙ্গীর মোহাম্মদের পুরো নাম ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কবি, লেখক, গবেষক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সুপরিচিত। তিনি ১৮টি গ্রন্থ ও ৫৬টি প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর নির্মিত তিনটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র- উদ্ভাস্তু (১৯৮৮), নিরুদ্দেশ (২০০৫), এবং ও সোহাগী (২০২০)। তাঁর রচিত পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার চিত্রনাট্য ‘হিরালাল সেন: দ্যা ওরিয়েন্টাল সিনে-ফাদার ইগনোর’নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে চলচ্চিত্র পরিচালনা বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করেন।
ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান নির্বাহী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ও চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে জুরি বোর্ড এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও মিডিয়ার নীতি-নির্ধারণী কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন।