নিজস্ব প্রতিবেদক:
গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ। কথায়, সাহিত্যে ও চলচ্চিত্রে গল্প বলতেন এ জাদুকর। তার এ জাদুতে বুঁদ হয়ে থাকতো প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। গত তিন প্রজন্ম তাঁর গল্পের জাদুতে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। এরপর হিমু, মিসির আলী, শুভ্র ও বাকের ভাইয়ের এই স্রস্টা পাড়ি জমিয়েছেন মহালোকে। আজ তাঁর জন্মদিন।
কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের পক্ষ থেকে এই জাদুকরের জন্মদিনে শ্রদ্ধা।
করোনার এই ভয়াল সময়েও তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আজ নুহাশ পল্লীর শ্যামল ছায়ায় বসেছে হিমু ও রুপাদের মিলনমেলা। হলুদ পাঞ্জাবি ও নীল শাড়ির তরুণ তরুণীরা এই শিল্পস্রস্টার সমাধিতে গিয়ে স্মরণ করছেন।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর শেষে করে সেখানে শিক্ষকতা করেন। এরপর একদিন শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে পুরোদস্তুর সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রে মনোনিবেশ করেন।
১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে। এই উপন্যাস দিয়ে তিনি পরবর্তীতে নির্মাণ করেন জননন্দিত চলচ্চিত্র। তিনি এরপর অসংখ্য জননন্দিত গল্প, উপন্যাস রচনা করেছেন। নাটক বানিয়েছেন। নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র।
হিমু, মিসির আলি, রূপা, শুভ্র, বাকের ভাইসহ অসংখ্য জনপ্রিয় চরিত্র সৃস্টি করেছেন। তরুণ-তরুণীদের কল্পনার সাগরে নিপতিত করেছেন। তিনি তাঁর সৃস্টিতে বৃষ্টিবিলাশ করেছেন। জোসনার আলোয় সাতার কেটেছেন। তরুণ প্রজন্মকে উপলব্ধি করা শিখিয়েছেন প্রকৃতির অপার মহিমায়।
নব্বই সালের গোড়ার দিকে হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ শুরু করেন চলচ্চিত্র। তাঁর প্রথম ছবি ‘আগুনের পরশমণি’ মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। এরপর ২০০০ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ২০০১ সালে ‘দুই দুয়ারী’ ও ২০০৩ সালে ‘চন্দ্রকথা’, ২০০৬ সালে ‘৯ নম্বর বিপদ সংকেত’, ২০০৮ সালে ‘আমার আছে জল’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পান তিনি। তাঁর সর্বশেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ২০১২ সালে মুক্তি পায়। সে বছরই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কিত আরও খবর
⇒ যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো …
২০০৪ সালে নির্মাণ করেন ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমাটি। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি ঘটনাকে উপজীব্য করে নির্মিত সিনেমাটি। ২০০৬ সালে সিনেমাটি ‘সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র’ বিভাগে অ্যাকাডেমি পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।
এছাড়া তিনি প্রচুর চলচ্চিত্রের মৌলিক গান লিখেছেন। তাঁর লেখা এ সব গান তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
তিনি তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের সেরা বেসামমরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। পেয়েছেন দেশ-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার।
হুমায়ূন আহমেদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মায়ের নাম আয়েশা ফয়েজ। তার দুই ভাই সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব।