নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্র। দিনে দিনে যেন বাড়ছে প্রতিযোগিতা। পুরোপুরি বাণিজ্যিক ঘরানা কিংবা কিছুটা স্বাধীন ধারা ও চিন্তাশীল চলচ্চিত্রে সবদিকেই আশা জাগানিয়া বাংলা চলচ্চিত্রের বাজার। গেল বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। গেল বছর সবমিলিয়ে মোট ৫৬টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে।
প্রথমেই যদি বলা যায় এফডিসি কেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের কথা। তবে বলতে হবে বছরের শুরু থেকে শেষ অবধি যৌথ প্রযোজনার ‘নবাব’, ‘বস টু’, কিংবা দেশীয় প্রযোজনার ‘রাজনীতি’ ও ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর বাণিজ্যিক সফলতা ও দর্শক আগ্রহ আশা জাগিয়েছে নতুন করে। চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক সফলতা পরিমাপের জন্য যেহেতু দেশে এখনও বক্স অফিস প্রথা চালু হয়নি, তাই আস্থা রাখতে হয়, প্রযোজক, পরিবেশক, নির্মাতাদের ওপর। কোন ছবির কতো আয় কিংবা কতো ব্যয় তার সঠিক পরিমান জানতে অনুমান কিংবা শোনা কথাই যেন অবলম্বন হয়ে পড়েছে।
এদিকে এফডিসি ঘরানার বাইরে বছরের শীর্ষ বাজেটের চলচ্চিত্র হিসেবে শোনা গিয়েছিলো মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ডুব’-এর নাম। চলচ্চিত্রটিতে ১২ কোটি টাকা লগ্নির কথা প্রযোজক আব্দুল আজিজ গণমাধ্যমকে জানান। এদিকে আয়ের হিসেবে ২০১৭ সালের সর্বোচ্চ আয়ের ছবি বলা হয়েছে ‘ঢাকা অ্যাট্যাক’-কে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ঢাকা অ্যাট্যাক-এর সর্বমোঁ আয় ৯ কোটি ৫০ লাখ। নির্মাণশৈলীতে, অভিনয়গুণে আলোচনা-সমালোচনায় বছরজুড়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্রই আশা সঞ্চারী সুবাস ছড়িয়েছে সংস্কৃতি অঙ্গনে।
৫৫টি চলচ্চিত্রের মধ্যে চলচ্চিত্র ‘রীনা ব্রাউন’, ‘ভুবন মাঝি’, ‘হঠাৎ দেখা’, ‘সত্তা’, ‘পরবাসিনী’, ‘নবাব’, ‘রাজনীতি’, ‘বস টু’, ‘ভয়ংকর সুন্দর’, ‘রংবাজ’, ‘অংহকার’, ‘খাঁচা’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘ডুব’, ‘হালদা’, ‘অন্তর জ্বালা’, ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক এবং প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আখতার দীর্ঘদিন পর এ চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে নির্মাণে ফেরেন এ বছর।
তারই গল্প, চিত্রনাট্য এবং পরিচালনায় সরকারের অনুদানে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের এই ছবিটি মুক্তি পায় ১৩ জানুয়ারি। প্রেম, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, বিচ্ছেদ এবং আজকের বাংলাদেশের গল্পে চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা বরুণ চন্দের। কেবলমাত্র রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সেই মুক্তি পায় চলচ্চিত্রটি। অভিনয়, নির্মাণশৈলীতে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে ‘রীনা ব্রাউন’।
মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী বাংলাদেশের চিত্র ফুটে উঠেছে চলচ্চিত্রটিতে। দেশে বিদেশে বছরজুড়ে প্রশংসিত এ চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে দেশের বড়পর্দায় অভিষেক ঘটেছে ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের।
চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে সংগীত পরিচালনায় অভিষেক ঘটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দোহারের শিল্পী কালিকাপ্রসাদের। গেল বছর ৩ মার্চ মাত্র ১৩টি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয় চলচ্চিত্রটি।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি ‘হঠাৎ দেখা’। ভারতের অলোক মুখোপাধ্যায়ের চিত্রনাট্য অবলম্বনে এটি পরিচালনা করেছেন ভারতের রেশমী মিত্র এবং বাংলাদেশের সাহাদাত হোসেন।
রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা ‘হঠাৎ দেখা’ থেকে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে নির্মিত হয়েছে এটি। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের ইলিয়াস কাঞ্চন ও ভারতের দেবশ্রী রায়।
খুব বেশি হলে মুক্তি না পেলেও বিখ্যাত সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের এ প্রয়াস ছিল সাধুবাদ জানানোর মতোই। চলতিবছর ৩১ মার্চ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।
চিত্রনায়িকা পাওলি দামের সঙ্গে শাকিব খানের রসায়ন দেখতে দর্শকের কৌতুহল জাগিয়েছে হাসিবুর রেজা কল্লোল পরিচালিত সত্তা। চলচ্চিত্রটিতে জেমস ও মমতাজের গাওয়া দুটি গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। শাকিব খানের ভিন্ন লুক আর পাওলির অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে ‘সত্তা’ চলচ্চিত্রে। সোহানী হোসেনের ‘মা’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় চলতি বছর ৭ এপ্রিল।
দেশের প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিভিত্তিক ছবি ‘পরবাসিনী’ মুক্তি পায় চলতি বছর ৫ মে। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় ব্যয়বহুল চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন স্বপন আহমেদ। চলচ্চিত্রটিতে চিত্রনায়ক ইমনের সঙ্গে অভিনয় করেছেন বলিউড হার্টথ্রব উর্বসী রাউতেলা।
যৌথপ্রযোজনার নিয়ম ভঙ্গ করে নির্মিত হয়েছে ‘নবাব’ ও ‘বস টু’। এমন অভিযোগ এনে চলচ্চিত্র দু’টি মুক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় চলচ্চিত্রের ১৪টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার। তীব্র আন্দোলনের মুখে চলচ্চিত্র দুটি মুক্তি পায় ঈদে। ঈদে মুক্তি প্রাপ্ত চলচ্চিত্র দু’টিই রেকর্ড পরিমান আয় করে বলে জানায় চলচ্চিত্র দুটির দেশীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া।
‘নবাব’ চলচ্চিত্রে শাকিবের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতেও। যৌথ প্রযোজনার ‘নবাব’ ও ‘বস টু’ চলচ্চিত্র দুটির পাশাপাশি একই ঈদে মুক্তি পায় বুলবুল বিশ্বাসের ‘রাজনীতি’ চলচ্চিত্রটি। যৌথপ্রযোজনার চলচ্চিত্রের দাপটে প্রথম সপ্তাহে হল না পেলেও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই রাজনীতি’র দিকে আগ্রহী হয়ে ওঠে হলমালিকরা। শাকিব-অপু জুটি’র ছবিটি দর্শকমহলেও প্রশংসিত হয়।
মতি নন্দী’র ‘জলের ঘূর্ণি ও বকবক’ গল্প অবলম্বনে অনিমেষ আইচ পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ভয়ংকর সুন্দর’ মুক্তি পায় চলতি বছর ৪ অগাস্ট। বছরের বহুল আলোচিত চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে বড়পর্দায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিষেক ঘটে অভিনেত্রী ভাবনা’র। অবশ্য চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচকদের তোপের মুখে পড়তে হয় নির্মাতা অনিমেষ আইচকে।
১৯৪৭ এর দেশভাগের গল্পে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ‘খাঁচা’। আকরাম খানের পরিচালনায় চলতি বছর জয়া আহসান অভিনীত এই একটি চলচ্চিত্রই মুক্তি পায়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও জয়া আহসানের অনবদ্য অভিনয়ের জন্য চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে ২০১৭ কে মনে রাখবে ইতিহাস।
তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় গত বছরের ১ ডিসেম্বর মুক্তি পায় ‘হালদা’। তিশা-জাহিদ হাসান-মোশাররফ করিম অভিনীত চলচ্চিত্রটি মুক্তির পরপরই দর্শক প্রশংসায় ভাসতে থাকে। দেশের বাইরে তিনশতাধিক শো ছাড়াও চতুর্থ সপ্তাহেও বেশ কয়েকটি হলে চলেছে চলচ্চিত্রটি।
এ চলচ্চিত্রগুলো ছাড়াও বছর শেষে আলোচনায় এসেছে মালেক আফসারী পরিচালিত ‘অন্তর জ্বালা’ চলচ্চিত্রটিও। যদিও নকল গল্পের ছবির প্রতি নির্মাতার সাফাইসূচক বক্তব্য সমালোচনার ঝড় তোলে। চলচ্চিত্রটি জায়েদ খান ও পরীমনির অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও মুহম্মদ জাফর ইকবালের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পে নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ চলচ্চিত্রটিও অর্জন হিসেবেই প্রশংসা অর্জন করছে।
একঝলকে ২০১৭ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলো: ১. মাস্তান ও পুলিশ ২. কত স্বপ্ন কত আশা ৩. রীনা ব্রাউন ৪. তুখোড় ৫. যে গল্পে ভালোবাসা নেই ৬. ভালোবাসা এমনই হয় ৭. মায়াবিনী ৮. প্রেমী ও প্রেমী ৯. সত্যিকারের মানুষ ১০. শেষ চুম্বন ১১. মিসড কল ১২. ভুবন মাঝি ১৩. মেয়েটি এখন কোথায় যাবে ১৪. ভালোবাসা ১৬ আনা ১৫. ক্রাইম রোড ১৬. শূন্য ১৭. সুলতানা বিবিয়ানা ১৮. নুরু মিয়া ও তার বিউটি ড্রাইভার ১৯. হঠাৎ দেখা ২০. সত্তা ২১. ধ্যাততেরিকি ২২. তুই আমার ২৩. আপন মানুষ ২৪. পরবাসিনী ২৫. তুমি রবে নীরবে ২৬. মিলন সেতু ২৭. নবাব ২৮. রাজনীতি ২৯. ড্রেসিং টেবিল ৩০. বস টু ৩১. গ্রাস ৩২. মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা ৩৩. ভয়ংকর সুন্দর ৩৪. রাইয়ান ৩৫. মার ছক্কা ৩৬. এক পলকের দেখা ৩৭. রংবাজ ৩৮. অহংকার ৩৯. সোনাবন্ধু ৪০. টু বি কন্টিনিউড (টিভি প্রিমিয়ার) ৪১. শেষ কথা (টিভিতে প্রিমিয়ার) ৪২. খাঁচা ৪৩. ১৬ আনা প্রেম ৪৪. ঢাকা অ্যাাঁক ৪৫. দুলাভাই জিন্দাবাদ ৪৬. ডুব ৪৭. গেইম রিটার্নস্ ৪৮. কপালের লিখন ৪৯. খাস জমিন ৫০. হালদা ৫১. ছিটকিনি ৫২. চল পালাই ৫৩. অন্তর জ্বালা ৫৪. ইনোসেন্ট লাভ ৫৫.আঁখি ও তার বন্ধুরা ৫৬. গহীন বালুচর।
১ Comments
Leave a Reply
Cancel Reply
Leave a Reply
This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.
Thanks for finally talking about : আশা জাগানিয়া বাংলা চলচ্চিত্রের বাজার –
Cultural Yard ; Liked it!