নুর ইসলাম:
মঞ্চ নাটক হল দর্শকের সম্মুখে স্থাপিত মঞ্চে বা ক্ষুদ্র জমি খন্ডে অভিনিত নাটক। এটি শিল্প মাধ্যমের একটি শাখা। দর্শকের জন্য যে কোন পরিবেশনাকে মঞ্চ নাটক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একটি পরিবেশনাকে নাট্যকর্মী বা নাটকীয় বলা যেতে পারে যদি তা বাস্তবে মায়া সৃষ্টি করতে পারে। মঞ্চ নাটকের অস্তিত্ব মানব সভ্যতার সুচনা কাল থেকে। কারণ, সুচনা কাল থেকেই মঞ্চ নাটক অনেক রকম রুপ ধারন করেছে। প্রয়োগ করেছে অনেক রকম কথা, দেহভঙ্গি, গান, নাচ, দৃশ্য বা ঘটনা। মঞ্চ শব্দটির মানে হলো দর্শনের জন্য যে স্থান। ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মিশরে এক ধর্মীয় নাটক অনুষ্ঠিত হয়। নাটকটির কাহিনী নেয়া হয়েছিল বিখ্যাত মিশরীয় মিথলজি “মিথ অব ওসিরিস অ্যান্ড আইসিস” থেকে। আর এটাই ছিল নাট্য সর্ম্পকিত প্রথম ঘটনা যা নথিপত্রে পাওয়া যায়। সে সময় প্রতি বছর প্রতিটি জনপদে বিভিন্ন উৎসবে পরিবেশিত হতো গড ওসিরিসের এই গল্প। ফলস্বরুপ মঞ্চ নাটক আর ধর্মের মাঝে দীর্ঘ এক সর্ম্পকের সুচনা হয়।
১৩৮৯-১৪১০ ইউসুফ জুলেখার আবির্ভাব বাংলা নাট্যে এক নতুন বৈশিষ্ট্য আরোপ করে। মকতুল হোসেন, কাশেমের লড়াই, কারবালা, জংগনামা ইত্যাদি ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের করুন মৃত্যু এবং তাদের কাল্পনিক সৎ ভাই হানিফার প্রতিশোধ গ্রহণের কাহিনী অবল্বনে রচিত হয়েছে। এছাড়াও দেশজ বিষয়বস্তু সম্বলিত একাদিক মুসলিম পীরের বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনী নিয়ে রচিত হয়।
এ পুঁথিগুলি খোয়াজ খিজির, মাদার, গাজী, সত্য এবং মানিক পীরের প্রতি গভির শ্রদ্ধা-ভক্তি ও তাদের অলৌকিক ক্ষমতা প্রচার করে এবং পীরদের ভক্ত অনুরাগীদের মধ্যে পরম বিশ্বাস জাগিয়ে অবিশ্বাসীদের দুঃসহ পরিনাম সর্ম্পকে সাবধান করে দেয়। বিশেষতঃ ইসলামের শিয়া সম্প্রদায়ের নাটক বা পরিবেশনা সমুহ আবর্তিত হয়েছে খলিফা (নেতা বা রাষ্ট্র প্রধান) আলী’র পুত্র হাসান ইবনে আলী এবং হুসাইন ইবনে আলীকে ঘিরে।
সমস্ত শিল্পকলার একটা ইতিহাস আছে। সভ্যতার আদি অংশের সংগে যে সব শিল্পকলার ইতিহাস জরিত, তার মধ্যে নাটক একটি। ইতিহাস সাক্ষি দেয় গ্রীস, ভারতবর্ষ ও রোমের নাট্য-ঐতিহ্য সবচেয়ে প্রাচীন। গ্রীস ও ভারতবর্ষের নাট্য মঞ্চের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায়, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ধর্মের প্রয়োজনে নাটকের সৃষ্টি। ভারতীয় নাট্য মঞ্চ ভারতবর্ষ বহু প্রাচীন সভ্যতার লীলাক্ষেত্র। ভারতীয় নাট্য মঞ্চ আদি ইতিহাস আলোচনা করলে জানা যায়, শিব বা মহাদেব-ই হলেন সে দেশের নাট্যকলার জন্মদাতা। বিশ্বের স্রষ্টা ব্রম্মাা নাট্যকলা শেখেন মহাদেবের কাছ থেকে। তারপর তিনি গন্ধববেদ বা নাট্যবেদ রচনা করেন। এটাই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন নাট্যশাস্ত্র। দেবতারা যখন অসুরদের সংগে যুদ্ধে জয়লাভ করে, তখন ব্রম্ব্রা দেবরাজ ইন্দ্রের সন্ত্রষ্টি বিধানের জন্য প্রথম ভারতীয় হিন্দু নাটক “সমুদ্র মন্থর” রচনা করেন। রোম সম্রাজ্যের অধীনে মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডে পশ্চিমা মঞ্চ নাটক বিকাশ লাভ করে।
এরপর স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স এবং রাশিয়ায় পর্যায়ক্রমেক ভাবে অনেক রকম রুপ ধারন করে ষোল. সতের এবং আঠারো শতকে মঞ্চ নাটক সমৃদ্ধি লাভ করে। এই শতকগুলিতে মঞ্চ নাটকের বিকাশ প্রক্রিয়ার একটি সাধারন প্রবণতা ছিল। রেনেসাঁ এবং গ্রিকদের কাব্যধর্মী নাটক থেকে সরে গিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি বাস্তবধর্মী শৈলী বিশেষ করে শিল্প-বিপ্লবকে অনুসরণ করা। আমেরিকার উপনিবেশায়নের সাথে সাথে একটি উত্তর আমেরিকান মঞ্চ নাটক ও প্রকাশিত হয়।