নিজস্ব প্রতিবেদক:
পঞ্চাশ এবং ষাট দশকের দিকে পশ্চিমা দেশগুলোতে পপ সঙ্গীত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। পপুলার মিউজিক থেকেই এর নামকরণ করা হয় পপ মিউজিক। একে রক মিউজিকও বলা হয়। পপ গানকে ফোক এবং ফাইন আর্ট গানের সংমিশ্রণ বলেও আখ্যা দেয়া হয়। আরবান, ল্যাটিন, রক আর কান্ট্রি মিউজিকের সব ভালো উপাদানগুলো নিয়ে পপ মিউজিক গঠিত হয়। পপ মিউজিকের মধ্যেও ধরণ থাকে যেমন পপ ফোক, পপ রক, পপ ফাঙ্ক, পপ র্যাপ ইত্যাদি।
১৯২৬ সনে প্রথম কোন পপ গান রেকর্ড করা হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুযায়ী, ১৯৫০ এর শেষের দিকে এই ধরণের গান ইউরোপ ও আমেরিকায় জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। ১৯৪০ এবং ১৯৫০-এর দশকের রিদম এ্যান্ড ব্লুজ,রক অ্যান্ড রোল, কান্ট্রি সঙ্গীত-এর শিকড় জড়িয়ে আছে এবং উৎসারিত হয়েছে ফোক সঙ্গীত, ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীত এবং জ্যাজ সঙ্গীত থেকে। রক সঙ্গীতের শব্দ তৈরি হচ্ছে ইলেকট্রিক গিটার, ইলেকট্রিক বেজ গিটারের ও ড্রামসের রিদম অংশের ব্যাক বিটের মাধ্যমে এবং কি-বোর্ড বাদ্যযন্ত্র যেমন হ্যামন্ড অরগান, পিয়ানো বা ১৯৭০ -এর দশক থেকে ব্যবহৃত সিন্থেসাইজার। গিটার ও কি-বোর্ডের সাথে সাথে সাক্সোফোন ও ব্লজ স্টাইলের হারমোনিকাও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর সবচেয়ে শুদ্ধ রূপে থাকে তিনটি কর্ড, একটি শক্ত, গভীর ব্যাক বিট ও স্পর্শকরার মতো ম্যালোডি।
১৯৭০-এর দশকে রক সঙ্গীত অনুপ্রাণিত হয়েছে সোল, ফাঙ্ক এবং ল্যাটিন সঙ্গীত থেকে। ১৯৭০-এর দশকে রক সঙ্গীতের অনেকগুলো উপধারা যেমন গ্লাম রক, সফট রক, হেভি মেটাল,হার্ডরক, প্রোগ্রেসিভ রক এবং পাঙ্ক রক সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে রক সঙ্গীতের উপধারাগুলো হলো নিউ ওয়েভ, হার্ডকোর পাঙ্ক এবং অল্টারনেটিভ রক। ১৯৯০-এর দশকে রক সঙ্গীতের উদ্ভব হওয়া উপধারাগুলো হলো গ্রুঞ্জ, বিটপপ , ইন্ডি রক এবং ন্যু মেটাল। একটা সঙ্গীত দল যারা রক সঙ্গীত করে তাদের রক ব্যান্ড বা রক গ্রুপ বলে। একটা রক গ্রুপে সাধারণত একজন লিড গিটারিস্ট, একজন ড্রামার, একজন মূল ভোকাল এবং একজন বেজ গিটারিস্ট থাকে যা একটি চার মাত্রা তৈরি করে। মাঝে মাঝে একজনকে বাদ দিয়ে ভোকাল নিজেই কোন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে একটা তিন মাত্রার ব্যান্ড তৈরি করতে পারে বা একজন বা দু’জন রিদম গিটারিস্টকে দলে নিয়ে এবং কি-বোডিস্টকে সাথে নিয়ে সদস্য সংখ্যা বাড়াতেও পারে। কিছু ধারার রক ব্যান্ড যারা একদম মূল রক অ্যান্ড রোলের অনুসারী তারা স্যাক্সোফোনও বাজাতে পারে।
সচরাচর দেখা যায় না এমন বাদ্যযন্ত্রও বাজাতে পারে তারা যেমন ভায়োলিন বা সেলো অথবা ট্রাম্পেট বা ট্রম্বোন্স। বর্তমানে অবশ্য রক শব্দটাকে ব্যবহার করা হয় একটা কম্বলের মতো ব্যবহার হিসেবে যা আচ্ছাদিত করে পপ সঙ্গীত, রেগে এবং মাঝে মাঝে এমনকি হিপহপকেও যা তার ইতিহাসের সাথে মানায় না।
১৯৫১ সালে একজন ডিস্ক জকি অ্যালেন ফ্রেড রিদম এ্যান্ড ব্লুজ সঙ্গীত করা শুরু করেন বর্ণ নির্বিশেষে এবং তিনি প্রথম রক অ্যান্ড রোল শব্দটা ব্যবহার করেন। এটা নিয়ে বিতর্ক আছে যে কোনটাকে আমরা প্রথম রক অ্যান্ড রোল রোল গানের রেকর্ড বলব। জ্যাকি ব্রেন্সটনের রকেট৮৮ এবং তার ডেল্টা ক্যাট যা ১৯৫১ সালে সান রেকর্ডসের স্যাম ফিলিপ রেকর্ড করেছিলেন।
১৯৫৫ সালে বিল হ্যালির রক অ্যরাউন্ড দ্যা ক্লক গানটি প্রথম বিলবোর্ড ম্যাগাজিনে তালিকায় জায়গা পেয়েছিল এবং তখন সারা বিশ্বের জনপ্রিয় ধারায় প্রবেশে দরজাটা যেন উন্মুক্ত হয়েছিল। ২০০৪ সালে রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন অবশ্য বলে যে ১৯৫৪ সালে সান রেকর্ডসে এলভিস প্রেসলির প্রথম গাওয়া একক দ্যাটস অল রাইট (মামা)ই রক অ্যান্ড রোলের প্রথম রেকর্ড। কিন্তু প্রায় সে সময়ে বিগ জো টার্নারের শেক, র্যাটল অ্যান্ড রোল, পরে যা হ্যালি কাভার করেছিলেন যা ছিল ইতোমধ্যে বিলবোর্ডের তালিকাতে।
প্রাথমিক রক অ্যান্ড রোলের অন্যান্য শিল্পীরাও এসব গান গাইত যেমন চাক বেরি, বো ডিড্ডলেই, ফ্যাটস ডোমিনো, লিটল রিচার্ড, জেরি লি লুইস এবং জেনে ভিন্সেন্ট। শীঘ্রই রক অ্যান্ড রোল আমেরিকার রেকর্ড বিক্রির মূল শক্তিতে পরিণত হয় এবং এডি ফিশার, পেরি কোমো এবং প্যাটি পেইজ যারা গত দশকের জনপ্রিয় সঙ্গীতে দাপট দেখিয়েছেন তাদের পপ তালিকায় চলে আসা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে আসে।
দ্যা ক্রোস, দ্যা পেঙ্গুইন্স, দ্যা টারবান্স তারা সবাই হিট গান উপহার দেন এবং গানের দল যেমন দ্যা প্লেটারস তাদের ১৯৫৫ সালের গান দ্যা গ্রেট প্রিটেন্ডার এবং দ্যা কোস্টারসের অনেক জনপ্রিয় গান যেমন ইয়্যাক্টি ইয়াক (১৯৫৮) ওই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় রক অ্যান্ড রোল সঙ্গীতের অংশে পরিণত হয়। সারা দেশে ১৯৫৫ সালে লনি ডোনেগানের সফল গান রক আইল্যান্ড লাইন স্কিফল সঙ্গীত দলের ধারার উন্নতিতে এবং বড় প্রভাব রাখতে সাহায্য করে যেমন জন লেননের দ্যা কোয়ারিম্যান।
বাংলাদেশে পপ গান জনপ্রিয়তা পায় আশির দশকের শেষ দিকে। পপ গুরু আযম খান এবং ফেরদৌস ওয়াহিদ পপ গানকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এরপর এ ধারায় জনপ্রিযতা পায় বাংলাদেশের মেহরীণ, পরবর্তী সময়ে মিলা, হাবিব ওয়াহিদ, তিশমা, কণা, তাহসান প্রমুখ। বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে এ ধারার সঙ্গীত জনপ্রিয়। এটি সবশ্রেণির মানুষের রুচির সঙ্গে মিলে যায় এ সঙ্গীত।