রেডিও হচ্ছে একটি তারবিহীন বেতার যন্ত্র। যে যন্ত্রের মাধ্যমে ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে আমরা দূরের কোন স্টেশন থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও নাচ-গান আবৃত্তি শুনতে পাই। এই যন্ত্রের ইতিহাস অনেক পুরনো। ১৮৯৮ সালে ২৪ বছর বয়সে ইতালিয়ান তরুণ বিজ্ঞানী গুইলিইমো মার্কোনি বিশ্বে প্রথম রেডিও আবিষ্কার এবং তার বাণিজ্যিক সার্ভিস চালু করেন। ১৯২০ সালে আমেরিকাতে সর্বপ্রথম এর সম্প্রচার হয়। তবে রেডিও আবিস্কারের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রথম শুরু করেছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু। ১৮৯৪ সালে জগদীশচন্দ্র কলকাতায় প্রথম বিনা তারে বার্তা প্রেরণ এবং তা গ্রহণ করার কৌশল দেখিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এরপর কোন পরীক্ষা চালানোয় ইতিহাসে চাপা পড়ে যায় জগদীশের নাম।
যাই হোক, গত শতাব্দীর শুরু থেকে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় রেডিও এখন এতই বিস্তৃত যে, আগে শুধু কোন একটা এলাকা বা অঞ্চল অথবা দেশের গন্ডিতে শোনা গেলেও এখন একটি স্টেশন থেকে পৃথিবীব্যপী শোনা যাচ্ছে। এখন এটি শুধু একটি যন্ত্র না। যে কোন ছোটখাটো ডিভাইস থেকেই শোনা যায়। আর রেডিওর এই বিকাশকে চারভাগে ভাগ করা যায়। এ এম রেডিও, এফএম রেডিও, কমিউনিটি রেডিও, অনলাইন রেডিও।
গত শতাব্দীতে শহর, বন্দর ও মফস্বল শহরগুলোতে এই রেডিও শোনা যেত। একসময় বাংলাদেশ বেতার এই প্রক্রিয়ায় সম্প্রচার হতো। এই রেডিওর রেঞ্জ অনেক বেশি ছিলো। এর ট্রান্সমিশন ছিলো এরিয়া ছিল বিশাল। একটি টাওয়ার দিয়ে অনেক দূর কাভার করা যেত। তবে সমস্যা হচ্ছে, এই প্রযুক্তিতে আরজে বা উপস্থাপকরা খুব বেশী কথা বলতে পারেন না। যেমন তাদের বলতে হতো এরকমভাবে। বাণিজ্যিক ………..কার্যক্রম………..বাংলাদেশ………..বেতার………ঢাকা। এর কারণ প্রযুক্তির কারণে দ্রুত বললে কথা হারিয়ে যেতে পারে। যদি দ্রুত বলা হয় আমি তোমায় ভালবাসি। তবে শুধু শোনা যাবে আমি ভালবাসি। তোমাকে আর শোনা যাবে না।
এরপর প্রযুক্তির উতকর্ষতায় এফ এম রেডিওর আবির্ভাব। এই প্রযুক্তি গত শতাব্দীর শেষ দিকে জনপ্রিয় হয়। বর্তমানেও এটি বহুল জনপ্রিয়। এটি রেডিও যন্ত্র ছাড়াও যে কোন ডিভাইস দিয়ে শোনা যায়। এই প্রযুক্তিতে যত দ্রুত বলাই হোক তা স্পষ্ট শোনা যাবে। আর এ কারণে তরুণ-তরুণীদের কাছে এই প্রযুক্তি অনেক জনপ্রিয়। তবে এর একটি দুর্বলতা হচ্ছে এটির ট্রান্সমিশন অনেক কম। মাত্র ১০০ কিলোমিটার কাভার করে এর ফ্রিকোয়েন্সি। তবে এর বাইরে শুনতে গেলে প্রয়োজন আরও বেশি টাওয়ার, যা স্টেশনের জন্য ব্যায়বহুল। কমিউনিটি রেডিও মুলত একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা অঞ্চল কাভার করে। তবে এতে যত দ্রুত কথাই বলা হয় কোন সমস্যা নেই। আমাদের দেশে কমিউনিটি রেডিও মূলত প্রান্তিক মানুষের বিনোদন যোগানের জন্য কাজ করে।
তবে বর্তমান ডিজিটাল যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিষ্কার অনলাইন রেডিও। এই রেডিওতে কোন দেশ বা অঞ্চলের সীমাবদ্ধতা নেই। এটি পৃথিবীর যে প্রান্তে আপনি থাকুন যে কোন প্রান্তের স্টেশনের অনুষ্ঠান শোনা যাবে। এই প্রযুক্তিতে এখন রেডিওতে শুধু শোনা নয় দেখাও যায়। অনলাইন রেডিওতে একটি ওয়েবের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয় সব। আর ওই যে দেখা যায় তা হচ্ছে স্টেশনের অনুষ্ঠান চলাকালে ফেইসবুকে বা ইউটিউবে তা ভিডিও রেকর্ড করে প্রচার করা যাচ্ছে। অর্থাৎ একজন শ্রোতা যখন সেই অনলাইন রেডিও শুনছেন তখন তিনি তা তার ফেইসবুক বা ইউটিউব বা সেই ওয়েব ভার্সনে তা দেখতেও পাচ্ছেন। অবস্থা এমন যে একদিন প্রাচীনকালের এএম রেডিওর তো এফএম রেডিও হারিয়ে গিয়ে ওয়েবভিত্তিক অনলাইন রেডিও জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকবে। এখনই ওয়েবভিত্তিক অনলাইন রেডিও জনপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল যুগে কেন পিছিয়ে থাকবে রেডিও?